মানবতার সেবায় নারীর ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে হবে
কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
সারাদেশের ন্যায় কলমাকান্দায় গতকাল পালিত হলো বিশ্ব মানবতা দিবস ২০১৯। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘মানবতার সেবায় নারীর ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে হবে’। কলমাকান্দায় দিবসটি পালন করা হয়েছে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের সাথে। যাদের অধিকার নিজ সংসারেই আদায় হয় না। শহরের নারীদের নানাবিধ অধিকার কিংবা স্বীকৃতি আদায়ের অনেক ক্ষেত্র আছে, আছে বিভিন্ন মাধ্যম। এছাড়াও শহরের নারীদের সংগঠনও আছে যার মাধ্যমে তারা নিজেদের মনের কথাগুলো বা অধিকার আদায়ের কথা বলতে পারে।
আলোচনায় উঠে আসে নারীর মানবিকতার কথা, উঠে আসে নারীর নানা অবদানের কথা। যখন পরিবারে কোন সদস্য অসুস্থ হয়ে পরে তখন সেটির দেখভাল করার দায়িত্ব পড়ে যায় সরাসরি নারীর উপর। যে নারীরা সেবার মাধ্যমে আমরা পুরুষরা সুস্থ হচ্ছি অথচ আমরা পুরুষরাই সেটি আবার অস্বীকার করছি। এমন করে সংসার পেরিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও নারীর মানবিকতা প্রতীয়মান। শুধু স্বীকার করে নেওয়াটাই মূখ্য বিষয়। পুুরুষ তান্ত্রিক সমাজে নারীর মানবিকতাগুলো আসুন সবাই মিলে স্বীকার করি। তবেই নারীর মানবতা স্বীকৃত হবে।
আলোচনায় বক্তারা জানান, গ্রামের একজন সাধারণ নারী সে কোনদিন তার মনের কথা বা অধিকারের বলতে কোন মাধ্যম খুঁজে পান না। তাদের মনের মধ্যে অনেক অব্যক্ত কথা আছে কিন্তু তা প্রকাশের কোন ক্ষেত্র তারা খুঁজে পায় না। স্বামী সংসার সামাল দিত গিয়ে হয়তোবা তাঁরা ভুলেই যায় তাদের অধিকারের কথা। হয়তো বা তাঁরা মনেই করেন না যে, তাঁদের অধিকার আদায়ের সুযোগ আছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা; ঘনিয়ে আসে রাত। মাঝের এই যে দীর্ঘ সময় তারা অতিবাহিত করছেন নানান গৃহস্থালির কাজে। তাঁরা সে সময়ে কি পরিমাণ সংসারের কাজে সময় ব্যয় করছেন সেটা সে নিজেও জানেন না। কত ধরণের কাজ করছেন বা কত ধরণের মানবতার কাজ করছেন সেটির হিসেব তাঁরা রাখে না। বা হিসেব রাখার প্রয়োজনীয়তাও মনে করেনি আদৌ। কিন্তু একজন পুরুষ সারাদিন যে সময় ব্যয় করছেন তার হিসাব তিনি ঠিকই রাখছেন। দিন শেষে শুধু পুরুষেরটাই হিসেব হচ্ছে; নারীরটা হচ্ছে না। অনেক সময় নারীর অবদানটি পুরুষরা কৌশলে চালিয়ে দিচ্ছেন। তৃণমূল পর্যায়ের নারীরা তাদের অধিকারের বিষয়ে সোচ্চার হোক, তারা জানুক আর্ত মানবতায় তাদের কি অবদান আছে তবেই না তারা গর্জে উঠবে অধিকার আদায়ে, তবেই না পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীর মানবতাকে মেনে নিবে, তবেই স্বীকৃত হবে নারীর মানবতার সেবাকে।
উল্লেখ্য যে, ২০০৩ সালে ইরাকের বাগদাদ শহরে বোমা হামলায় ২২ জন জাতিসংঘের কর্মকর্তা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে সেরগিও ভিয়েরা দমেলো ছিলেন প্রধান। যিনি তার মৃত্যুর পূর্বে প্রায় ৩০টি বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের মানষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন নিঃস্বার্থভাবে। এই ২২ জন মানবতাকর্মীর মৃত্যুকে স্মরণে রাখার জন্য ২০০৮ সালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৯ আগস্ট বিশ্ব মানবতা দিবস পালন করার। তারপর ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম ১৯ আগস্টকে বিশ্ব মানবতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।