ধনী দেশের মানুষেরা, আমাদের কথা শুনতে কি পাও?
বারসিকনিউজ ডেক্স
‘পানির সমস্যার কারণে আমরা কৃষিকাজ করতে না পেরে গ্রাম ছেড়ে নগরের আসতে বাধ্য হয়েছি। বরেন্দ্র এলাকায় আগে ৬০ ফুট মাটির নিচে গেলে পানি পাওয়া গেলেও এখন ১৫০ থেকে ২০০ মাটির নিচে ডিপ-টিউবওয়েল বসানোর পরেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে আমরা নগরে এসে পেশা পরিবর্তন করে হকারী, রিকশা চালনাসহ নান ধরণের কাজ করে নগরে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছি।’
উপরোক্ত বক্তব্যটি রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকার বস্তিবাসী মো: শাহ আলমের। ঢাকায় বারসিক আয়োজিত সংলাপে অংশগ্রহণ করে তিনি আরো বলেন, ‘বরেন্দ্র এলাকার পরিবেশ ফিরে পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে উপস্থিত ধনী দেশের প্রতিনিধিরা যেন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন।’ বস্তিবাসী অধিকার সুরক্ষা কমিটির সভাপতি হোসনে আরা বেগম রাফেজার সভাপতিত্বে এবং বারসিক পরিচালক পাভেল পার্থের সঞ্চালনায় বারসিক এবং বস্তিবাসী অধিকার সুরক্ষা কমিটির যৌথ উদ্যোগে ‘জলবায়ু সম্মেলন, নগর দারিদ্র ও সংকট বিষয়ক নাগরিক সংলাপে” প্রধান অতিথি সিবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রেকৌশলী মো: আব্দুস সোবহান।
এছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক ড. নীলোপল অদ্রি, বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ^াস, ডিয়াকোনিয়া বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর খোদেজা সুলতানা লোপা, আওয়ামী বাস্তহারালীগ কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাওলাদার এবং নোঙর বাংলাদেশের সভাপতি সুমন শামস। সংলাপে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরা, রাজশাহী এবং ঢাকার নি¤œ আয়ের বস্তিবাসী মানুষেরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ^বিদ্যালয়ের সহযোগি অধ্যাপক ড. নীলোপল অদ্রি বলেন, ‘জলবাযু পরিবর্তনের কারণে মানুষ গ্রাম থেকে শহরে চলে আসছেন এবং নগরে এসেও তারা জলবায়ু নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছে। আগামীতে আরো মানুষ গ্রাম থেকে শহরে আসবে। এটা মোকাবেলার করার জন্য নিকটবর্ত্তী শহর ও নগরগুলোতে তাদের থাকা এবং কাজের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারকে আগাম উদ্যোগ নিতে হবে এবং জলবায়ুর আক্রান্ত মানুষের কাছে পর্যাপ্ত আগাম তথ্য থাকতে হবে।’
গ্রাম থেকে শহরে এসে আমি ২৫-৩০টি পরিবার মিলে একটি বাথরুম ব্যবহার করতাম, এখানে খাওয়ার পানির সংকট ছিল, আমাদের ছোট একটি ঘরে থাকতে হচ্ছে, ভালো কাজ না পাওয়ার কারণে এখন আমি বাদাম বিক্রি করে কোন মতে জীবন নির্বাহ করছি।’ কথাগুলো বলেছেন সাতক্ষীরার বস্তিবাসী মো: আশ্রাফ আলী। তিনি এই সংকটের জন্য যারা দায়ী তাদের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করেন।
ডিয়াকোনিয়া বাংলাদেশের কান্ট্রিডিরেক্টর খোদেজা সুলতানা লোপা বলেন, ‘জলবায়ু সংকটের কারণে নারী-পুরুষের বৈষম্য বাড়ছে। নারীদের উপর কাজের চাপ অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে। এই অবস্থার জন্য আমরা দায়ী না হলেও এর জন্য আমাদের মতো দেশের মানুষদের ভোগ করতে হচ্ছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যারা দায়ী তাদের আরো বেশি দায়িত্বশীল আচরণ করা দরকার।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘গত ২৬টি জলবায়ু সম্মেলন হয়েছে, সেখান থেকে এখনও পর্যন্ত তেমন কোন অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। জলবায়ু সম্মেলনের নামে যে পরিমাণ টাকা খরচ হচ্ছে তার ফলাফল কিছুই আসচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশ তথা সারা বিশে^ দরিদ্র জনগোষ্ঠি উপর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। তারা বারবার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে তা তারা করছে না। এই এই ধরনের বিলাসিতা বন্ধ করা উচিত এবং এবারের সম্মেলন থেকে জলবাযু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার জন্য ধনী দেশগুলোকে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।’
সংলাপে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয়েছে যা নি¤œরূপ: জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় নগরের নি¤œ আয়ের মানুষদের জন্য কম মূল্যে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য তহবিল দাবী করা হচ্ছে।
১. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্থানচ্যুত হয়ে নগরে আসা দরিদ্র মানুষদের তালিকা তৈরি করা জরুরি। তাদের সামগ্রিক ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব সরকারী প্রতিবেদনে নথিবদ্ধ হওয়া ও ক্ষপিূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
২. নগর দরিদ্রদের এলাকায় পরিকল্পিত বর্জ্যব্যবস্থা, বর্জ্য থেকে সম্পদ রূপান্তরের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
৩. পরিকল্পিত নগরকৃষির আওতায় নগর বস্তি ও নগর দরিদ্রদের যুক্ত করতে হবে। নগরবস্তি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী নিরাপদ বিষমুক্তক খাদ্য উৎপাদনে ভ’মিকা রাখতে পারে আর এজন্য দরকার বহুমুখী সহযোগিতা ও পরিকল্পনা।
৪. নগরের নি¤œ আয়ের মানুষদের জন্য বিনামূল্যে নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. নগরের নি¤œ আয়ের মানুষদের জন্য পানি, বিদ্যুৎ, জ¦ালানী, পয়ঃনিস্কাশন এবং বজ্র ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় নগর দরিদ্রদের জন্য বিশেষ ঝুকি ভাতা , প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
৭. কাউকে পেছনে ফেলে নয়, ”সকলের জন্য বাসযোগ্য নগর” এই নীতিতে পরিকল্পিত সবার জন্য বাসযোগ্য নগর গড়ে তুলতে হবে।