মানিকগঞ্জের চরাঞ্চলের পতিত জমিতে কলাচাষ
হরিরামপুর মানিকগঞ্জ থেকে মো. মুকতার হোসেন
দশ বছর বিদেশ থেকে দেশের মাটির টানে ফিরে আসি, সৌদি আরবে পাথর ও বালুর মাটির মধ্যে বিভিন্ন ফসল চাষ করেছি। বাংলাদেশের মাটি তো সোনার চেয়ে খাটি। ইচ্ছা করলেই যে কোন ফসল চাষ করা যাবে।” উপরোক্ত কথাগুলো বললেন, মানিকগঞ্জ জেলার চরাঞ্চলে হরিরামপুর উপজেলার সুতালড়ী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক সাইদ, (৫৫)।
চরাঞ্চলে বেশির মাটি বেলে দোঁআশ। এলাকার কৃষকরা গম, কালাই, শরিষা, ভুট্রা বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করেন। কিন্তু কৃষক সাইদ বেছে নেন কলা চাষ। কলা চাষের আগে এলাকার অভিজ্ঞ ব্যক্তি, কলাচাষী, বেসরকারি সংস্থা বারসিক এবং উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তার সাথে আলাপ আলোচনা করতে শুরু করেন। অনেকের কাছ থেকে ভালোমন্দ সব ধরনের পরামর্শ পেয়েছেন। সবকিছু বিবেচনা করার পর অবশেষে তাঁর নিজের ৫০ শতক জমিতে একটি মিশ্র ফলের বাগান দিয়ে শুরু করেন কলা বাগান। প্রথমে ২০টি স্থানীয় জাতের সবরি কলার চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেন তিনি। এতে তাতে ভালো ফলন পান। উৎসাহিত হয়ে তিনি কলার বাগানকে সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেন।
এর মধ্যে ২০১৫ সালে ৫০০টি দু’টি জাতের সবরি ও কবরি কলার চারা রোপণ করেন তিনি। কিন্তু রোগ ও বন্যার পানির কারণে তেমন লাভবান হতে পারেননি। তবে হাল ছাড়ার পাত্র নন কৃষক কৃষক সাইদ। তিনি ২০১৬ সালে আবার ১০০০টি কলার চারা রোপণ করেন। এবার তিনি সফলতা লাভ করেন। চলতি বছরে তিনি কলা বাগানে ৫ বিঘা (৩৩ শতক ১ বিঘা) জমিতে ২০০০ স্থানীয় জাতের সবরি, কবরি, মদনা, জাতি কলার রোপণ করেন।
তাঁর দেখাদেখিতে চরাঞ্চলের অন্য কৃষকরাও কলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। চরাঞ্চলে বিশেষ করে হালুয়াঘাট, মেহেন্দেীপুর, নটাখোলা, হরিহরদিয়া চরে প্রায় ৬০০ একর পতিত জমি রয়েছে। এসব পতিত জমিতে কলা চাষের মাধ্যমে আবাদের আওতায় নিয়ে আসতে চান কৃষকরা। এসব পতিত জমিতে এলাকার কৃষকরা তাই কলা চাষের উদ্যোগ নেন। এই প্রসঙ্গে সুতালড়ী ইউনিয়নে রামচন্দ্র পুর গ্রামের কৃষক সাইদ বলেন, “আমরা কলাচাষ দেখে এলাকার অনেক কৃষক আমার কাছ থেকে কলা চাষের বিষয়ে পরামর্শ নিতে আসেন।” তিনি আরও বলেন, “১০০ কলা গাছ চাষ করতে কলা বিক্রি পর্যন্ত খরচ হয় ১৫০০০ হাজার টাকা। কলা বিক্রি থেকে আয় হয় ৬০০০০ টাকা।”
ইতিমধ্যে বসন্তপুর গ্রামের বেল্লাল হোসেন, এবং পাটগ্রামচরে শহিদুল, হরিহরদিয়া গ্রামের রাসেল এবং নটাখোলা গ্রামের ফয়সাল, লিটন, রবিউল এসব ছাত্র ও যুবক কলাচাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নটাখোলা গ্রামের যুবক ফয়সাল হোসেন ৭ বিঘা জমিতে ২১০০ স্থানীয় জাতের কলা চাষ করেছেন। চাষীরা কলার চারা কেনার জন্য ফরিদপুর, ঝিটকা ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন । একটি কলার চারা ক্রয় থেকে শুরু করে পরিবহন খরচসহ প্রতিটি চারার মূল্য খরচ পড়ে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত।
কলা চাষ সম্পর্কে চরাঞ্চলের কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও কারিগরি শিক্ষা দেওয়ার জন্য বারসিকসহ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো সহযোগিতা করছে। কলাচাষীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা, আলোচনা সভা, অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করছে। এই প্রসঙ্গে নটাখোলা গ্রামের যুবক কৃষক ফয়সাল হোসেন বলেন, “কলাচাষে আমদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে বিভিন্ন সময়ে আমাদের অভিজ্ঞ কৃষকের কাছে যেতে হয়। কলা চাষের ষর বিষয়ে আমরা প্রশিক্ষন গ্রহণ করতে চাই।”
অন্যদিকে কৃষকরা কলা বাগানের সাথে সাথী ফসল হিসেবে করলা, ঝিংগা, শশা, মিষ্টি কুমড়া চাষ করছেন। অনেক কৃষক কলা বাগানের সাথে পেঁপের বাগানও করেছেন। এতে কৃষকরা দুইভাবে লাভবান হচ্ছেন। তবে অন্যান্য ফসলের মতো কলাচাষে নানান রোগ দেখা দেয়। এসব রোগ নিরাময়ে স্থানীয় কৃষি অফিস, এনজিও এবং অভিজ্ঞ কৃষকদের পরামর্শ আশা করছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা।