যোগেশ চন্দ্র বর্মণ: দেশি মাছবৈচিত্র্য সংরক্ষক
যোগেশ চন্দ্র বর্মণ। মগড়া নদীর এই বিখ্যাত জেলে একাধারে জানমা মৎস্যজীবী সংগঠনের সভাপতি, আটপাড়া উপজেলা জলমহাল কমিটির সদস্য এবং উপজেলা মৎস্য কমিটিরও সদস্য। নেত্রকোণার মদন উপজেলার ভালই নদীর পাড়ে কুইলাটি গ্রামে ১৯৫৫ সনে এক জেলে পরিবারে জন্ম। ৩ বোন ও ৭ ভাইয়ের ভেতর যোগেশ পঞ্চম। অক্ষরের হাতেখড়ি আটপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আর জাল-জীবনের হাতেখড়ি বাবার কাছে। কৈশোরেই জন্মগ্রাম থেকে বানিয়াজান চলে আসেন মাতুলালয়ে এবং বর্তমানে এ গ্রামেই বসবাস করছেন। জলাভূমিতে দেশি মাছের আবাসস্থল ও বংশ সংরক্ষণ করে এর উপর ঐতিহ্যগত জেলেদের পেশা টিকিয়ে রাখার আন্দোলন করে চলেছেন। নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ২০১৫-২০১৭ সনের জন্য মগড়া নদীর সোমাইখালী খালের প্রায় ৮ একর জলাভূমি জেলেদের জন্য বন্দোবস্তী নিয়ে দেশি মাছের এক নিরাপদ আবাস গড়ে তুলেছেন, যেখানে একইসাথে সংরক্ষিত হচ্ছে তাদের এক প্রাচীন মৎস্য-কুর। যোগেশ চন্দ্র বর্মণ স্বপ্ন দেখেন নতুন প্রজন্মের জেলেরা মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস নিয়েই সমৃদ্ধ করবে দেশের মাছ ও জলাভূমির ঐতিহ্য। কুসুমবালা রানী ও রমেশ চন্দ্র দাসের পুত্র যোগেশ চন্দ্র বর্মণের আত্মজৈবনিক বয়ান থেকে তৈরি হওয়া চলতি লেখাটিতে খুঁজে পাওয়া যাবে তাঁর শিক্ষা, দর্শন, স্বপ্ন ও সংগ্রাম। লেখাটি তৈরি করেছেন পাভেল পার্থ
জীবনের প্রথম মাছ
বয়স তখন সবে দশ। নৌকা বাইতে শিখেছেন কেবল। ঘাস বন দিয়ে মাছ ধরার ‘উদরা’ বানানোও শিখেছেন। বাবার সাথে নেত্রকোণার হেলুইচ্চ্যা বিলে মাছ ধরতে যান। কালো মগড়া নদীর জল সুমাইখালী খালের ভেতর দিয়ে এ বিলে গড়ায়। প্রথমদিন বাবা ধরেছিলেন ঘুইঙ্গা আর পাবদা মাছ। যোগেশ ধরেন গুজি, আইড় ও ছোট বোয়াল। সারাদিনে কখনো কখনো আধ পাইংখা (প্রায় এক কেজি) মাছ পাওয়া যেত। জালে ধরা পুঁটি মাছ গুলো বেছে শিদল শুঁটকির জন্য রেখে দেওয়া হত। বাদ বাকী মাছ খাওয়া ও বিক্রির জন্য।
শৈশবের সেই বড় নানিদের মায়া
মাঘ মাসের শীতের সকাল। হিলুইচ্চ্যা বিলে কুয়াশার বিস্তার। বাবা, মামা প্রহ্লাদ চন্দ্র দাস, প্রতিবেশী মানিক চন্দ্র দাস, হরিন্দ্র চন্দ্র দাস ও অশ্বিনী দাসের সাথে নৌকায় বারো বছরের যোগেশ। দুপুর বেলা দেখা যায় বিলের একটা জায়গায় জারমনি (কচুরিপানা) ও সিংড়ার স্তুূপ নড়ছে। তারা খইন্যা জাল পাতেন। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর প্রায় ১০ কেজি ওজনের দু’টি বিশাল নানিদ মাছ পান। এত বড় নানিদ আর জীবনে কখনো পাননি। দু’টি মাছই বিক্রি করে দিতে হয়। অভাবের সংসার বলে সেই বিশাল নানিদ মাছের স্বাদ শৈশব থেকে আজো অধরাই রয়ে গেছে।
