উপহারের ফল

রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম শহিদ

উপহারের ফল পেয়েছেন রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল গ্রামের নারীরা। ২০১৬ সালে রিশিকুল গ্রামের নারীরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়া মেলার। সেখানে ৩০ জন নারী অংশগ্রহণ করেছিলেন। গ্রামীণ এই মেলায় তারা অচাষকৃত শাক সবজির পরিচিতি ও গুনাগুণ সম্পর্কে জেনেছেন। মেলায় অংশগ্রহণ করার ফলে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন একটি করে দেশীয় ফলের চারাগাছ। সেই চারাগাছ আজ ফলদায়ক গাছে পরিণত হয়েছে। সেই অংশগ্রহণকারীদের বাড়ি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ১৮ জনের পেয়ারা গাছে ফল ধরেছে। তারা সেখান থেকে পেয়ারা ফলের চাহিদা পূরণ করছেন। ছেলেমেয়েরা খাচ্ছে এবং নিজের আত্মীয়স্বজনদের মাঝেও বিতরণ করছেন।

IMG_20151005_051029
পৃথিবীতে উপহার অনেক ধরনের হয়ে থাকে। কিন্তু এই উপহার ছিল ব্যতিক্রম। অন্যান্য উপহার ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ও সুনাম অর্জনে সহায়তা করে। যেখানে রাখা হয় সেখানেই থাকে একই রকম থাকে তার বৃদ্ধিও হয়না উপকারিতাও বাড়েনা। সুনামের ক্ষেত্রে হয়তো প্রভাব পড়তে দেখা যায়। নিজের উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আজ কাল উপহার পাওয়াও বিরল। কিন্তু তারা বাস্তবায়ন করে ফলও পেয়েছেন।

IMG_20151005_051457
এ প্রসঙ্গে আসলিমা খাতুন (৩০) বলেন, ‘অচাষকৃত শাকের মেলা হতে পারে কোন দিন দেখিনি ও শুনিনি। আমরা অতীতে মাঠ থেকে শাক তুলে তুলে খেতাম। কিন্তু এই মেলায় অংশগ্রহণ করে আরও অন্যান্য অচাষকৃত শাকের নাম জেনেছি এবং গুনাগুন সম্পর্কেও বুঝেছি। ব্যতিক্রম এই মেলায় প্রতিযোগী হিসেবে অংশগ্রহণ করে আনন্দই পেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মজার বিষয় আমার বাড়িতে কোন পেয়ারা গাছ ছিলনা। আমার ছেলে মেয়েরা অন্যের গাছের ফল দেখে বায়না ধরতো। কিন্তু গ্রাম এলাকায় পেয়ারা কেনার মত বাজারও ছিলনা যে, আমার বাচ্ছাদের কিনে খাওয়াবো। সেই আশা আমার পূরণ হয়েছে। আজ আমি নিজ হাতে পেয়ারা পেড়ে আমার সন্তানদের হাতে তুলে দিতে পারছি।’

IMG_20151005_051815
সুলতানা (৫২) বলেন, ‘আমার গাছটির পেয়ারা তুলনামুলক বড় হয়। আমি রোপণ করার পর যখন থেকে ফল ধরা শুরু হয়েছে, তখন থেকে আমাকে আর পরিচর্যা করতে হয়না। কারণ আমার নাতি নাততিরাই পরিচর্যা করে থাকে। গাছের ফলগুলো এক একজন পলি প্যাকেট দিয়ে মুড়িয়ে দখল করে রাখে। একজনের মুড়িয়ে রাখা ফল তারা অন্য কাউকে খেতে দেয় না। পরিপক্কতা পেলে তারা গাছ থেকে পেড়ে খায়। এ আনন্দের অনুভূতি অন্য রকম, যা অন্য কাউকে বুঝানো কঠিন। ছোট্ট একটি উপহার এত বড় প্রভাব ফেলবে বা ফেলতে পারে তা কখনো ভেবে দেখিনি। আমি আরও একটি বেদেনা গাছ পেয়েছি সেই গাছটিতে ফুল ধরা শুরু হয়েছে।’

IMG_20151005_051039
এই উপহারের সাথে সকলের এক ধরনের রূপকথা তৈরি হয়েছে। একটি গাছ মানুষের পারিবারিক জীবনে কি ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে সেটার কিছু দৃশ্য উঠে এসেছে। একই সাথে আমাদের বাচ্ছাদের পুষ্টির চাহিদা পূরুণ করে যাচ্ছে। গাছের সাথে আমাদের অক্সিজেন ও কার্বনডাই অক্সাইড আদান প্রদান তো জীবন মরণের সম্পর্ক। গাছ ছাড়া কোন প্রাণির জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এই সাথে জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উঞ্চতার নেতিবাচক প্রভাব থেকে সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। তাই যে কোন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে গাছ রোপণের মত মহৎ বিষয়টি আমাদের মনে প্রাণে ধারণ করা একান্ত প্রয়োজন।

happy wheels 2

Comments