ইয়াসমিন বেগম এখন কমিউনিটি লিডার

ঢাকা থেকে কামরুন নাহার
ইয়াছমিন বেগম রান্না করছিলেন, চুলার পাশে বসেই তার সাথে কথা হচ্ছিল। তার জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে। মাঝে তার ছোট মেয়ে ময়লার মধ্যে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পায়। তখন থেকে তিনি মানুষকে আরো বেশি সচেতন করে ময়লা আর্বজনা বাড়ির আশেপাশে থাকলে কি ক্ষতি হতে পারে এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন। তাঁর এই ভাবনা থেকেই তিনি ঢাকা কলিং প্রকল্পের সাথে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে আগ্রহী হয়েছিলেন, যা এখনো অব্যাবহত আছে। ইয়াসমিন করোনার সময়েও মানুষকে নানানভাবে সচেতন করেছেন। বিশেষ করে এই ময়লা আবর্জনা, থুথু যত্রতত্র না ফেলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পড়া, যত্রতত্র মাস্ক না ফেলা ইত্যাদি। ইয়াসমিন বেগম এখন কমিউনিটি লিডার। আসুন আরেকটু বিস্তারিতভাবে ইয়াসমিন বেগম সম্পর্কে জানি।

নাম তাঁর ইয়াসমিন (৩২), মোছা: ইয়াসমিন বেগম। তার পরিচয় আলাদাভাবে দেয়াটা খুবই কঠিন। তবে পরিচয়ের প্রথম দিন থেকেই তাঁকে দেখেছি প্রচন্ড কর্মদিপ্ত। নিজেকে তিনি দেখেন একজন কর্মী হিসেবেই। হাজারীবাগের বালুর মাঠ এলাকায় তাদের একটি ব্লককারখানা রয়েছে। তার জীবনসঙ্গী মূলত ব্লক কারখানার মূল ব্যক্তি। এই ব্লক কারখানায় বসেই তার সাথে কথা হয় আমাদের। তারপর কেটে গেছে বেশ লম্বা সময়, একবছর।
ইয়াসমিনের বাড়ি শরীয়তপুর। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তার জন্ম, দুই ভাই এক বোন ও বাবা মা নিয়ে তাদের সংসার। ৭ম শ্রেণীতে পড়ার সময় মাত্র ১৬ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর তিন সন্তানের মা হয় ইয়াসমিন। ঢাকা শহরে এসে শুরু হয় তাঁর নতুন জীবন সংগ্রাম।


ইয়াসমিন বলেন, ‘বছর খানেক আগে আমার বাসায় ঢাকা কলিং এর সাথে পরিচিতি হয়। তারা ময়লা বর্জ্য নিয়ে মিটিং করে। কেন ময়লা আবর্জনা বাইরে ফেলা উচিত না, ময়লা কত ধরনের, ময়লা নিয়মিত নেয় কিনা, ময়লা কিভাবে রাখা উচিত এগুলো নিয়ে তারা আলাপ আলোচনা করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে তারা আমাদের ব্লক কারখানায় নানান ধরনের মিটিং করেছে করোনায় সময়, যেহেতু আমাদের এখানে একটা বড় জায়গা ছিলো মিটিং করার মতই। আমরাও তাদের কাজে সহযোগিতা করতাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা কলিং এর সাথে যুক্ত হয়ে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। যেমন আমাদের কারখানার আশেপাশে আগের চেয়ে অনেক পরিস্কার। বর্জ্য সম্পর্কে আগে কারো সাথে কথা বলতে পারতাম না ঢাকা কলিং এর সাথে মিটিং করার পর সবার সাথে আলোচনা করতে পারি। আগে আমাদের পাশের উকিল বাড়ি; ইটালী বাড়ি থেকে আগে রাস্তায় ময়লা ফেলত বুঝানোর পর এখন আর ময়লা ফেলেনা।’

ইয়াছমিন বেগম বলেন, ‘আমরা বাড়িঘর পরিস্কার করি কিন্তু রাস্তঘাট তো পরিস্কার করিনা। কিন্তু প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাট অপরিস্কার করি। সেজন্য একজন ঝাড়–দার থাকলে ভালো হত। আবার রাস্তার পাশে ডাস্টবিন থাকলে ভালো হত। কারণ রাস্তায় লোকজন যখন চলাফেরা করবে তখন হাতে ময়লা থাকলে ডাস্টবিনে ফেলবে। অসুস্থ পরিবেশে থাকলে বাচ্চাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।’ ইয়াসমিন এখন প্রতিনিয়ত মানুষকে সচেতন করে। বিভিন্ন সভা, সমাবেশ ও মিটিং এ সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখেন। ইতোমধ্যে ইয়াসমিন বেগমের একটি সাক্ষাতকার নিয়ে ডকুমেন্টারী নির্মাণ হয়েছে যা তাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে।


তার মত আরও অসংখ্য ইয়াসমিন সৃষ্টি হোক আমাদের প্রতিটি প্রান্তিক জনপদে।

অনুলিখন : ফেরদৌস আহমেদ

happy wheels 2

Comments