‘নগরদরিদ্রবান্ধব নির্বাচনী ইশতেহার চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা থেকে
জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাজনৈতিক দলসমূহের ইশতেহারে নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকার ও দাবী যুক্ত করার আহবান জানিয়েছেন বস্তিবাসী ও নগরদরিদ্রদের নিয়ে কর্মরত সংগঠনের প্রতিনিধিরা। আজ ২৩ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও প্রায় সত্তরটি নগরদরিদ্র সংগঠনের জোট কাপের যৌথ আয়োজনে ‘নগরদরিদ্রবান্ধব নির্বাচনী ইশতেহার চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা নগর দরিদ্রদের অধিকার রক্ষায় নির্বাচনী ইশতেহারে সুস্পষ্টভাবে অঙ্গীকার যুক্ত করার আহবান জানান।


কাপের নির্বাহী পরিচালক রেবেকা সান-ইয়াতের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক পরিবেশবিদ আবদুস সোবহান, বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের মিহির বিশ^াস, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নিখিল ভদ্র, বস্তিবাসী অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সভানেত্রী হোসনে আরা বেগম রাফেজা, পরিবেশপত্রের সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ প্রমুখ।
আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বারসিক নগর গবেষক জাহাঙ্গীর আলম এবং পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গবেষক ও লেখক পাভেল পার্থ। ঢাকা শহরের বিভিন্ন বস্তি থেকে আসা নগরদরিদ্র প্রতিনিধি, পথবাসী, ঝুপড়িবাসীরা অনুষ্ঠানে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।


উত্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়, ঢাকা বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ্এলাকা। এই শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৩,২৩৪ জন এবং বস্তিতে এই ঘনত্বের হার আরো অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে ২০৩০ সালে ঢাকা হবে ষষ্ঠ মেগাসিটির শহর। জলবায়ু পরিবর্তন, কাজের সংকটসহ নানাবিধ কারণে শুধু প্রতিদিন ১৫০০-১৮০০ মানুষ ঢাকা শহরে আগমন করে এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এদের অধিকাংশ মানুষের স্থান হয় ঢাকা শহরের অনিরাপদ, ঘিঞ্জি, ঘনবসতিপূর্ণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপদ অবাসনসহ সকল ধরণের নাগরিক সেবা বঞ্চিত বস্তি এলাকায়। এখানে আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন, সামাজিক নিরাপত্তা সেবা পরিসেবাসহ নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান।


প্রবন্ধে আরও বলা হয়, নগরের বস্তি এলাকায় বসবাসরত এই নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠী আবারো জলবায়ু পরিবর্তনের নানা নেতবিাচক প্রভাবের ফলে নগরেও দুর্ভোগ সামাল দিচ্ছেন। গ্রীষ্ম ও শীতকালে তীব্র তাপদাহ, শৈতপ্রবাহ, বর্ষা, জলাবদ্ধতা সামাল দিতে হয় এবং এর ফলে তাদের রোজগার কমে যায়, কর্মসংস্থানে সমস্যা দেখা দেয়, বিভিন্ন রোগবালাই বেড়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আজ গ্রামীণ জনগোষ্ঠী যেভাবে স্থানচ্যুত হয়ে নগরে আসছে এবং এর ফলে নগরে যেভাবে নানাবিধ সংকট তৈরি হচ্ছে অবশ্যই এক সঠিক পরিকল্পনার ভেতর দিয়ে এই চাপ, নতুন সংকট ও সমস্যা উত্তরণে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। একটি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকটি মানুষের যে কোন স্থানে সম্মানজনকভাবে জীবনযাপন করার অধিকার রয়েছে এবং এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।


অনুষ্ঠানে বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করা হয় যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো: নগরের নি¤œ আয়ের মানুষদের প্রাণের দাবী নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে, নগরের নি¤œ আয়ের মানুষদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে ও সহজভাবে পানি, বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে, নগর দুর্যোগকে বিচেনায় নিয়ে নগর দরিদ্রদের জন্য বিশেষ ঝুঁকি ভাতা, প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ দিতে হবে, বস্তিবাসী শিশুদের শিক্ষার জন্য সরকারি স্কুলের ব্যবস্থা করতে হবে, গ্রামের স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মত শহরের বস্তিতে ক্লিনিকের ব্যবস্থা করতে হবে এবং বস্তি এলাকায় পরিকল্পিত বর্জ্যব্যবস্থা, বর্জ্য থেকে সম্পদ রূপান্তরের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

happy wheels 2

Comments