স্বপ্ন পূরণের আশায় তাসলিমা আক্তার
সাতক্ষীরা থেকে মহিরঞ্জন মন্ডল
পারিবারিক উন্নয়নের পুরুষের পাশাপাশি নারীরা অগ্রণী ভুমিকা পালন করে। গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি আর্থিক উন্নয়নের জন্য নারীরা নানা ধরনের আয়মূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকেন। তেমনই একজন উদ্যোগী নারী তাসলিমা আক্তার।
২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পাখিমারা গ্রামর শাপলা সিএসও দলে যুক্ত হন তাসলিমা আক্তার। এর কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে তার পারিবারিক ও ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসেবে তাকে ১২ হাজাপর ৬০০ শ’ টাকার ৩০০টি ক্যাম্বেল হাঁসের বাচ্চা সহযোগিতা করা হয়। পরিবেশ প্রকল্প থেকে তাকে একই সাথে একটি কদবেল ও সবেদার চারা, ২টি মুরগি ও বর্ষাকালীন বীজ সহযোগিতা করা হয়। এরপর বারসিক’র নিয়মিত আলোচনা, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতায় তার নিজের সম্পদটাকে বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগী ও যতœশীল হন।
তাসলিমা আক্তার (৪১) ও স্বামী আব্দুর রাজ্জাক (৪৫) পেশায় একজন দিনমজুর। খুব বেশি আয় করতে পারে না বলেই নিজেকে অপরের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করতে হয়। ছেলে ও ছেলের বউসহ মোট ৪ জনের সংসার কোনরকমে চলে। স্বামী ও স্ত্রীর ৩ শতক বসতভিটা ছাড়া আর কোন জমি না থাকায় দিনমজুরের আয়ের উপর চলতে হয় তাদের।
পারিবারিক কাজের পাশাপাশি স্বামী ও স্ত্রী মিলে হাঁসের বাচ্চাগুলোকে ভালোভাবে দেখাশুনা করেন। এখন হাঁসের বাচ্চাগুলো বড় স্বপ্নের জন্ম দিয়েছে তাসলিমা আক্তার ও স্বামী আব্দুর রাজ্জাকের। হাঁসের বাচ্চাগুলোকে ১৫দিন নিজেদের বাড়িতে রেখে লালন পালন করে পনের দিন পর থেকে স্বামী আব্দুর রাজ্জাক নিজের বাইসাইকেলের পিছনে একটি ঝুড়ি বেঁধে সেখানে প্রতিদিন কিছু সংখ্যক হাঁসের বাচ্চা নিয়ে সেগুলোকে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেন। গ্রামে হাঁসের বাচ্চার চাহিদা ভালোই থাকায় তিনি ঝুড়িতে করে যে বাচ্চা নিয়ে যান সে গুলো ভালোই বিক্রি হতে থাকে। এভাবে তিনি প্রতিদিন বাইসাইকেলের পিছনে করে হাঁসের বাচ্চাগুলোকে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন এবং সেখান থেকে ভালোই টাকা লাভ করতে থাকেন।
আব্দুর রাজ্জাক এবং তার স্ত্রী তাসলিমা আক্তার জানান, “বারসিক পরিবেশ প্রকল্পের মাধ্যমে দেওয়া ৩০০ হাঁসের বাচ্চা থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ করে পরবর্তীতে সেই টাকা দিয়ে পূনরায় আবার হাঁসের বাচ্চা এনে একইভাবে ১৫ দিন বাড়িতে রেখে লালন পালন করে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করি। এতে আমাদের লাভ ভালোই হয়। এখন আর কারো বাড়িতে কাজ করতে যেতে হয় না। তাসলিমা আক্তার এবং আব্দুর রাজ্জাকের হাঁসের বাচ্চার ব্যবসা ভালোই চলছে। তারা এখন দুইজন মিলে স্বপ্ন দেখছেন তাদের এই ব্যবসার টাকা দিয়ে তাদের নিজেদের বসতঘরটি ভালোভাবে মেরামত করবে যাতে দূর্যোগের সময় ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে না যায়।
তাসলিমা আক্তারের মত উপকূলীয় অঞ্চলের নারীরা নিজেদের আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ভিন্ন ভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও আত্মপ্রত্যয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন জয়ের আশায় কঠোর দায়িত্ব পালন করছে। এটা একদিকে যেমন তার পারিবারিক স্বপ্ন পুরণ হবে অপরদিকে তেমনি দেশীয় প্রাবৈচিত্র্য সুরক্ষা পাবে।