উইকিংবেড: পানিসাশ্রয়ী সবজি চাষের নতুন সম্ভাবনা
রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
উইকিং বেড হলো একটি বিশেষ ধরনের সবজি চাষের প্লট, যা পানি সাশ্রয়ে কার্যকর। এর শুদ্ধ বাংলা প্রতিশব্দ এখনো নির্ধারিত হয়নি। বারসিক ও দাতা সংস্থা ডিয়াকোনিয়ার যৌথ উদ্যোগে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সাশ্রয়ী এ নতুন পদ্ধতিতে সবজি চাষ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতি জনপ্রিয়, কারণ এতে অল্প পানির ব্যবহারেই চাষ করা যায়, এবং পুনরায় ব্যবহারের মাধ্যমে পানির অপচয় রোধ করা হয়। পাশাপাশি জৈব সারের উপাদানও পুনঃচক্রে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2025/02/3344b7e1-4229-4f10-b847-5e669ac6e310-1024x576.jpg)
উইকিং বেড বিভিন্ন উপায়ে তৈরি করা যায়, কাঠ, বড় পলিথিন বা ইট দিয়ে। বারসিক প্লাস্টিকের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করে বিধায়, রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোকুল-মোথুরা ও চিনাশো গ্রামে ইট দিয়ে উইকিং বেড তৈরি করা হয়েছে। এই বেডের মাপ: ৩৩ ফিট দৈর্ঘ্য, ২.৮ ফিট গভীরতা ও ২.৬ ফিট প্রস্থ। অতিরিক্ত পানি জমার জন্য ৪ ফিট স্কোয়ার ও ৫ ফিট গভীরতার একটি হাউজ তৈরি করা হয়েছে, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে সম্পন্ন হয়।
প্রথমে বেডের অর্ধেক অংশে (১৬ ফিট) একটি ফিল্টার পাইপ সংযুক্ত করা হয়, যার শেষ অংশ সংযুক্ত থাকে পাশের হাউজে। অতিরিক্ত পানি এখানে জমা হয়। এরপর একের পর এক স্তর তৈরি করা হয়: প্রথম স্তর: পাথর, দ্বিতীয় স্তর: কাঠের গুঁড়ো, তৃতীয় স্তর: ভার্মি কম্পোস্ট এবং উপরের স্তর: পঁচা গোবর ও মাটির মিশ্রণ। এই স্তরের উপর সবজির চারা ও বীজ রোপণ করা হয়।
উপরের স্তরে পানি সেচ দেওয়ার পর তা ছাঁকনি প্রক্রিয়ায় বেডের নিচে ও পাশের হাউজে জমা হয়। এই পানির সঙ্গে মাটিতে থাকা জৈব সার ও পুষ্টি উপাদান মিশে যায়, যা পুনরায় ব্যবহার করে গাছের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। ফলে খুব কম পানিতেই সবজি চাষ সম্ভব হয়।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2025/02/af86fe87-557d-4fc4-9ced-ae81c7981888-768x1024.jpg)
সাধারণত কৃষকরা ঐতিহ্যগত বেডে সবজি চাষ করেন, তবে এতে পানি ও পুষ্টি উপাদানের অপচয় বেশি হয়। ঐতিহ্যগত বেডে পানি সেচ বেশি দিতে হয়, কিন্তু উইকিং বেডে কম পানি ব্যবহারেই উৎপাদন সম্ভব। সাধারণ বেডে মাটির পুষ্টি দ্রুত কমে যায়, পুনরায় সার দিতে হয়, তবে উইকিং বেডে জৈব উপাদান দীর্ঘস্থায়ী হয়। পানি পুনঃব্যবহারযোগ্য বিধায়, উইকিং বেডে পানির অপচয় হয় না।
পরীক্ষামূলকভাবে উইকিং বেডের পাশাপাশি একই আকারের একটি ঐতিহ্যগত বেড স্থাপন করা হয়েছে। উভয় বেডে একই পরিমাণ পানি সেচ দিয়ে ফলন ও পানির ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করা হবে। বর্তমানে উভয় বেড নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং সবজি চারা রোপণ করা হয়েছে।