এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে ফয়েজ ফাউন্ডেশন
চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু
পাবনার চাটমোহরের ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম “ধানবিলা”তে প্রতিষ্ঠিত ফয়েজ ফাউন্ডেশন এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি (রেজিঃ নং ১২৫৪৩/১৭) নিরবে নিভৃতে যাত্রা শুরু করে। এ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সমাজ সেবক আবু সালেহ মো. আব্দুল মাজেদ। গত ৬ মার্চ সোমবার দুপুরে সরেজমিন এ ফাউন্ডেশনে গেলে কথা হয় আব্দুল মাজেদের সাথে।
আব্দুল মাজেদ জানান, তাঁর জন্ম বাংলাদেশের পাবনার চাটমোহরের প্রত্যন্ত এলাকা, পিছিয়ে থাকা ধানবিলা গ্রামে। বাবা ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কৃষক ও সমাজকর্মী। তিনি তার জীবদ্দশায় এলাকায় স্কুল, মসজিদ মাদ্রাসা কবরস্থান রেলওয়ে ষ্টেশন স্থাপন ও রাস্তাঘাট নির্মাণে ভূমিকা রেখেছেন। সমাজকর্মে বাবাই তাঁর প্রেরণা।” তিনি বলেন, “আমি ছোট বেলায় আমার পরিবারের, আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশির অভাব দেখেছি। খাদ্য ও সুপেয় পানির কষ্ট দেখেছি। শৈশব থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল সুযোগ পেলে পরিবার সমাজ গ্রামবাসী ও এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘবে সব রকমের চেষ্টা করার। ছাত্রজীবনে এগুলো কেবল কল্পনা ছিল। সাধ্য ছিল না। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পাঁচ বছরের মাথায় আমি আমার এ স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে কাজ শুরু করি।”
আব্দুল মাজেদ বলেন, “২০০৬ সালে এ উদ্যোগকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিই। প্রথমে পারিবারিকভাবে শুরু করলেও পরে যুক্ত করি গ্রামবাসীকে। ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল এলাকার কিছু শিক্ষিত উদ্যোমি ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের মানুষের উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করি “ফয়েজ উদ্দিন কল্যাণ ট্রাস্ট”।” তিনি বলেন, “আমাদের আশেপাশের বাড়িতে এমনকি আমাদের বাড়িতেও কোন নলকূপ ছিল না। বিশুদ্ধ পানির কষ্ট দূর করতে দিনে দিনে প্রায় সাড়ে ৩ শত নলকূপ বিতরণ করি। আমাদের বাড়ির ১০ কিঃ মিঃ এর মধ্যে কোন রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক নেই। পাড়া প্রতিবেশী ও নিকটতম গ্রামের মানুষের চিকিৎসার জন্য এ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একজন চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি প্রতি শুক্রবার এখানে রোগিদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। সেবার পরিধি বিস্তৃত করতে এই প্রতিষ্ঠানের জন্য দুইটি ঘড় নির্মাণ করি।”
সেখানে প্রতিষ্ঠা করি “বাতিঘর” নামক একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। গ্রামের ছেলে মেয়েরা প্রতিদিন বাতিঘরে এসে সংবাদপত্র, সমসাময়িকী পড়ে। পাশাপাশি প্রস্ততি নিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার। এছাড়া শিক্ষিত যুব সমাজ ও এলাকার শিক্ষকেরাও এখানে এসে তাদের পছন্দ মতো বই পড়তে পারছেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ৪০ থেকে ৪৫ জন শিক্ষার্থীকে নিয়মিত শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানে নারীদের সেলাই ও বাটিকের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের জন্য রয়েছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও।
শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষদেও বেকারত্ব দূর করতে এবং প্রান্তিক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল ফয়েজ ফাউন্ডেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে “Entrepreneur Development Centre (EDC)” নামক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সূচনা করে। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেকার ও প্রান্তিক মানুষকে স্বাবলম্বী করতে পরামর্শ সেবা, সংগঠিতকরণ, তথ্য সেবা ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে বিজনেস ইনকিউবেটর। ৪০ জন প্রান্তিক মানুষকে ব্যবসার মাধ্যমে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে “স্মার্ট হকার” ও “স্বপ্নফেরী” নামক দুটি প্রকল্প হাতে নিয়ে তাদেরকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
অরাজনৈতিক এ প্রতিষ্ঠানটির সাথে সম্পৃক্ত মানুষগুলো সন্ত্রাস নির্মূল, মাদকবিরোধী আন্দোলন, বাল্যবিবাহ রোধ ও পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করছে। আব্দুল মাজেদ-এর ব্যক্তিগত আর্থিক অনুদানে চলছে ফয়েজ ফাউন্ডেশনের উল্লেখিত কার্যক্রম।
তিনি জানান, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তিনি এসকল কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তাদের গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় একখন্ড জমি দান করেছিলেন। সেখানে তাঁর বাবার নামে “ধানবিলা ফয়েজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়” নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কোমলমতি শিশুরা সেখানে শিক্ষা গ্রহণ করছে। তিনি বলেন, “কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমাদের সাহায্য করলে আমরা তা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করবো।”
গত ৬ মার্চ মঙ্গলবার চাটমোহরের মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের সাথে ফয়েজ ফাউন্ডেশনে গেলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়। কয়েকজন নারীকে সেদিন সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের বাতিঘড়ে পড়ালেখা করতে, অন্যরুমে অন্যদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণরত ও মহিলাদের সেলাইয়ের কাজে লিপ্ত থাকতে দেখা যায়। এ ফাউন্ডেশন এর অগ্রযাত্রা ও সুফল উৎসাহিত করতে পারে অন্যদেরকেও।