বর্ণিল আয়োজনে আলোমতির জন্মদিন উদযাপন
মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার
মানিকগঞ্জে বসবাসরত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের গুরুমা আলোমতির ৬০তম জন্মদিন নানা আয়োজনে, নানা আড়ম্বরে পালিত হয়েছে। বারসিক, উদীচি এবং পাশা যৌথভাবে এই আয়োজন করে। সমাজে “হিজড়া” বলে যারা পরিচিত তাদের জন্য আজ ছিল অন্যরকম দিন।
“আলোমতি” যার জন্ম ফরিদপুর জেলায়। ৩ বোন ১ ভাইয়ের মধ্যে আলোমতি সবার বড়। আলোমতির ভাষ্য -“যখন পবিারের সবাই জানতে পারলো আমি হিজরা তখন আমাকে আমার মা-বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিল। তারা ভাবলো আমি বাড়িতে থাকলে আমার অন্য দুই বোনের বিয়ে হবে না। কারণ সবাই ভাববে হিজড়ার বোন সেও যদি হিজড়া হয়। সমাজের মানুষের ভয়ে আমার আপনজনেরা আমাকে পর করে দিল। তখন থেকে আমি হিজড়াদের সাথে থাকছি।” তিনি আরও বলেন, “প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে আমি মানিকগঞ্জে আছি। মানিকগঞ্জের পশ্চিম দাশড়া গ্রামে আমরা ১২ জন একসাথে থাকি। বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন জন থাকে। মানিকগঞ্জ জেলায় ৮০ জনের মত হিজড়া আছে। মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলায় ৭ জন দলনেতা আছে। আমি এই জেলার দলনেতা। সবাই আমাকে ভালোবেসে “গুরুমা” বলে ডাকে।” তিনি বলেন, “আজ আপনারা আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন তা আমি কোনদিন কারো কাছ থেকে পাইনি। এটা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি চাই আমার মত যারা আছে তাদের ও এইভাবে জন্মদিন পালন করা হোক। আর সরকারের কাছে আমার দাবি আমরা যেন সবার মত আমাদের অধিকার ও মর্যাদার সাথে বাঁচতে পারি সেই সুযোগ যাতে সরকার আমাদের দেয়।”
তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীদের দেওয়া উপহার আংটি মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিম আলোমতির হাতে পরিয়ে দেন। এরপর সকলের উপস্থিতিতে কেক কাটা হয়। মেয়র তার বক্তব্যে বলেন, “এমন আয়োজন করার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেইসাথে জানাচ্ছি মানিকগঞ্জে যত জন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী আছে সবার জন্মদিন আমরা যৌথভাবে পালন করবো। শুধু আমাকে জন্ম তারিখটা আপনার জানাবেন।” এরপর মেয়র উপহারস্বরূপ আলোমতিকে ৫০০০ টাকা প্রদান করেন। উপস্থিত অনেকেই আলোমতির হাতে জন্মদিরে উপহার তুলে দেন।
আয়োজনের মধ্যে আরও ছিল উদীচি ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আলোমতির জন্মদিনে উপস্থিত ছিলেন, মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী কামরুল হুদা সেলিম। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু, উদীচির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মামুন, বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায়, সাংবাদিক আব্দুল মোমিন, ডা. ফজলুর রহমান, ঊর্মিলা রায়।