রোগ নিরাময়ে মহাঔষধী তুলসী
সাতক্ষীরা থেকে সোনিয়া আফরোজ
সর্দি-কাশি সমস্যায়, দাঁতে পোকা লাগলে, চুলকানি সমস্যায়, কানের ব্যাথা ও যন্ত্রণায়, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় এবং প্রসব বেদনা কমাতে তুলসী পাতা ও এর বীজ মহাঔষধি হিসেবে কাজ করে। এছাড়া প্রসাবের সমস্যায়, ব্রুণ বা মেছতার দাগ দূর করতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় কার্যকরি ভূমিকা পালন করে তুলসী পাতা।
চলার পথে, গ্রামে-গঞ্জে, বাড়ির আনাচে-কানাচে তুলসী গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তুলসী ঘন শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট ২-৩ফুট উঁচু একটি চিরহরিৎ গুল্ম জাতীয় গাছ। এর পাতা ও কাণ্ড সবুজ। পাতার কোনাগুলো খাঁজ কাটা খাঁজ কাটা। তুলসী শুকনো ও জলজ দুই পরিবেশেই টিকে থাকতে পারে।
তুলসী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। বনৌষধির মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট বলে ‘মেটেরিয়া মেডিকাতে’ তুলসীকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সনাতন ধর্মের মানুষ তুলসীকে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে পূজা করেন।
এ ব্যাপারে ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি মণ্ডল বলেন, “তুলসী গাছ আমরা পূজার কাজে ব্যবহার করি। আমরা মনে করি তুলসী গাছ পবিত্রতার প্রতীক। তুলসী পাতার রস সামান্য মধুর সাথে মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ালে সর্দি-কাশির উপশম হয়।”
একই গ্রামের বাসিন্দা মো. কফিল উদ্দীন আহমেদ বলেন, “তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে দাঁতে পোকা লাগে না। এছাড়া দাঁত উজ্জ্বল ও মজবুত হয়। দাঁতের আয়ু বৃদ্ধি পায়। দাদ বা চুলকানি সমস্যায় তুলসী পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে লাগালে ভালো উপকার পাওয়া যায়।”
পাইগাছা উপজেলার শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আফায উদ্দীন বলেন, “তুলসীর পাতা পানিতে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ পর ঐ পানিতে গোসল করলে চর্মরোগে ভালো উপকার পাওয়া যায়। কানের ব্যাথা ও যন্ত্রণায় তুলসী পাতার রস সামান্য গরম করে দিলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।”
তিনি আরও বলেন, “মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে তুলসী পাতার জুড়ি নেই। শীত মৌসুমে প্রতিদিন সকালে ২-৩টি তুলসী পাতা খালি পেটে চিবিয়ে খেলে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভালো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া তুলসীর বীজ প্রসব বেদনা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।”
সাতক্ষীরা শহরের পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দুস বলেন, “সকাল বেলা খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে মুখের রুচি বাড়ে। ব্রুণ বা মেছতার দাগ দূর করতে তুলসী পাতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতার রস নিয়মিত খেলে লিভার ভালো থাকে। এর বীজ গুড়ো করে খেলে প্রসাবের সমস্যায় ভালো উপকার পাওয়া যায়। তুলসী পাতার রস কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ উপশমে ব্যাপক কাজে দেয়।”
মুক্তকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ‘তুলসীর বৈজ্ঞানিক নাম Ocimum Sanctum। এর ইংরেজি নাম Holy Basil। এটি Lamiaceae প্রজাতির একটি উদ্ভিদ। এর কাণ্ড চার কোনাকার। পাতা সরল এবং অনেকটা ডিম্বাকৃতির। তুলসী গাছে শীতকালে ফুল ও ফল হয়।
তুলসীর মূল ও কাণ্ড কাষ্ঠল প্রকৃতির। পাতা ২-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। পাতার কিনারা খাঁজকাটা। শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগ থেকে ৫টি পুষ্পদণ্ড বের হয়। প্রতিটি পুষ্পদণ্ডের ১০-১২টি স্তরে ফুল থাকে। এর পাতা, ফুল ও ফলে ঝাঝালো এক ধরনের গন্ধ আছে। বাংলাদেশে বাবুই তুলসী, রাম তুলসী, কৃষ্ণ তুলসী ও শ্বেত তুলসী এই চার প্রকার প্রজাতির তুলসী পাওয়া যায়। সচরাচর শ্বেত তুলসী বেশি দেখা যায়।”
সব মিলিয়ে তুলসী গাছের সবটুকুই উপকারি। এর পাতা যেমন উপকারি তেমনি এর ফলও উপকারি। তুলসী পাতার সঠিক ব্যবহার করে পারিবারিকভাবে ওষুধের চাহিদা অনেকটাই মেটানো সম্ভব।