মানুষের বেঁচে থাকার জন্যই বৈচিত্র্য রক্ষা জরুরি

বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি

DSC00035বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বরেন্দ্র অঞ্চলটি প্রাণবৈচিত্র্য ও বহুসংস্কৃতির বৈভবে একটি অনন্য ঐতিহ্যবাহী আদিভূমি। এখানে রয়েছে নানা জাতিগোষ্ঠীর বসবাস এবং প্রাণ ও প্রকৃতির সহবস্থান। আদিযুগ থেকে ইতিহাস খ্যাত বরেন্দ্র অঞ্চলের রূপ ও বৈচিত্র্য যেমন নানা দুর্যোগে পরিবর্তন হয়েছে তেমনি এই অঞ্চলের মানুষ তা সুরক্ষায় উদ্যোগও গ্রহণ করেছে। আর এই সুরক্ষায় তরুণরাই সবসময় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই অঞ্চলটি অনেক বেশি স্বনির্ভরশীলতায় বিকশিত ছিলো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বরেন্দ্র রূপ ও বৈচিত্র্য ভয়ংকরভাবে কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরির্তনের আঞ্চলিক অভিঘাত এই অঞ্চলের কৃষিপ্রাণবৈচিত্র্যের উপর যেমন আঘাত হানছে তেমনি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ,সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যর উপরও সংকটময় প্রভাব বিস্তার করছে। নানা জাতি গোষ্ঠীর ভাষা, শিক্ষা, লোকায়ত জ্ঞান ও বৈচিত্র্য দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে প্রান্তিক মানুষগুলোর স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের অবলম্বনগুলো আরো সংকোচিত হচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে তরুণ সংগঠনের প্রতিনিধিগণ বরেন্দ্র অঞ্চলের স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে বৈচিত্র্য সুরক্ষার দাবি জানিয়ে সম্প্রতি বারসিককে সাথে নিয়ে সম্মেলন ২০১৭ আয়োজন করেছে ।

গত বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত দিনব্যাপী বরেন্দ্র যুব সম্মেলনে বরেন্দ্র অঞ্চলের গ্রাম ও শহরের ৩২টি তরুণ সংগঠন এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। বরেন্দ্র অঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়নে “শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য, জলবায়ু ও সবুজ জ্বালানি সুরক্ষায় জাগো তারুণ্য, জাগাও জীবন” শ্লোগানে গবেষক , শিক্ষক, উন্নয়নকর্মী, সরকাররি ও বেসরকারি কর্মকর্তা, কৃষক, জেলে, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ নানা শ্রেণী ও পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে তাদের মতামত ও দাবিগুলো তুলে ধরেন।

c+3উক্ত সম্মেলনে বিশেষ বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক অভিজিৎ রায় বলেন, “আমাদের বেঁচে থাকার জন্যেই বৈচিত্র্য রক্ষা জরুরি। কোন অঞ্চলের বা দেশের বিদ্যমান সাংস্কৃতিক ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য ছাড়া সেই সমাজ, দেশ বা অঞ্চলের উন্নয়ন বিকাশ সম্ভব নয়। ” তিনি আরো বলেন, “কিছু উন্নয়ন আপাত দৃষ্টিতে অনেক বড় উন্নয়ন মনে হলেও সেই উন্নয়ন যদি নানা বৈচিত্র্য সুরক্ষার উদ্যোগ না থাকে, তাহলে পরবর্তীতে জনগোষ্ঠীর সংকট তৈরির সম্ভাবনা থাকে।

অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম কনক তাঁর পত্রে বলেন, “ভৌগোলিকভাবেই আমাদের দেশটি অনকে দুর্যোগপূর্ণ একটি দেশ। বাংলাদেশে থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরেই হিমালয় পর্বতমালা, আবার আমাদের সাথেই লাগানো বঙ্গোপসাগর। একদিকে লোনা পানির দুর্যোগ অন্যাদিকে বরফ গলানোসহ আরো কতো দুর্যোগ আমাদের মধ্যে। এরই মধ্যে আবার আমাদের বরেন্দ্র অঞ্চল একটি অন্যবৈশিষ্ট্য সম্পন্ন একটি অঞ্চল।” তিনি মনে করেন বরেন্দ্র অঞ্চলের উন্নয়নে মানুষের মতামতগুলো আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

DSC00116দিনব্যাপী এই সম্মেলনে তরুণরা বিগত দিনের তাদের কাজগুলো উপস্থাপন করেন, অভিজ্ঞজনের পরামর্শ নিয়ে আগামীর পরিকল্পনা নির্ধারণ করেন। সম্মেলনে তরুণরা বরেন্দ্র অঞ্চলের উচু নিচু মাঠ, এলাকার খাল খাড়ি, বিল, পুকুড় ও নদীসহ প্রাকৃতিক জলাধারগুলো সুরক্ষার দাবি করেন। তাঁরা বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি নিশ্চয়তাসহ শিক্ষা , সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যসহ সবুজ জ্বালানি সুরক্ষার দাবি জানান। একই সাথে নিজেরা এই কর্মউদ্যোগগুলো করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

C5সম্মেলন শুরুর আগে তরুণরা একটি উদ্বোধনী র‌্যালি বের করেন। র‌্যালিটি শিল্পকলা একাডেমি থেকে নগরের প্রধান রাস্তা প্রদক্ষিণ করে আবার জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এসে শেষ হয়। দিনব্যাপী উক্ত সম্মেলনে বরেন্দ্র অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে নৃত্য, গম্ভীরা ও নাটক ও সঙ্গীতের আয়োজন করা হয়। একই সাথে তরুণরা বিশ্বের মধ্যে প্রথম রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত ট্রি অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করেন। অন্যদিকে জ্বালানি সুরক্ষা ও জ্বালানি নির্ভরতা কমানো সচেতনতার জন্যে তরুণ সংগঠন ০.৬ জিআরজেড স্পেশাল সাইকেল স্টানশো এর আয়োজন করেন। লোককবি আফাজ উদ্দিন বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রকৃতি ও বৈচিত্র্য নিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শোনান।

বরেন্দ্র যুব সম্বেমলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আহবায়ক মোঃ উজ্জ্বল হোসেন। সম্মেলনে ধারণাপত্র পাঠ করেন বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম। বক্তব্য দেন বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য কেন্দ্রের সভাপতি জাওয়াদ আহমেদ রাফি, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্চের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী, সেভ দ্যা নেচার এন্ড লাইফ সোসাইটির সভাপতি মিজানুর রহমান। দিনবাপী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তরুণদের মধ্যে দেবশ্রী, আখি, আর্নিকা ও মৌসুমী ।

happy wheels 2

Comments