সাড়ে তিন হাত লম্বা বোয়াল
১৯৮০ সনের পৌষ মাসের দুপুর। কালো মগড়া নদীতে একটি কুরে (গভীর জলের মাছের আশ্রয়স্থল) যোগেশরা কাটা তৈরি করেছেন। গাছের ডাল-পাতা দিয়ে তৈরি এসব কাটায় মাছেরা এসে আশ্রয় নেয়। গঙ্গা পূজা না দেওয়া পর্যন্ত সেই কাটা এলাকা থেকে মাছ ধরা বারণ। দুপুরবেলা যোগেশরা দেখেন সেই কাটা নড়ছে। প্রভাত চন্দ্র দাস, গোপাল চন্দ্র দাস, শিবাস চন্দ্র দাস, রতন চন্দ্র দাস, রঞ্জন চন্দ্র দাস ও অখিল চন্দ্র দাসেরাও সাথে ছিলেন। অখিল চন্দ্র দাসকে জলে নেমে কারণ জানার নির্দেশ দেওয়া হয়। অখিল জলে নেমে কুরের ভেতর চলে যান এবং কোনোমতে জলে ডুবে ভেসে ওপরে ওঠেন। প্রচন্ড ভয় পান। শরীর হিম ঠান্ডা হয়ে যায় তার। আগুনের সেঁক দিয়ে শরীর গরম করা হয়। ঐ রাতেই অখিলের সব চুল ঝরে পড়ে যায়। যোগেশের ঠাকুরমা স্বপ্নে দেখেন কাটা আরো ছোট করতে হবে এবং গঙ্গা পূজার আয়োজন করতে হবে। যোগেশরা গঙ্গা পূজা দিয়ে কাটা ছোট করে জলে নামেন। প্রায় এক নৌকা মাছ পান সকলে। সাড়ে তিন হাত লম্বা ও ২৬ কেজি ওজনের এক বিশাল বোয়াল মাছ পাওয়া যায়। অখিল নাকি সেই মাছ দেখেই জলের তলে প্রায় মূর্ছা গিয়েছিলেন।
স্মৃতি জাগানিয়া মাছেরা
জীবনের নানা পদের ছোট বড় মাছ ধরেছেন যোগেশ। বড় মাছগুলো বরাবরই স্মৃতিময় হয়ে আছে। কালো মগড়া নদীর মূল কুরে কখনোই স্থানীয় জেলেরা কাটা দেয় না। সেটি গঙ্গা দেবীর পবিত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে সামাজিকভাবে সংরক্ষিত। স্থানীয় জেলেরা কাটা দেন তার পাশের কুরে। ১৯৯০ সনের পৌষ মাসের এক সকালে কালো মগড়ার এই পাশের কুর থেকে কাটা ভেঙে যোগেশরা প্রায় দুই নৌকা বোয়াল মাছ পান। কয়েক ডক (এক ডক মানে ১ কেজি) বাতাসী মাছ পান। তখন এক ডক বাতাসী মাছের দাম ছিল ২৫ টাকা। এখন এক ডক মাছ মিলানো যাবে না। দাম হবে প্রায় পনের হাজার টাকা। কালো মগড়া নদী থেকে ১৯৯৫ সনের ফাল্গুন মাসে বড় লেজের এক আইড় মাছ ধরেন। মাছটির ওজন ছিল প্রায় ১৬ কেজি। ১৯৮৯ সালে সুমাখালী খালের সেতুর নিচ থেকে ফাইজাল দিয়ে ২০ কেজি ওজনের লাল টকটকে এক বড় বাঘাই মাছ ধরেন যোগেশ। ৩-৪ মণ ওজনের এই বাঘাই তার এখন পর্যন্ত ধরা তার জীবনের সবচে’ বড় বাঘাইড়। ঐসময় সুমাইখালী খালে বর্ষাকালে বাঘাই, নানিদ, মাশুল (মহাশোল) মাছ পাওয়া যেত। খালের মুখে বান দেয়াতে এখন আর পাহাড়ি ঢলের ¯্রােত আসে না। কংস নদীর এক প্রধান শাখা নেত্রকোণার বড়াইলে বান দেওয়া হয়েছে এর ফলে ভাটিতে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
