আর্কিটেক্ট হতে অনলাইনে খাবার বিক্রি করছেন রিনা আক্তার

মোঃ শামীউল আলীম শাওন, রাজশাহী থেকে

‘আর্কিটেক্ট হওয়ার প্রবল ইচ্ছা। ভর্তিও হয়েছি আর্কিটেকচার ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন টেকনোলজিতে। তবে পরিবার থেকে পড়াশোনার খরচ বহন করেন না। পাই না কারো সহযোগিতাও। কারো সহায়তার আশায় যেন থাকতে না হয়, তাই হতে চাই স্বাবলম্বী। নিজেই চালাবো নিজের পড়াশোনার খরচ। তাই এফ-কমার্সের মাধ্যমে খাবার বিক্রি শুরু করছি অনলাইনে। আর সেই অল্প আয়ে চলছে নিজের পড়াশোনা।’

এমনটাই বলছিলেন হার না মানা একজন তরুণ নারী উদ্যোক্তা রিনা আক্তার। তিনি ‘প্রতীতি’র স্বতাধিকারী ও গবেষণাধর্মী উন্নয়নমূলক যুব সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাসের কোষাধ্যক্ষ। রিনার বাড়ি রাজশাহীর মতিহার থানাধীন কাজলা এলাকায়। নারী উদ্যোক্তা রিনা আক্তার বর্তমানে রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট (আরএমপিআই)’র এআইডিটি বিভাগে দ্বিতীয় সেমিস্টারে অধ্যায়নরত।
তরুণ নারী উদ্যোক্তা রিনা আক্তার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি অনেক বাধার সম্মুখিন হয়েছি। বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েও আমি কখনো হাল ছেড়ে দেইনি। নিজেকে শক্ত করেছি। ধর্য্য সহকারে দৃঢ়ভাবে চেষ্টা করেছি। বাধাগুলোকে অতিক্রম করেছি। আর সেটা এখনও অব্যাহত রেখেছি।’

কিভাবে উদ্যোক্তা হয়ে উঠা এমন প্রশ্নের উত্তরে তরুণ নারী উদ্যোক্তা রিনা আক্তার বলেন, ‘জীবিকা উপার্জনে মাধ্যমগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ব্যবসা। আর বর্তমান সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্র্ভরশীল। সে কারণে এফ-কর্মাস (ফেসবুক মার্কেটপ্লেস) প্লাটফর্র্মের সহায়তায় অনলাইনে ব্যবসা করে অর্থ উপার্র্জন করার সিদ্ধান্ত নিই।’
‘অন্য কোন পেশার চেয়ে ব্যবসা অনেক স্বাধীন পেশা হলেও এটি অনেক বেশি চ্যলেঞ্জিং। সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী ধারণা আর নিজস্ব জ্ঞান ও দক্ষতার মাধ্যমে ব্যবসায় টিকে থাকতে হয়। নিজস্ব পরিচয়ে সকলের কাছে পরিচিত হওয়ার এবং নিজেকে স্বাবলম্বী ও প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগও রয়েছে এখানে।’ এমনটাও মন্তব্য করেন তরুণ নারী উদ্যোক্তা রিনা আক্তার।

নিজের উদ্যোগ ‘প্রতীতি’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সৎ ও হালাল পথে উপার্জন করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ব্যবসায়িক ধারণা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিলাম। হঠাৎ-ই মাথায় এলো রান্নাবান্নার কথা। সেটা নিয়ে ভাবতেই ধারণা এলো হোমমেড ফুডের বা ঘরোয়াভাবে রান্না করা খাবারের। রাজশাহী হলো শিক্ষানগরী। তাই এ নগরীতে বসবাসকারীর অধিকাংশ শিক্ষার্থী। তাই প্রথমেই রাজশাহীতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা কি ধরনের খাবার খেয়ে থাকেন বা পেয়ে থাকেন সেটা জানার চেষ্টা করলাম বিভিন্ন মাধ্যমে। সে বিষয়ে জানতে গিয়ে যা তথ্য পেলাম তা সত্যিই দুঃখজনক। বলতে গেলে শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর নিরাপদ খাবারের সুব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তাই আমি অনেক চিন্তাভাবনা করে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম হোমমেড ফুড নিয়ে কাজ শুরু করবো।’


তরুণ নারী উদ্যোক্তা রিনা আক্তার বলেন, ‘এরপর নিজের বাড়িতে সম্পূর্ণ ঘরোয়াভাবে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবার প্রস্তুত করে তা স্বল্পমূল্যে শিক্ষার্থীদের মেসে ও হোস্টেলে হোম ডেলিভারি দেয়া শুরু করি।’ রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বর্তমানে নিয়মিত খাবার প্রতীতি সরবরাহ করছে বলেও জানান ‘প্রতীতি’র স্বতাধিকারী তরুণ নারী উদ্যোক্তা রিনা আক্তার।
সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত ‘ই-বাণিজ্য করবো, নিজের ব্যবসা গড়বো’ প্রকল্পের ‘ই-কর্মাস প্রশিক্ষণ’ গ্রহণ করেছেন তিনি। ই-ক্যাব ও বিপিসি’র সহায়তায় অনুষ্ঠিত এ প্রশিক্ষণ তাকে উদ্যোক্তা হতে আরো বেশি উদ্বুুদ্ধ করেছে বলে উল্লেখ করেন এবং এমন আয়োজনের জন্য আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এ নারী উদ্যোক্তা।

মাত্র ৬৫ টাকায় তিনি দুপুর ও রাত দুই বেলায় নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর ও নিরাপদ গরম গরম খাবার দেন। আর সেই খাবার সঠিক সময়েই পৌঁছে যায় গ্রাহকের হাতে। এতে ‘প্রতীতি’র কর্ণধার তরুণ নারী উদ্যোক্তা রিনার কাছে প্রতিনিয়ত শহরের বিভিন্œ প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থী আর কর্মজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অনলাইনে ও মোবাইলে যোগাযোগ করছেন ও খাবারের অর্ডার দিচ্ছেন। আর সেই অর্ডার মোতাবেক খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহ করছেন তিনি। পড়াশোনার পাাশাপাশি তিনি প্রতিদিন খাবার রান্না করেন। প্রতিদিন খাবারের মেন্যুতে থাকে নূন্যতম ভাতের সাথে মাছ বা মাংস কিংবা ডিমের পাশাপাশি থাকে সবজিসহ মোট চার পদের তরকারি। সপ্তাহে একদিন থাকে পোলাও-মাংস অথবা বিরিয়ানি কিংবা বিশেষ কোনও খাবারের আইটেম। তরুণ এই নারী উদ্যোক্তা তার এ উদ্যোগের মাধ্যমে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখতে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ‘প্রতীতি’র কর্ণধার তরুণ নারী উদ্যোক্তা রিনা আক্তার বলেন, ‘শূন্য বিনিয়োগে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। শুরুর দিকে তেমন বেশি অর্ডার না পাওয়াতে নিজেরাই খাবার প্রস্তুত ও ডেলিভারি করেছি এবং এখনও করছি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্ডারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অর্ডার আসছে। তাই খাবার প্রস্তুত করা ও ডেলিভারি করার ক্ষেত্রে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। ফলে দ্রুতই ‘প্রতীতি’তে পাার্টটাইম বা চুক্তিভিত্তিকভাবে হলেও লোকবল নিয়োগ দেয়ার কথা ভাবছি। আর এটা করতে পারলে অন্যদেরও কর্মসংংস্থান হবে।’

happy wheels 2

Comments