শুধু শাক দিয়েই এক থালা ভাত খাওয়া যেতো
সাতক্ষীরা, শ্যামনগর থেকে চম্পা মল্লিক: “লবণাক্ততায় আর আগের মত শাক পাওয়া যাচ্ছেনা বলে হতাশার সুরে বললেন ইশ্বরীপুর ইউনিয়নের কেওড়াতলী গ্রামের আলেয়া বেগম (৬০)। তিনি ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের কেওড়াতলী গ্রামে বারসিকের আয়োজনে লবণাক্ততা ও অচাষকৃত উদ্ভিদের সংকট বিষয়ক আলোচনা সভায় তিনি হতাশার সুরে কথাগুলো বলছিলেন । তিনি আরও বলেন, এই হারিয়ে যাওয়া শাকগুলো এতই স্বাদের ছিলো যে, শুধু শাক দিয়েই এক থালা ভাত খাওয়া যেতো।
সভাতে অংশগ্রহণকারী নারীরা লবণাক্ততা ও অচাষকৃত উদ্ভিদের সংকট বিষয়ে বলেন, লবণের কারণে আমাদের এলাকা থেকে অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য প্রায় হারিয়েই গেছে। কিন্তু আমাদের এলাকাটি বৈচিত্র্যে ভরা ছিল। একসময় এলাকায় অনেক ধরনের অচাষকৃত উদ্ভিদ পাওয়া যেতো যেমন: বউনুটি, কাঁটানুটি, সেঞ্চী, খুদকেওড়ী, খেঁতা,আমরুল, তেলাকচু, কলমী, মাঠকলমী, পুকুর কলমী, কলা, মোচা, থোঁড়, কচুশাক, ছোলা কচু। এছাড়া ঔষধী হিসেবে পাওয়া যেতো আগাছা, কুঁচ, হাড়ভাঙ্গা ঘাছ, বাকসা, মান্দার গাছ, বাবলা পাতা প্রভৃতি। কিন্তু বর্তমানে এগুলো খুবই কম দেখা যায়। তবে এখন বেশি দেখা যাচ্ছে হেলাঞ্চ, আদাবরন ও থানকুনী শাকটা।
আলোচনা সভায় উপস্থিত আলেয়া বেগম (৬০) বলেন, কতই না অচাষকৃত উদ্ভিদ ছিল তখন। বিলে, রাস্তার পাশে, পুকুরের পাড়ে সবজায়গায় দেখা যেতো এগুলো। প্রায় প্রতিদিনই আমরা নারীরা বিভিন্ন গল্প কথার মধ্যে দিয়ে এসব অচাষকৃত শাক উঠিয়ে আনতাম শাড়ীর আাঁচলে করে। কখনো পুকুর পাড় থেকে কখনো রাস্তার পাশ থেকে, আবার কখনো কখনো বিলে গরু, ছাগল দিতে গিয়েও। আর এগুলো খেতে এতই স্বাদ ছিল যে শুধু শাক দিয়েই এক থাল ভাত খাওয়া যেতো।
অংশগ্রহণকারীরা আরো বলেন, এলাকায় প্রচুর ঔষধী হিসেবে কিছু কিছু গাছ ও লতাগুল্মের ব্যবহার ও আমরা জানতাম। তাই বিভিন্ন রোগে বিভিন্ন ভাবে সেগুলোর ব্যবহার ও আমরা করতাম। যেমন- শরীর খুব গরম হলে হেলাঞ্চ শাক ভাতে দিয়ে অথবা তরকারী রান্না করে খেলে ভাল হতো। আবার আমাশয় হলে আদাবরন বেটে খেতাম, হাম/ পক্স হলে হেলাঞ্চ ও আদাবরনের তরকারী ও ভর্তা, কঠিন আমাশয় হলে বাবলা পাতা, পেয়ারা পাতা, জাম পাতা, মান্দার পাতা, সজিনা পাতা, ডালিম পাতা ও গল গটের ডোগা একসাথে ভেজে ভাত দিয়ে খেলে আমাশয় থাকে না এবং খুব কাশিতে বাকসার রসের সাথে আখো চিনি খেতাম ও বুকে বকফুলের পাতা বেটে মালিশ করতাম। এছাড়া গরু ও ছাগলের আমাশয় হলে সবেদা বেটে রস খেতে দিতাম।
আগে অনেক সমস্যার সমাধান হতো এসব অচাষকৃত উদ্ভিদের মাধ্যমে। কখনো সবজি আবার কখনো ঔষধী হিসেবে। কিন্তু দিন পাল্টে গেছে। আজ লবণাক্ততার কারণে এই বৈচিত্র্য প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। লবণে মাটি যেন ক্ষার হয়ে গেছে। লবণাক্ততায় সব ধ্বংস হতে চলেছে। সম্পতি অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় কেওড়াতলী গ্রামের ২০ জন নারী অংশগ্রহণ করেন।