হাইরা ধরা নিষেধ
চিতলের বাচ্চার নাম হাইরা। ভাদ্র মাসে পানি কমলে হাইরাদের ঝাঁক ভাটির দিকে আসতো। খরা জাল দিয়ে কেউ কেউ ঐ বাচ্চা মাছদের ধরতে যেত। যোগেশরা বাধা দিতেন। বাচ্চা মাছ আর ডিমঅলা মাছ ধরা তাদের সমাজে নিষেধ।
মাইট্টা তামাশা
ছোটবেলা থেকেই সিনেমা-টেলিভিশন দেখার কোনো বাতিক ছিল না। গ্রামে গ্রামে হেমন্তের দিনে আয়োজিত হতো মাইট্টা-তামাশা। দল তৈরি হতো। মানুষ নানা সাজে সেজে নাচ-গান করতো। সামাজিক নানা সংকট তুলে ধরতো। এমনকি মাছ ও ব্যাঙও সাজতো কেউ কেউ। শীতকালে আয়োজিত হতো পুনাই ব্রত। উঠানে পুকুর কেটে জল ভরে তাতে একটি দারকিনা মাছ ছেড়ে গান গাইতো নারীরা। সেইসব মাছের গীত শৈশব থেকে এখনো তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। চারপাশের জলাভূমি আর মাছেদের সাথে সাথে দিনে দিনে মাইট্টা-তামাশাগুলো উধাও হয়ে যাচ্ছে।
নিয়তের মাছ
জেলে পরিবারের নিয়ম অনুযায়ী পরিবারের কেউ মারা গেলে তার সন্তানেরা মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধের আগে নদীতে যান। শ্রাদ্ধের আগের দিন নদীতে নেমে হাত দিয়ে একটি মাছ ধরেন। যে মাছটি পাওয়া যায় সেই মাছটিকে মৃতব্যক্তির নামে নিয়ত করা হয়। এই মাছ তখন যিনি ধরেছেন মানে মৃত ব্যক্তির সন্তান ও স্ত্রী বা স্বামী তাদের কাছে সারাজীবনের তরে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এই মাছ তখন মৃত ব্যক্তির আত্মা নিয়ে জলে পরিভ্রমণ করে বেড়ায়। বংশচক্রের নিয়ম অনুযায়ী একটি সিঁড়ি এই মাছ খায় না এবং ধরেও না। পরবর্তী বংশ থেকে এই নিয়ম আর থাকে না। যোগেশের বাবার জন্য নাপিত মাছ ও মায়ের জন্য বানেহর মাছ নিয়ত করা হয়। এই মাছ দু’টি মা-বাবার শ্রাদ্ধের দিন থেকে যোগেশের আর খাওয়া হয়নি।
পানির পইরল
প্রবীণ জেলেদের কাছ থেকে যোগেশ শিক্ষা পেয়েছেন জলে পইরল থাকে। এরাই জলজীবনের রক্ষক। জলের রাজা। এরা কখনো গঙ্গা দেবী আর কখনো খোয়াজ খিজির নামে মান্য হয়। একারণে মাছ ধরতে গিয়ে জেলেরা কখনোই পানিতে পায়খানা-প্র¯্রাব করে না। এই পইরল নানা রূপ নিয়ে নানা সময় দেখা দেয়। তারা নদী ও বিলের গভীর কুরে থাকে। পইরল যেখানে থাকে সেখান থেকে সবসময় ভুরভুর করে বুদবুদ ওঠে। জেলেরা বিশ্বাস করে পইরল শ্বাস ছাড়ে। পইরলের কাছে অনেক ডিমঅলা মাছ আশ্রয় নেয়। কিন্তু জেলেরা কখনোই এখান থেকে মাছ ধরে না। কালো মগড়া নদীর সোমাইখালী খালে এরকম একটি পবিত্র কুর আছে।
কৈশোরের পাঁচ শিক্ষা
শৈশব থেকে বার্ধক্য। জেলে জীবনের শেখার কোনো শেষ নেই। ঋতুভিত্তিক কোন মাছ কখন ধরা নিষেধ, কোন মাছের বিচরণস্থল কেমন এবং মাছ ধরার নানা কলাকৌশল শেখার জন্য দরকার গভীর নিষ্ঠা, অনুশীলন আর একটা নির্লোভ মন।
১. বৈশাখ থেকে জ্যেষ্ঠ এসময় মাছ ধরা নিষেধ। এটি হলো মাছের প্রজননকাল। ডিমভর্তি মাছ থাকে তখন জলাশয়ে। এসময় মাছেরা সবচে কম আত্মরক্ষা করতে পারে। অসহায় ঘুরে বেড়ায়। ডিমঅলা মাছ জালে পড়লে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে আবার জলে ছেড়ে দিতে হয়।
২. আষাঢ় থেকে ভাদ্র পর্যন্ত নানা জাতের মাছ ডিম ছাড়ে। এ সময়ও মাছের পোণা ধরা ঠিক নয়। পোণারা ঝাঁক বেঁধে থাকে, একটি ঝাঁক বিপদে পড়লে একটি বংশ শেষ হয়ে যায়।
৩. আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসে মাছেদের শরীরে তেল জমে। এসময়ই পুঁটি মাছ বেশি ধরা হয়। তেল ও শিঁদল শুঁটকির জন্য।
৪. অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ পর্যন্ত মাছেরা ডিম দেয় না। পোণারাও বড় হয়ে যায়। এসময়ই বেশি মাছ ধরা হয়।
৫. ফাল্গুনের শেষেই মাছের পেটে ডিমের ভাঁজ আসে। মেদা ও মেদি মাছের শরীরে দুধ আসে। এই দুধই মাছেদের বংশ বাঁচিয়ে রাখে যুগের পর যুগ। এসময় মাছের পরিবেশ নষ্ট করা ঠিক নয়। এ সময় মাছ বিপদে পড়লে পরবর্তীতে মাছের জোগান কমে আসে। এসময় কোনো মাছ জালে ধরা পড়লে জেলেরা মাছের পেটে চাপ দেয়, যদি নাভি দিয়ে ঘন দুধ বের হয় তবে সেই মাছ আবার জলে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুধের ঘনত্ব ও রঙ দেখে বোঝা যায় ডিম দানা বাঁধছে কীনা।
ঋতুভিত্তিক জাল
ঋতু বদলের সাথে সাথে বদলে যায় মাছ ধরার সরঞ্জামগুলোও। এক এক মাছ ধরার এক এক প্রযুক্তি। শ্রাবণ থেকে ভাদ্র মাসে ফাই জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। এ সময় নদীতে পানি ও ¯্রােত বেশি থাকে। বাউশ, কাইক্যা ও বাঘাই মাছ ধরা যায়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে নদীর ভাটি থেকে পাবদা, পুঁটি ও গুলসা মাছ ধরার জন্য আংড়া জাল ব্যবহৃত হয়। যোগেশের দিদিমা আঙুল দিয়ে এ জাল বানাতে জানতেন। কার্তিক থেকে ফাল্গুনের আগ পর্যন্ত মলাশী জাল ব্যবহৃত হয়। এ সময় নদীতে ¯্রােত থাকে না, মাছের পেটেও ডিম দানা বাঁধে না। বাতাসী, মলা, টেংরা মাছ ধরা যায়। চৈত্র মাসে গরম পড়লে ঝাকি জাল দিয়ে চাপিলা, মলা ও গুলশা মাছ ধরা হয়। এখন দিন বদলে গেছে, আগের মতো ঋতুর নিয়ম মেনে পানির ধর্ম বুঝে কেউ ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন জাল ব্যবহার করে না। এখন কারেন্ট জাল এসেছে। এই জাল কোনো ঋতু, পানির প্রবাহ ও মাছেদের বয়স বুঝে না। সব বয়সের সব জাতের মাছ আটকে ফেলে। কারেন্ট জালে মাছ ধরলে যত না মাছ ধরা হয় তারচে বেশি মাছের বংশ নষ্ট হয়।
প্রকৃত জেলে আবার কী?
