হরিরামপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে কাউন চাষ
সত্যরঞ্জন সাহা হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর নি¤œ প্লাবন ভূমি। প্রাকৃতিকভাবেই বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি প্রবাহিত হয়। মাঠে পলি পড়ে। মাঠ থেকে বন্যার পানি চলে গেলে পলি মাটিতে কৃষি ফসল বৈচিত্র্য ও প্রচুর ঘাস হয়। জমির ঘাস গরু ছাগল ভেড়াসহ অন্যান্য প্রাণি সম্পদের খাবার। অতিরিক্ত ঘাস জমিতে পঁচিয়ে সবুজ সার তৈরি করে ফসল উৎপাদনে সহায়ক হয়। কৃষক প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে উৎপাদন খরচ কমানো ও ফসল বৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে কাজে লাগায়। ভিন্ন ধরনের আবাদ ফসল বৈচিত্র্য বৃদ্ধি ও বীজবৈচিত্র্য সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে। তেমনিভাবে কৃষক প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা ও পারিপাশি^ক অবস্থার প্রেক্ষিতে চাষাবাদে উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকেন। কৃষকের নিকট থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া ফসলের মধ্যে একটি ফসল হলো কাউন। একসময় বা ১৫ বছর আগে হরিরামপুরে মাঠে প্রচুর পরিমাণে কাউন আবাদ হতো। আস্তে আস্তে কাউন চাষ কমে গেলেও বর্তমানে কৃষকদের উদ্যোগে কাউন চাষের পরিমাণ বাড়ছে। কারণ কৃষক কাউনের দাম ভালো পাচ্ছেন ও নিরাপদ খাদ্য হওয়ায় চাহিদা ভালো।
হরিরামপুরের বাহিরচর গ্রামের কৃষক অনিতা সরকার বলেন, ‘আমি আবাদ করে বীজ সংরক্ষণ করি। ফলে আমি আমার ইচ্ছা অনুযায়ী আবাদ করতে পারি। অন্যকে বীজ দিয়ে আবাদে সহযোগিতা করি। ফলে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষে সহায়ক হয়। আমি গত বছর জমিতে কাউন চাষ করি। এই জমিতে কিছু কাউন বীজ মাটিতে পরে। আমার ছিটানো কাউন চেয়ে আগের বছর জমিতে পরে থাকা কাউন গাছের ফল ভালো হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি এ বছর জমিতে যে কাউন বীজ বপন করেছি তা কিছুদিন পর শীষ আসবে। তবে কৃষক মাঠে কাউন, তিশি, তিল চাষ কম করে। কারণ উৎপাদন কম হয়। কাউন মারাই করে সংগ্রহ করা কষ্টদায়ক। তবে বাজারে কাউনের দাম ভালো। গ্রামের মানুষ জনেরা কাউনের পায়েশ খুব ভালো খায়। আমরা আর বীজ বৈচিত্র্য হারাতে চাই না। চাষাবাদের মধ্যে সংরক্ষণ করতে চাই।’
হরিরামপুর বাহিরচরের কৃষক সুচরন সরকার বলেন, ‘গ্রামের মানুষের কৃষি জীবিকায়নের প্রধান উৎস। ফসল বৈচিত্র্য আবাদ করেই আমরা ভালো থাকি। তবে মাঠে কাউন চাষ একেবারেই কম হয়। আমরা কাউন চাষে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বীজবৈচিত্র্য আবাদের মাধ্যমে সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বারসিক বিলুপ্ত প্রায় গুচিতিল, কাউন বীজ দিয়ে ও তথ্য দিয়ে চাষাবাদে সহযোগিতা করেছে। জৈব উপায়ে চাষাবাদ ও বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদে উদ্বুদ্ধ করছে। ফলে কৃষকগণ বীজ সংরক্ষণ করে আবাদ করছেন।’
হরিরামপুর দাসকান্দির কৃষক নিপেন সরকার বলেন, ‘আবাদ করলে কৃষকদের বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। নিজের কাছে বীজ থাকলেই আবাদের নিশ্চয়তা থাকে। বীজ কৃষকের সম্পদ কোনোভাবেই হারানো যাবে না। আমাদের ভুল আমরা বুঝতে পেরেছি। আমি দেশি টমেটো, লাল মুলা, আউশা ডাটা, তিল বীজ সংরক্ষণ করে চাষ করি। আমি বারসিক এর নিকট থেকে কাউন সংগ্রহ করে চাষ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাউন আবাদে সার বিষ লাগে না, ফলে উৎপাদন খরচ কম। বর্তমানে কৃষক কাউন চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছে। কাউনের চাল তৈরি করে বাজারে নিলে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রয় করা যায়। আগের দিনে কাউনের চাল তৈরির জন্য ঢেঁকি দিয়ে ছাটায় করত। এখন ঢেঁকির পরিবতে মেশিনের ছাটাই করি। বর্তমানে ঢেঁকি খুব কম চোখে পড়ে। চরাঞ্চলের পলি মাটি বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষের উপযুক্ত হওয়ায় আমরা সহজে আবাদ করতে পারি। তবে কৃষক পরিবারে সকলে মিলে কৃষি কাজ করায় উৎপাদন খরচ কম হয়।’
তিনি জানান, চরাঞ্চলের মাঠে কাউন পরিমাণে কম হলেও বীজ সংরক্ষণ করে আবাদ করছেন। তবে কাউন আবার মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে। আগের তুলনায় কাউনের চাহিদা বেশি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাউনের পায়েশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কাউন নিরাপদ খাদ্য হওয়ায় গ্রাম ও শহরে বেশ জনপ্রিয় খাবার।