কৃষিতে সফল বিনোতা রানী
আসাদুল ইসলাম, (আশাশুনি) সাতক্ষীরা:
বাড়ির আঙিনায় ভরে আছে লাউ, চালকুমড়া, করলা, বরবটি, ঝিঙে, পল্লা, ওল কচু, কচু, পুইশাক, লাল শাক, ডাটা শাক, সিম, মুলা, পালনশাকসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি। আর এই সবজি পরিচর্যা করছে উপকূলের একজন নারী।
বলছি আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুর সরদার পাড়া গ্রামের বিনোতা রানী সরদারের কথা। যিনি একজন সফল কৃষাণী। বিনোতা রানীর পরিবার কুষক হলেও তাঁর এই কৃষাণী হয়ে ওঠার গল্পটা সহজ নয়। বিনোতার পরিবারের ছিলো তিন ফসলের জমিতে চাষবাষের কাজ কিন্তু আইলা, সিডর, আম্পানের মত অসংখ্য দুর্যোগে লবণাক্ততা বেড়ে গিয়ে সেই কৃষিজমি আর নেই। ফলে ধানের জমি ছেড়ে সেই সব জমিতে হচ্ছে মাছ চাষ। কিন্তু বিনোতাদের রক্তে মিশে আছে কৃষি কাজ ফলে প্রয়োজনের তাগিদে বিনোতা নিজেই এখন পুরোদম কৃষাণী।
বিনোতা রানীর স্বামী, ছেলে-মেয়ে, তাদের সন্তানসহ ৭ জন। স্বামী গৌরপদ সরদার কৃষক হলেও কৃষি কাজ না থাকায় এখন দিন মজুরের কাজ করেন। তবে মাঝে মাঝে ছেলেদের সাথে নিয়ে অন্য জেলায় কৃষি শ্রমিক হিসেবে ধান কাটার কাজ করতে যান। ছেলেরাও দিনমুজুরের কাজ করেন। জলাবায়ু পরিবর্তনের ফলে দুর্যোগগুলোর কারণে তাদের এলাকায় এখন তিন ফসল হয় না। বর্ষার সময় এক ফসল হয়। মূলত তখন নিজ এলাকায় কৃষি কাজ করে। বাকি সময় দিনমুজুরের কাজ করে।
কৃষাণী বিনোতা রানীদের সাত শতক জায়গা। একটি ছোট বাড়ির করার পর বাকি জায়গাটি পরে ছিলো। কিন্তু গেলো দুই বছর সেখানে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে বারো মাস সবজি চাষ করে। সবজি চাষে সফলতা পাওয়ার পর বাড়ির পাশে পরে থাকা আরো ৪/৫ শতক জায়গাও সবজি চাষ করছেন। এছাড়া আত্মীয়দের ৩ বিঘা জমি চুক্তিতে এক ফসলী ধানে চাষ করেন।
বিনোতা রানী জানান, তার বাড়ির আঙিনায় যে জমি পরে ছিলো সেখানে সবজি চাষ করছেন। বারোমাস বাড়ির আঙিনায় লাউ, চালকুমড়া, করলা, বরবটি, ঝিঙে, পল্লা, ওল কচু, কচু, পুইশাক, লাল শাক, ডাটা শাক, সিম, মুলা, পালনশাকসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করছেন। নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিমাসে গড়ে ২-৩ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেন। তিনিই মূলত এই চাষের কাজটি করেন। তবে পরিবারের অন্য সদস্যরাও তার এই কাজে মাঝে মাঝে সহযোগিতা করেন।
বিনোতা রানী আরো জানান, অল্প পরিমাণে বিগত দিনে করলেও বারসিকের পরামর্শে এবং বারসিক থেকে জলবায়ু সহনশীল প্রশিক্ষণ ও জৈব সার তৈরি প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর থেকে তার এই চাষের কাজের আগ্রহটা বেড়ে গেছে। এর ফলে তার পরিবারে সংসার চালানোতে বড় অবদান রাখছে।
বিনোতা রানীর এই কৃষি কাজের সফলতা দেখে তার সিএসও গ্রুপসহ এলাকার অন্য সদস্যরা বাড়ির আঙিনায় পরিত্যাক্ত জমিতে সবজি চাষ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।