ঘিওরে ভেড়া পালনে স্বাবলম্বী পার্বতী রাণী
ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
পরম মমতায় ভেড়া পালন করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ঘিওর উপজেলার শ্রীধরনগর আদিবাসী পাড়ার পার্বতী রানী বিশ^াস (৬১)। তিনি চার পুত্র সন্তানে জননী। নিজের আয় কম থাকায় ১৫ বছর আগে একটি ভেড়া বর্গা নিয়ে পালন করতে শুরু করেন। এরপর থেকে ধীরে ধীরে তিনি ২১টি ভেড়ার মালিক হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভেড়াগুলো আমি যতœ সহকারে রাখি। যাতে কোন অসুবিধা না হয়। সবদিকে খেয়াল রাখি, অসুখ-বিসুখ বা খাবার-দাবার কোনদিকে আমি অসুবিধা হতে দিইনি। তিনি জানান, বারসিক’র সহযোগিতায় ভেড়ার ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করে দেবার পর আমাদের ভেড়ার স্বাস্থ্যর সমস্যা হলে প্রাণীসম্পদ হাসপাতালে পরামর্শ ও চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
পার্বতী রানী জানান, একটি ছোট ভেড়ার বাজার দাম ৩ হাজার এবং বড় ভেড়ার দাম ১০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘আমাদের আদিবাসীদের কোন জমি নেই। তাই আমরা কম পুজিঁ নিয়ে ভেড়া পালন শুরু করি। ভেড়া পালন করে পরিবারে সহজে আয় করা যায়। আমার দেখাদেখি আমাদের গ্রামের আরো ২৫-৩০টি পরিবার ভেড়া পালন করে পরিবারে স্বচ্ছলাতা ফিরে পাচ্ছেন। ওই আয় দিয়ে কৃষি কাজের জন্য জমি বর্গা নিয়ে এখন অনেকেই চাষাবাদ করছেন।
ভেড়া ছাড়াও পার্বতী রানী বিশ^াসের বসবাসের জায়গা ছাড়া জমি নেই। তাই বসবাসের ঘরের চালের উপর সবজি চাষ করেন। তিনি যেমন ধুন্দল, চাল কুমড়া ও পুইশাক চাষ করেন। আর শীতের সময় দেশী লাউ ও সীম চাষ করে নিজের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করেন এবং বাড়তি সবজিটুকু বিক্রি করে নিজের পরিবারের অন্যান্য চাহিদা পূরণ করেন।
আদিবাসী জনগোষ্ঠিরা মনে করেন, ভেড়া লালন-পালন করা সহজ। ভেড়া বছরে তিন বার ২-৩টি করে বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকে। এগুলো ভালোমত দেখাশুনা বা পরিচর্যা করতে পারলে ভেড়ার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব। পার্বতী রানী নিজের সাহস ও পরিশ্রমে স্বযতেœ ভেড়ার একটি খামার গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে আদিবাসি জনগোষ্ঠিরা প্রতিটি পরিবারে ভেড়া পালন করছেন যা তাদের পারিবারিক আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নয়ন পথ সম্প্রসারিত করতে ভূমিকা রাখবে বলে তারা মনে করেন।