জেলে এক হাজার বছরের পরিচয়। এটি কেবলমাত্র বংশ আর পারিবারিক পরিচয়ের উপর নির্ভর করে না। জেলে পরিচয়ের জন্য শৈশব থেকে এক গভীর ও কঠিন অনুশীলনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। সারাজীবন জল ও জালের সাথে এক জটিল সম্পর্ক থেকেই এক একজন জেলে হয়ে ওঠে। জেলেদের ক্ষেত্রে কোনো ‘প্রকৃত জেলে’ বা অপ্রকৃত জেলে বলে কিছু নেই। সরকারিভাবে ‘প্রকৃত জেলে’ শব্দটি আমদানি করে জেলেদের চিরায়ত পেশা ও পরিচয়কে অবমাননা করা হয়েছে। এখন আবার নতুন একটি পরিচয় দেওয়া হচ্ছে ‘প্রকৃত মৎস্যজীবী’। মৎস্যজীবী বলতে কিন্তু জেলে বোঝায় না, বাণিজ্যিকভাবে যারা নদী-খাল বাঁধ দিয়ে ইজারা নিয়ে মাছের চাষ করে তাদেরও বোঝায়। নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলাতে প্রায় চারশজন পুরুষ জেলে আছেন, কিন্তু সরকারি হিসেবে ১২,০০০ মৎস্যজীবীদের তালিকা তৈরি হয়েছে। যাদের সারাজীবন ঘাটের পানি আর হাটের চালের সাথে কারবার মূলত তারাই জেলে। তারা জল, জাল ও মাছকে নিজের জীবনের অংশ মনে করে। একটি নদী মরে গেলে, একটি মাছ হারিয়ে গেলে জেলেদের বুকে হাহাকার করে। জেলে জীবন নানা শিক্ষা আর মান্যতার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত, যা একজন মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আশা করা যায় না। মৎস্যজীবী নামে আজ নানা পেশার মানুষ সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে জলাভূমি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে পানির প্রবাহ আটকে দিচ্ছে, মাছের প্রাকৃতিক বিচরণস্থল বিনষ্ট করে দিচ্ছে। নেত্রকোণার আটপাড়ার আটিকান্দা পাচঘস গ্রামের কৃষকেরা ‘মৎস্যজীবী’ হিসেবে সরকার থেকে শুনই হাওরের একটা বড় অংশ ইজারা নিয়ে পানিপ্রবাহ আটকে দিয়েছে। মাছেরা সোমাইখালী কুর থেকে মাছেরা শুনই হাওরে গিয়ে আর নিজেদের কুরের আবাসে ফিরেত পারে না। জলপথ আটকে মাছেদের ধরে বিক্রি করাই এসব মৎস্যজীবীদের অন্যতম উদ্দেশ্য। মাছেদের বংশ ও জলধারার প্রবাহ সুরক্ষা করা নয়। মাছের বৈচিত্র্য ও জেলেদের পেশাগত জীবনের সুরক্ষায় সরকারি নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো জরুরি। জেলে জীবনের দর্শন ও শিক্ষা থেকেই মাছ ও জলাভূমি জীবনের সম্পর্ককে দেখা দরকার।