কন্যাশিশু দিবসে প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্বের আহবান

কন্যাশিশু দিবসে প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্বের আহবান

মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার

“Our time is now- our rights, our future” প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের পূর্ব মকিমপুর গ্রামে একতা কিশোরী সংগঠনের আয়োজনে এবং বারসিক এর সহযোগিতায় গতকাল বিশ^ কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটি উদযাপনের মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণকারীরা প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্বের আহবান জানান।

কিশোরী সংগঠনের সভাপতি সামিয়া আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুরুতেই দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রবন্ধ পাঠ করেন সামিয়া আক্তার। এরপর কন্যাশিশুদের প্রতি বৈষম্য, নির্যাতন, সমঅধিকার, সমমর্যাদা বিষয়ে আলোচনা করেন বারসিক এর প্রোগ্রাম অফিসার রাশেদা আক্তার। তিনি বলেন, “বর্তমান সময়ে কন্যাশিশুরা বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। মেয়েদের নিয়ে সারাক্ষণ এক ধরণের আতংকে থাকেন মা-বাবারা। সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ভোগেন। কিন্তু একজন ছেলেকে নিয়ে বাবা মায়েরা কোনো টেনশন করেন না। কারণ, একজন ছেলেকে ছোট বেলা থেকেই যেভাবে গড়ে তোলা হয়, বাইরের জগতের সাথে পরিচিত করে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয় স্বাভাবিক ভাবেই সেই ছেলেটি বাইরে চলা ফেরা করতে ভয় পায়না। কিন্তু একজন কন্যাশিশুকে ‘না’ নামক চার দেওয়ালে বন্দী করে রাখতে রাখতে সে তার বাইরের জগতকে ভুলে যায়। যখন সে কোথাও যায় তার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত মনে হয় সবকিছু। এখন সময় বদলেছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, পুষ্টি সকল ক্ষেত্রে মেয়েদেরও সমান সুযোগ দিতে হবে। একজন ছেলে যেমন একটি পবিারের বংশের প্রদীপ হতে পারে তেমনি সম সুযোগ ও সম অধিকার দিলে একজন মেয়ে দুই বংশের প্রদীপ হতে পারে। সেই সুযোগটা আমাদেরই তৈরি করে দিতে হবে।”

অভিভাবক ছানু বলেন, “আজকাল মানুষ অল্প বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দেয়। মেয়েদের বুঝা মনে করে। মেয়ে একটু বড় হইলেই আশেপাশের মানুষ নানা কথা বলে। আমাদের গ্রামের মেয়েরা মিলে মাসে মাসে আমাদের বাড়িতে বসে মিটিং করে। আমি সময় পেলে ওদের কথা শুনি। অনেক ভালো ভালো কথা বলে মিটিং এ। বাবা মাকেই সচেতন হতে হবে। ছেলে-মেয়ে সমানভাবে দেখতে হবে।”

দিবসকে কেন্দ্র করে প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্বের আহবান জানানো হয়। প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান যেমন মাটি, পানি, বায়ু, সূর্য, গাছ, পিঁপড়া, কেঁচো, উইপোকা, প্রজাপতি, মাকড়সা, মৌমাছি, শ্যাওলা, ব্যাঙ, ফুল, পাখি, নদী ইত্যাদি কাগজে লিখে অংশগ্রহণকারীদের হাতে দেওয়া হয়। এরপর যার হাতে যে লেখাটা আছে তাকে সেই বিষয়ে বলতে বলা হয় এটা কেন প্রকৃতির জন্য প্রয়োজন এবং কীভাবে এর সাথে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। অংশগ্রহণকারীরা প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ বিষয়ে উপর মতামত প্রদান করে।

বারসিক এর ইয়ুথ ফ্যাসিলেটেটর রুমা আক্তার বলেন, “প্রকৃতির সব উপাদানই আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাতাস আমাদের যেমন অক্সিজেন দেয় তেমনি ধান ক্ষেতে যখন বাতাস বয়ে যায় তখন ধানের পরাগায়ন হয়। পরাগায়ন না হলে ধানে ফলন হতো না। তাই প্রতিটি উপাদানই আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে।”

অভিভাবক নাছিমা বেগম বলেন, “এখানে যা যা লেখা আছে এবং আলোচনা শুনলাম কোনো জিনিসই ফেলনা না। কোনো না কোনো ভাবে আমাদের উপকার করে। একজনের ক্ষতি হয়, অন্য জনের উপকার হয়। এইটাই তো প্রকৃতির নিয়ম। এর একটাও ছাড়া আমরা বাঁচতে পারুম না। তাই এইগুলো নষ্ট করাও আমাগো চলবো না।”

কিশোরী অঞ্জনা আক্তার বলেন, “স্বাভাবিকভাবে মনে হয় একটা পিঁপড়া তো শুধু কামড়ই দেয়। শুধু ক্ষতিই করে। কিন্তু একটা পিঁপড়ার ও যে একটা পরিবার আছে, সে যে অন্যদের উপকার করে এভাবে কখনো ভাবিনি। আজ থেকে অযথা পিঁপড়া মারবো না।”

রিফা আক্তার বলেন, “ব্যাঙ যে উপকারে আসে তা আগে জানতাম না। আজকে যে ভাবে জানলাম এভাবে আগে কারো কাছ থেকে জানি নাই। প্রতিটি জিনিসই আমাদের জন্য উপকারী। আমরা এদের মারবো না।”

সভাপতির বক্তবে সামিয়া আক্তার বলেন, “প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানই আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসলে আমরা কখনো এভাবে ভেবে দেখি না। বন্ধুত্ব হয় মানুষের সাথে। প্রকৃতির সাথেও যে বন্ধুত্ব হয় তা আজকে ভালোভাবে জানতে পারলাম। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই এগুলোর সাথে আমাদের বন্ধুত্ব করতে হবে। এগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হবে।”

আলোচনা সভা শেষে কিশোরীদের অংশগ্রহণে গান ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে কিশোরী, যুব, শিশু ও অভিভাবক সহ ৫৫ জন অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘ রাষ্ট্রসমূহ প্রতিবছর ১১ অক্টোবর তারিখে পালন করে। এই দিবসকে মেয়েদের দিনও বলা হয়। ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর তারিখে প্রথম এই দিবস পালন করা হয়েছিল। লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা এই দিবসের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র সমূহ হল শিক্ষার অধিকার, পরিপুষ্টি, আইনি সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা, ও বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বলপূর্বক তথা বাল্যবিবাহ।

happy wheels 2

Comments