মুরগি পালনে সম্ভাবনা খুঁজছেন চুনকুড়ির সাবিত্রী রানি
সাতক্ষীরা থেকে আব্দুল আলীম
উপকূলের অন্য নাম দুর্যোগ। প্রতিনিয়ত দুর্যোগের শিকার এই উপকূলের শিশু, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ, গর্ভবতী নারী, প্রতিবন্ধী। পুরুষের চেয়ে প্রতিনিয়ত বেশি ক্ষতিগ্রস্ততার শিকার হচ্ছে নারীরা। তারা দৈনন্দিন বিভিন্ন পেশা হিসেবে বিভিন্ন কাজে যোগ দেন। কখনো সারাদিন বুকসমান লোনাপানির চিংড়ি ঘেরে কাজ করেন। আবার কেউ সারাদিন রোদ্রের তাপে কাজ করেন, কেউ স্বামীর সাথে সুন্দরবনে মাছ ধরতে যান। তেমনই জীবন সংগ্রামে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছেন শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চুনকুড়ি গ্রামের প্রশান্ত মন্ডলের স্ত্রী সাবিত্রী রানি।
১৫ বছর বয়সে প্রশান্ত মন্ডলের সাথে বিয়ে করে এই হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য হয় সাবিত্রী রানি। স্বামীর আয়ে সংসারের সকল খরচ না কুলানোতে শ্বশুরবাড়ি এসে কিছুদিন পর থেকে শুরু হয় সাবিত্রীর দৈনন্দিন মজুরি দেওয়া। কখনো ঘেরের লোনা পানিতে বুকসমান সারাদিন কাজ করা, কখনো পুরুষ মানুষের সাথে পুকুরের মাটির কাজ করা, কখনো ঘেরের শামুক বেছে দেওয়া, এভাবে বিভিন্ন দৈনন্দিন মজুরির কাজ করে থাকেন।
পরপর দুইটি পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ায় তাদের খরচ ও সংসারের খরচ যোগানো খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো দুজনের এবং প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অসুখের সম্মুখিন হন। মনে মনে গ্রামের কোন ছোটখাটো কাজ তিনি খুঁজছিলেন। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে নেটজ বাংলাদেশের অর্থায়নে বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় তিনি উক্ত প্রকল্পের সদস্য হন এবং আয় বর্ধন কর্মকান্ড হিসেবে নৌকা ও জালদড়ি নেন। তিনি নৌকা নিয়ে স্বামীর সাথে সহযোগিতা করার কাজ শুরু করেন। তাদের আগে নৌকা ভাড়া দিয়ে চলতে খুব কষ্ট হত। এখন তারা প্রতিনিয়ত নৌকার মাধ্যমে দৈনিক ২০০/৩০০ টাকা আয় বৃদ্ধি করেছে। সাবিত্রী রানী প্রকল্পের আলোচনা অনুযায়ী নিজের স্বপ্ন পূরণে বাড়িতে হাঁস ও মুরগি পালন শুরু করেন এবং একটি মুরগির খামার করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা প্রাথমিকভাবে ১০০ মুরগির বাচ্ছা নিয়ে শুরু করেন।
দীর্ঘ ১৫ দিনে প্রতিটা মুরগির ওজন ৫০০ গ্রামের উপরে চলে গেছে। সাবিত্রী রানি আশা করেন তার এই মুরগি পালন অনেক ভালো কিছু হবে। তিনি প্রকল্পের জলবায়ু সহনশীল কৃষিচর্চা বিষয়ক প্রশিক্ষণ থেকে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছিলেন এবং আরো ভালোভাবে শিখতে চান।