ভিক্টর দিব্রা’র কৃষিবাড়ি
কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে আল্পনা নাফাক
নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম কচুগড়া। এই গ্রামেরই বাসিন্দা ভিক্টর ডিব্রা। বয়স ৭৪ বছর। দুই ছেলে দুই মেয়ে এই ৪ সন্তানের জনক তিনি। ছেলে মেয়েরা এখন সবাই নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত।
ভিক্টর ডিব্রা ছিলেন গোবিন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু নিয়তি তাকে শিক্ষকতা পেশা থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দেয়। ১৯৯১ সালে কচুগড়া গ্রামে জমি নিয়ে গারো ও বাঙালির মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়। যা এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপান্তর ঘটে। সংঘর্ষে একজন মারা যায় কয়েকজন আহত হন। এই ঘটনার সময় তিনি শিক্ষকতার কাজে বিদ্যালয়ে ছিলেন। তিনি জানতেনও না এমন একটা ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে বাড়ীতে এসে এমন ঘটনার কথা জানতে পারেন। তারপর উদ্যোগ নেন সমস্যা সমাধানের জন্য। কিন্তু লাভ হয়নি। কিছু ষড়যন্ত্রকারীর কারণে তিনি নিজেই ফেসে যান মার্দার কেসে। শুধু তিনি নন আরো ১০ জন অর্থাৎ মোট ১১ জনকে বিনা অপরাধে কারাভোগ করতে হয়েছিল দীর্ঘ ১৮টি বছর। ছোট ছোট ছেলে মেয়েকে রেখে চলে যেতে হয়েছিল তাকে জেলে। তার স্ত্রী অনেক কষ্টে ১৮টি বছর ছেলেমেয়েকে আগলে রেখেছিলেন। একটা সময় আসলো জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার।
২০০৯ সালে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি বাড়িতে এসে অগাছালো সংসার গোছাতে শুরু করলেন। আবারো জীবন সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়লেন। বাড়ির আঙ্গিনায় শাকসব্জি করা শুরু করলেন। তিনি তার যে পরিমাণ সম্পদ ছিল তার সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে ঘুড়ে দাঁড়ানোর অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। বসতভিটা অনেক বড় ছিল তাই সেখানেই বিভিন্ন ধরণের মৌসুম ভিত্তিক শাকসব্জি রোপণ করলেন। পাশপাশি তিনি গরু পালন শুরু করেন। এভাবে তিনি তার উৎপাদিত শাকসব্জি কচুগড়া গ্রামের বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। সব সময় জৈব পদ্ধতিতে শাকসব্জি রোপণ করতেন ফলে বাজারে তার শাকসব্জির চাহিদাও ব্যাপক। এখনো সারাবছর তিনি বিভিন্ন ধরণের শাকসব্জি উৎপাদন করে নিজের চাহিদা পূরণ করেন এবং বাজারে বিক্রি করেন। অধিকাংশ সময়ই এখন বাড়িতে থেকে এসব শাকসব্জি বিক্রি করেন তিনি। বাড়িতে থাকা বিভিন্ন গাছ গাছালিতে তিনি শখে বশে শুরু করেন গাছপান চাষ। প্রতিটি গাছেই দেখা যায় পানের লতা জড়িয়ে থাকতে। তিনি বলেন, ‘পান চাষের জন্য আলাদা কোন স্থান বা জায়গার প্রয়োজন পড়ে না। বাড়ির আশপাশে যেসব গাছ আছে সেখানে পানের চারা রোপণ করলেই অনেক ভালো ফলন পাওয়া যায় তবে শুকনো মৌসুমে পান গাছে পানি দিতে হয়। এসব উৎপাদিত পান বিক্রি করেও প্রতিদিন আয় করছেন ভিক্টর দিব্রা। প্রতিদিন ৩-৪ পণ পান বিক্রি করা যায় বলে জানান তিনি। কিন্তু পাহাড়ি ঢলের কারণে কিছু পান গাছে সমস্যা হয়েছে।
অবশেষ তার একটাই কথা ছেলে মেয়ের টাকার আশায় আমি কেন থাকবো। যতক্ষণ শরীরে শক্তি আছে একটা কিছু করে খেতে হবে। বসে থাকলে শরীরে রোগ শোক বাসা বাঁধে। পরিশ্রম করি তাই কোন সমস্যা হয় না। সব সময় তিনি বিশ্বাস করেন কাজে মধ্যে লেগে থাকলে মন মানসিকা ভালো থাকে কোন ধরণের দুশ্চিন্তা মাথায় আসে না। পাড়া প্রতিবেশীদেরও তিনি উদ্বুদ্ধ করেন শাকসব্জি চাষের জন্য।