অক্সিজেন ও ফুল পাখি যুব সংগঠনের সাফল্যগাথা

নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী
দিন দিন গ্রাম তার আপন সবুজ হারিয়ে ফেলছে। গ্রামে গোয়াল ভরা গরু, পুকুরভরা মাছ, ডোল ভরা ধানের দৃশ্য আরা দেখা যায় না। সবাই লোকায়ত কৃষি ছেড়ে, পরিবেশবান্ধব কাজ ছেড়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কাজের সাথে যুক্ত হতে বাধ্য হয়েছে। নেত্রকোণা জেলার সদর উপজেলার দরুণবালি গ্রাম, গ্রামের যুব, কৃষক, কিশোরী মিলে গড়ে তুলেছে তিনটি সংগঠন। অক্সিজেন যুব সংগঠন, ফুলপাখি কিশোরী সংগঠন ও রাখালবন্ধু কৃষক সংগঠন মিলে গ্রামের কৃষি, বীজ, পরিবেশকে রক্ষা করার কাজ করে যাচ্ছে।


এই সংগঠনগুলোর মাধ্যমে প্রথমেই তারা আলোচনা করে ঠিক করে দরুণবালি গ্রামকে একটি সবুজ গ্রামে পরিণত করবেন। তাই গ্রামের যুবরা মিলে আয়োজন করে পরিবেশ মেলার। নেত্রকোণার জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ৭০ জন নারীর নিকট বিতরণ করেন পরিবেশবান্ধব চুলা। গ্রামের নারীরা এখন কান্না ছাড়াই রান্না করেন।

সাজনা গ্রাম করার অঙ্গীকার
গ্রামকে সবুজ করার জন্য প্রত্যেক বাড়িতে সাজনা ডাল রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। গত তিন বছরে ৩৫০টি সাজনা ডাল রোপণ করেছে গ্রামের সংগঠনের যুব ও কিশোরীরা। এখন গ্রামে ১৮৫টি সাজনা গাছ আছে। যেহেতু সাজনা একটি পুষ্টিকর খাবার তাই গ্রামের মানুষের কাছে এই বিষয়টি পরিচিতি ও জানানোর জন্য গ্রামের যুবরা কাজ করছে।

পলিথিনমুক্ত করার ঘোষণা
গ্রামের যুবরা গ্রামকে পলিথিনমুক্ত করার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা ও বাজার করার জন্য পাটের ও কাপড়ের ব্যাগ বিতরণ করেছে। প্লাস্টিকের ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ও বাজারের ব্যাগ ব্যবহারের জন্য গ্রামের মানুষের কাছে ১০০ ব্যাগ বিতরণ করেছে।

পাখির প্রতি ভালোবাসা
পাখির প্রতি ভালোবাসার প্রকাশের জন্য গ্রামের শতবর্ষী ও বড় গাছগুলোতে মাটির হাড়ি বেঁধে দিয়ে সচেতনতা তৈরি করেছেন সংগঠনগুলোর সদস্যরা। অনেক পাখি এসে মাটির কলসিতে বাসা বেঁধেছে। মানুষের জন্য, কৃষকের জন্য পরিবেশের জন্য যে পাখি খুবই প্রয়োজন তা জানান দেওয়া এবং সচেতনতা তৈরির জন্য যুবরা এ কাজটা করে যাচ্ছে।

বৃষ্টির পানি সংগ্রহ
দিন দিন ভূগর্ভের পানি কমে যাচ্ছে। কৃষিকাজে ব্যবহার পানীয় জলের জন্য হাহাকার। চারিদিকে পানি সংকট, পানির অভাব পূরণের জন্য মানুষ এখন সাবমারসিবল বসিয়েও সমাধান পাচ্ছেনা। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে দরুণবারি যুব সংগঠনের সদস্যরা গ্রামেই বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও বিতরণের জন্য যুবরা জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন। বৃষ্টির পানি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কাছেও পৌছে দিয়েছেন প্রচার ও সচেতনতা তৈরির জন্য।

স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ
যুবরা গ্রামের বীজমেলা, নিরাপদ খাদ্যমেলা, ফল ও ফুল মেলা করে গ্রামের মানুষকে সংযুক্ত করেছে এবং গ্রামে কি কি ফল, ঔষধি ও ফুল গাছ আছে ও অচাষকৃত খাদ্য পাওয়া যায় তার জরিপ করে তালিকা অনুয়ায়ি ৫২৩টি গাছের চারা রোপণ করেছেন। গ্রামে ফল ও ফুলের মেলা করে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করেছে যে গ্রামে অনেক ফল গাছ নেই। অনেক ফুল গাছ নেই। ফুল গাছ না থাকলে মৌমাছি আসবেনা। পরাগায়ন হবেনা। বারোমাসের বারো ফল খেতে হয়।

তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ
গ্রামের মানুষের মাঝে তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য তথ্যবোর্ড তৈরি করেছেন যুবকেরা। যেখানে সরকারি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে যেসব সেবা আছে তার তালিকা সংগ্রহ করে গ্রামের মানুষকে জানাচ্ছেন তারা।

happy wheels 2

Comments