সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে সবুজের সন্ধানে কিশোরী সংগঠন
নেত্রকোনা থেকে খাদিজা আক্তার লিটা
কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করছে নেত্রকোনা জেলা সদরের রেল কলোনী কিছু উদ্যোগী কিশোরীদের নিয়ে গড়ে উঠা সবুজের সন্ধানে কিশোরী সংগঠন। চলতি মাসে লকডাউনের কারণে বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ থাকলেও কলোনী ঘনবসতিপূর্ণ ঘরগুলোর মধ্যে রূরত্ব বজায় রেখে চলার প্রবণতা খুব কম।
যদিও করোনা মোকাবেলায় শারীরিক দূরত্ব বজায়ে রাখার বিষয়টির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে যেখানে শিক্ষিত মানুষকে বুঝানো যাচ্ছেনা সেখানে সীমিত জায়গায় প্রায় তিনশত পরিবার নিয়ে যারা দিন আনে দিন খায়, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত অধিকাংশ পরিবার, সেই কলোনীর মানুষগুলোকে দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে সচেতন করা একটি কঠিন কাজ।
সবুজের সন্ধানে কিশোরী সংগঠনের কিশোরীরা যে বিষয়টির উপর প্রথম থেকে কাজ শুরু করে সেটি হলো কলোনীর বাইরে যারা কাজ করতে যান তাদের মাস্ক ব্যবহার ও হাত ধোয়া নিশ্চিত করা। সংগঠনের সদস্যরা এসব মানুষকে সচেতন করে মাস্ক ব্যবহার ও বাইরে থেকে ফেরার পর তারা যেন হাত ধুয়ে ঘরে প্রবেশ করে সেটা নিশ্চিত করতে পেরেছে।
চলতি বছর বর্ষায় দেশে বিভিন্ন জায়গায় ডেঙ্গু মশার প্রকোপ দেখা দিলে সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সদস্যরা চলতি মাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কলোনীর প্রতিটি বাড়িতে পৌছে দিয়েছে সচেতনমূলক বার্তা। তারা প্রত্যেকে জানিয়েছে কিভাবে ডাবের খোসা, পুরানো টায়ার, প্লাস্টিকের পাত্রে জমে থাকা অল্প পরিস্কার পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে। তাদের কথামতো কলোনির প্রতিটি পরিবারই নিজেরাই নিজেদের বাড়ির চারপাশ পরিস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। এভাবে কিশোরীরা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে এলাকার মানুষকে ডেঙ্গুসহ করোনা সম্পর্কে সচেতন করে তোলার।
উল্লেখ্য যে, সবুজের সন্ধানে কিশোরী সংগঠনটি করোনাকালীন সময়ে নিজেদের মতো এলাকার কাজ করে যাচ্ছে। করোনার শুরুতে সংগঠনের উদ্যোগে প্রায় পাঁচ শতাধিক মাস্ক বিতরণ করেছে অন্যের মাঝে। বারসিক এ সময় তাদের সহযোগিতা করেছে। এ বছর লকডাউনের শুরুতে নিজেদের উদ্যোগে এলাকার দরিদ্র প্রবীণ বিধবা, দলিতদের স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি দলিতদের তালিকা তৈরি কওে সেই তালিকাটি এলাকার কমিশনার কাছে পৌছে দিয়েছে যাতে দলিতরা সহায়তা পান। অন্যদিকে রমজান মাসে এলাকার দরিদ্র মুসলিম পরিবারগুলোর জন্য নিজেদের মাটির ব্যাংকে জমানো টাকায় উপকরণ কিনে বাড়িতে ইফতার তৈরী করে রেলষ্টেশানে প্রায় দেড় শতাধিক দরিদ্র মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে। এছাড়া সংগঠনটির সদস্যরা নিজেদের এক চালা ঘরের সবজি চাষ শুরু করেছে। এক চিলতে জায়গায় কিভাবে এক থেকে দুটি গাছ লাগিয়ে পরিবারের চাহিদা পূরণ করা যায় সে বিষয়ে কলোনীতে বসবাসরত নারীদের আগ্রহ সৃষ্টিতে কাজ করছেন তারা।
এলাকার শিক্ষার মশালটি জ্বালিয়ে রাখার কঠিন দায়িত্ব পালন করছে সংগঠনটি। সংগঠনের সভা প্রধান স্বর্ণা রায় এ কলোনীতে বসবাসরত বর্তমানে একমাত্র মেয়ে যে ডিগ্রীতে পড়াশোনা করছেন। সংগঠনের অধিকাংশ সদস্য কলেজে পড়ছেন। নিজেদের পারিবারিক আর্থিক সংকট থাকলেও পিছিয়ে নেই এ কিশোরীরা। পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি কিশোরী এবং সামাজিক অসঙ্গতি দূরীকরণেও সরব তারা।