একজন পরিশ্রমী নারী ফিরোজা বেগম
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামে বসবাস করেন ফিরোজা বেগম। স্বামী আবুল খায়ের একজন দিনমজুরী। তিনি প্যারালাইসিস রোগে আক্তান্ত। কোন ভারী কাজ করতে পারেন না। বাড়ির আশপাশে মাঝে মধ্যে কাজ করেন। অন্য সময় বাড়িতে থেকে সময় কাটান। এসব কিছৃ মাথায় রেখে এবং সংসারের কথা বিবেচনা করে ফিরোজা বেগম নানান ধরনের কাজের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। স্বামীর জায়গা জমি বলতে মাত্র ১৭ শতক জায়গা। এ জায়গাটুকুর তিনি সর্বোচ্চ ব্যবহারে করেন। কোন খালি জায়গা ফেলে রাখেন না। সব জায়গায় কোন না কোন ফসল লাগান। ভিটায় তিনি সারাবছর বিভিন্ন ধরনরে সবজি চাষাবাদ করেন। এ সবজি চাষের পাশাপাশি হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, ও কবুতর পালন করেন।
ফিরোজা বেগমের সংসারে ৪ জন সদস্য। সংসারের অবস্থা পরিবর্তন করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজ গ্রামে বিভিন্ন পরিবারের ক্ষেত খামারে যোন-মজুরি দেন এবং নিজের ভিটা ও জমিতে কৃষি কাজ করেন। সাথে ২ বিঘার মতো জমিতে হারি নিয়ে আমন ও বোরা মৌসুমের ধান চাষ করেন। ধান চাষের জমিতে কোন যোন নেন না। নিজে ও সন্তানদের নিয়ে কাজ করেন। পরিবারের জন্য কিছু যে করতে পেরেছেন তার জন্য তিনি গর্ববোধ করেন। বিয়ের পর স্বামীর সংসারে এসে কঠোর পরিশ্রমী হয়ে উঠেছেন।
ফিরোজা বেগম বলেন, এখন শক্তি সামর্থ্য সব কিছু আছে। সেজন্য কাজ করে যাই। কিন্তু এ পরিশ্রম কোন দিন বৃথা যাবেনা। একদিন সুদিন আসবে সেই অপেক্ষায় আছি। ছেলেটাকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করতে চাই। আমি এখন বাইরের কাজ যেমন করি তেমনি বাড়িতেও কাজ করি। বসতভিটায় বারো মাস নানান ধরনরে ফসল চাষবাদ করি। বাড়িতে আম, জাম, কাঁঠাল, নারকেল, পেয়ারা, ছবেদা, জামরুল, লেবু, নইল, বেদানা, পেঁপে, ও ডালিম গাছ লাগিয়েছি। এছাড়াও ৪ টি গরু, ৮ টি ছাগল, ৩১টি মুরগি, পাতি হাঁস-৬টি, রাজ হাঁস-৪টি, মেরি হাঁস ৫টি ও কবুতর আছে ১৮টি। পুকুরে আছে নানান ধরনের স্থানীয় মাছ। এছাড়াও বাড়তি আয়ের জন্য বাড়িতে একটি পোলট্রী খামার করেছি। তিনি আরও বলেন, ‘আমি সেলাইয়ের কাজ পারি। বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ ও নকশা তৈরি করি। সব কিছু মিলিয়ে বছরে ভালোই আয় হয়। কিন্তু আয়ের অধিকাংশই স্বামীর চিকিৎসা কাজে খরচ হয়ে যায়।
তিনি জানান, তার কাজের আগ্রহী উদ্দীপনা দেখে বারসিক থেকে গত বছর বসতভিটা উচুঁকরণে এবং পুকুর সংস্কারে সহায়তা করে। যে সহায়তা তার কাজগুলোতে গতিশীল করতে খুবই ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও তার বাড়িটি পুষ্টিভিত্তিক পুষ্টি ব্যাংক বা শত বাড়ি তৈরি জন্য ধারাবাহিক যোগাযোগ ও সহায়তা চলমান রেখেছে বারসিক। করোনাকালীন সময়ে তার গ্রামে প্রায় ৩৫ জনকে সবজি ও ২০ জনকে বীজ সহায়তা করেছেন বলে তিনি জানান। সাথে পোলট্রি মুরগির খামার থাকায় প্রায় ৫ জনকে মুরগি সহায়তা করেছেন। তার মতো করে গ্রামের কয়েকজন এভাবে বিভিন্ন সবজি চাষ, হাঁস মুরগি পালন ও মাছ চাষ শুরু করেছেন।
এখনোও গ্রাম বাংলার অসংখ্য নারী নির্জনে নিভৃতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরিবারের অর্থনীতিকে সচল করতে ভূমিকা রাখছেন। শত কষ্টের মাঝে তাদের নেই কোন অভিযোগ। শুধুমাত্র সংসার পরিজনদের নিয়ে সুস্থ সুন্দর একটা জীবনযাপনের জন্য তাদের এতো পরিশ্রম। ফিরোজা বেগমের মতো যে সব নারীরা পরিবার, সমাজ ও দেশের উন্নয়নে জন্য যে ধরনের ভূমিকা রেখে চলেছেন তা খুবই প্রশংসনীয়। তাদেরক কাজকে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওযা উচিৎ।