শুষ্ক ত্বক ময়েশচারাইজ করে অ্যালোভেরা

সোনিয়া আফরোজ, সাতক্ষীরা থেকে

অ্যালোভেরা একটি সবুজ উদ্ভিদ। বর্তমানে এটিকে বিভিন্ন স্থানে জন্মাতে দেখা যায়। এটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি এতে রয়েছে নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ। ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতে, শুষ্ক ত্বক ময়েশচারাইজ করতে, কাঁটা ও পোড়া স্থানের ব্যথা কমাতে, চুলে পুষ্টি যোগাতে অ্যালোভেরা ওষুধের মতো কাজ করে। এছাড়াও অ্যালোভেরা জুস খেলে হজমগত সমস্যা দূর হয়, শরীরের বাড়তি মেদ ঝরে গিয়ে দুর্বলতা কমায় এমনকি এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

অ্যালোভেরা মূলত মরু অঞ্চলের একটি উদ্ভিদ। এটি প্রায় এক-দুই ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর পাতা অনেক বেশি রসাল। এর পাতা সাদা জেলীর ন্যায় এক ধরণের পদার্থে পরিপূর্ণ থাকে।

Alovera Feature 1

অ্যালোভেরা উদ্ভিদের পাতা খাঁজকাটা খাঁজকাটা প্রকৃতির হয়। এটি কলাগাছের মতো বংশবিস্তার করে থাকে। গাছের গোড়া থেকে সাকারের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে।

পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘৃতকুমারীর বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ওয়েস্টইন্ডিজ দীপপুঞ্জে ঘৃতকুমারী চাষ করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বাগানে চাষ করা হয়।

অ্যালোভেরোর বাংলা নাম ঘৃতকুমারী। অধিকাংশ মানুষের কাছে এটি অ্যালোভেরা নামে অধিক পরিচিত। অ্যালোভেরার অনেক স্থানীয় নাম রয়েছে। যেমন: ঘৃতকুমারী, ঘৃতকাঞ্চন, ঘৃতকমল, ঘৃতকচু ইত্যাদি। তবে সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষ এটিকে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী নামে চেনে।

Alovera Feature 2

বাংলাদেশের মানুষ মনে করেন ঘৃতকুমারী শুধুই প্রসাধনী শিল্পে ও ত্বক পরিচর্যার কাজে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এটি একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এর রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ।

এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলার শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আফায উদ্দীন বলেন, “ঘৃতকুমারী আলসার রোগীদের জন্য ভালো পথ্য। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করা কমাতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ঘৃতকুমারীর জুস খেলে হজমগত সমস্যা দূর হয়। এতে শরীরের মেটাবলিজম ঠিক থাকে।”

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাসরিন আক্তার বলেন, “অ্যালোভেরা পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এটিকে ভিটামিনের আধার বলা হয়। এতে রয়েছে ভিটামিন A, C, E, B1, B2, B3, B12 এবং Folic acids। অ্যালোভেরা অনেক প্রকার ভিটামিনের ঘাটতি থেকে আামাদেরকে মুক্তি দিতে পারে। অ্যালোভেরা ২০ প্রকার ভিন্ন ভিন্ন খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ যা আমাদের হাড়কে মজবুত রাখতে সহায়তা করে।”

Alovera Feature 4

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. কফিল উদ্দীন বলেন, “কাটা ও পোড়া স্থানের ক্ষত সারাতে এটি খুবই উপকারী। এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল অ্যান্টিভাইরাল উপাদান যা বিভিন্ন চর্মরোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। ঘৃতকুমারী শুষ্ক ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক আদ্র থাকে। এটি চুলে পুষ্টি যুগিয়ে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মেয়েরা ঘৃতকুমারী জেল দিয়ে রূপচর্চা করেন কারণ এটি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। হাত-পা জ্বালা করলে ঐ স্থানে অ্যালোভেরার প্রলেপ লাগালে জ্বালা-পোড়া অনেকাংশে কমে যায়।”

উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের তথ্য মতে, ‘ঘৃতকুমারী উদ্ভিদটি Liliaceae গোত্রের একটি উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Aloe indica। ঘৃতকুমারী ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। ঘৃতকুমারীর শাঁস প্রতিদিন খেলে যকৃতের রোগ ভালো হয়। এটি প্রসাধনী শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ঘৃতকুমারীর জেলে সামান্য পরিমাণ উদ্বায়ী তেল ও রজনও থাকে।’

ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ অ্যালোভেরা অনেকাংশে পারিবারিক ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে থাকে সকল প্রকার ত্বকের সমস্যা দূর করে আমাদেরকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সহায়তা করে। এজন্য পারিবারিক বাগানে বা বাড়ির আঙিনায় অ্যালোভেরা লাগান উচিত।

happy wheels 2

Comments