পিছিয়ে পড়াদের পাঠশালা
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে নিত্য সরকার ও সত্যরঞ্জন সাহা
তারুণ্যের শক্তি দিয়ে অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। তরুণরা উদ্যমী, প্রাণশিক্ততে ভরপুর। তরুণরা ইচ্ছা করলে যেকোন উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারেন। তরুণরা ইচ্ছা করলে সমাজ থেকে নিরক্ষরতা যেমন দূরীভূত করতে পারেন, সমাজ থেকে কুসংস্কারকে বিতারিত করতে পারেন ঠিক তেমনি সমাজকে মাদকের কালো থাবা থেকেও রক্ষা করতে পারেন। তবে এ কাজ করার জন্য প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি, উদ্যম, একাগ্রতা এবং আন্তরিকতা। এরকমই ইচ্ছাশক্তি ও আন্তরিকতা নিয়ে মনিঋষিদের ভেতরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার কালই এর বাসিন্দা ও তরুণ ব্যক্তি নিত্য সরকার।
পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীদের ভেতরে শিক্ষার আলো ছাড়ানোর জন্য নিত্য সরকারের নেতৃত্বে প্রাথমিকভাবে ২০১৫ সালে মনিঋষিদের কোমলমতি শিশুদের পাঠদান করা হয় খোলা আকাশের নিচে। তরুণদের এই ভালো উদ্যোগ দেখে এক পর্যায়ে রাজনৈতিক ব্যক্তি, শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবকগণ সহযোগিতার হাত বাড়ান। তৈরি হয় স্কুল ঘর। পরবর্তীতে এই স্কুলটি মন্দিরভিক্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত করা হয়। ফলে শিক্ষকের বেতন, শিক্ষার্থীদের বই, খাতা, কলমসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এখন আসে। ফলে শিশুরা আপন মনে স্কুলে লেখাপড়া করছে। বেতনের জন্য, বইয়ের জন্য তাদের অভিভাবকদের চিন্তা করতে হয় না!
এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পাশাপাশি গান, আবৃত্তি ও চিত্রাংকনের কৌশল শিখতে পারে শিক্ষকদের কাছ থেকে। নিজ সন্তানের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া এবং সন্তানের পড়ালেখার পরিবেশ দেখে মনিঋষি সম্প্রদায়ের অভিভাবকদের বুক আনন্দে ভরে উঠে। তাদের চিন্তা, তাদের সন্তানেরা তাদের মতো করে নিরক্ষর হবে না! শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে তাদের সন্তানেরা নিজের ভবিষ্যত রচনা করতে পারবে।
নিত্য সরকারের এই ক্ষুদ্র অথচ মহান উদ্যোগ মনিঋষি সম্প্রদায়ের শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে। ছোট্ট পরিসরে শুরু করা এই শিক্ষাকার্যক্রমটি আজ সরকারি বিভিন্ন সুযোগ লাভ করছে। মনিঋষি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা তাই তো বলতে পারছেন, “আমাদের আশা ছিল, পূর্ণ হয়েছে, আমরা সফল। আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সাথে কথা হয়েছে, সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আগামীতে আমরা আমাদের জীবনমান উন্নয়নে আরো ভালো কিছু করতে পারব।” নিত্য সরকাররা প্রমাণ করেছেন যে, ইচ্ছা করলে তারা যেকোন উন্নয়নমূলক কাজ করে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন রচনা করতে পারেন। তাদের উদ্যোগ এলাকার ও এলাকার বাইরের তরুণদের অনুপ্রাণীত করবে।
উল্লেখ্য যে, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার কালই-এ মনিঋষি সম্প্রদায়েরা দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে বাস করেন। বর্তমানে এই এলাকায় ১০০ পরিবার রয়েছে। তাদের রোজগারের প্রধান পেশা হলো বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরিকৃর্ত দৈনন্দিন ব্যবহার্য আসবাবপত্র। পরিবারের নারী-পুরুষ সকলে বাঁশ-বেত তৈরির কাজে পারদর্শী। বাঁশ-বেতের কাজ করে সংসার চালাতে কষ্ট হলেও আদি ও ঐতিহ্যবাহী পেশা তারা এখনও ব্যবসা ছাড়েননি।