হৃদপিণ্ড সচল রাখে আঁশফল
বাহলুল করিম, সাতক্ষীরা থেকে
আঁশফল বর্ষা মৌসুমের মিষ্টি স্বাদের একটি ফল। থোকায় থোকায় লিচুর মতো গাছে ঝুলে থাকে। দেখতে লিচুর মতো হলেও আকারে অনেক ছোট। হৃদপিণ্ড সচল রাখতে, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে, পেটের অসুখ দূর করতে, শরীরের ক্লান্তি দূর করতে, দেহের ক্ষয়পূরণে, অতিরিক্ত ওজন কমাতে আঁশফলে রয়েছে নানবিধ কার্যকরী গুণাগুণ। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট নানা ধরণের সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে দেহকে শক্তিশালী করে। শিশুদের কাছে এটি খুবই একটি প্রিয় ফল।
গ্রাম-গঞ্জে, আগান-বাগানে, রাস্তার পাশে আঁশফল গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এটি মাঝারি আকারের চিরসবুজ এক ধরণের বৃক্ষ। গাছ ছয়-আট মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর শাখা-প্রশাখা খুব বেশি বিস্তৃত হতে পারে না। এর কাণ্ড শক্ত প্রকৃতির হয়। আঁশফলের পাতার অগ্রভাগ সুচালো। পাতা অপরিণত অবস্থায় হালকা সবুজ ও পরিণত অবস্থায় গাঢ় সবুজ বর্ণ ধারণ করে। একটি কাণ্ডে অনেকগুলো পাতা একসাথে থাকে। পাতার শিরা-উপশিরাগুলো বাইরে থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। আঁশফল ও লিচু গাছে ফল একই সময়ে ধরে। ফলের উপরিভাগ মসৃণ। ফলের বাদামি রঙের ও গোলাকৃতির হয়ে থাকে। ফল শক্ত খোসা দ্বারা আবৃত থাকে। ফলের শাঁস সাদা, কচকচে ও রসালো প্রকৃতির হয়। ফল অপরিণত অবস্থায় পানসা ও পরিণত অবস্থায় খুব মিষ্টি স্বাদের হয়।
আঁশফলের বীজ গোলাকার ও চকচকে কালো রঙের হয়। শাঁস বীজকে আবৃত করে রাখে। শাঁস সহজেই বীজ থেকে আলাদা করা যায়। সাধারণত আগস্ট মাসের শেষার্ধ থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধে আঁশফল আহরণ করা হয়। সাতক্ষীরা অঞ্চলে এর স্থানীয় নাম আঁশফল। সাতক্ষীরার বাইরে অনেকে আবার এটিকে কাঠ লিচু বা লংগান নামে চেনে। আঁশফলে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ভিটামিন ‘সি’সহ নানাবিধ ওষুধি গুণাগুণ রয়েছে। এ ব্যাপারে সদর উপজেলার কাটিয়া সরকার পাড়ার বাসিন্দা নার্গিস আক্তার বলেন, “আঁশফল বাচ্চাদের খুবই প্রিয় একটি ফল। বাচ্চারা আঁশফল পেলে খুবই আনন্দিত হয়। আঁশফল খেতে খুব মিষ্টি। এছাড়া পেটের নানা ধরণের অসুখ দূর করতে ও শরীরের ক্লান্তি দূর করতে আঁশফল কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।”
সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. কফিল উদ্দীন বলেন, “আঁশফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও শর্করা রয়েছে। যা শরীরের ক্ষয় পূরণে কর্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া আশফল নানবিধ সংক্রামক রোগ থেকেও রক্ষা করে।” এ ব্যাপারে শহরের পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দুস বলেন, “আঁশফল খেতে খুব সুস্বাদু। শরীরের অতিরিক্ত ওজন ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে আঁশফল ওষুধের মতো কাজ করে। এছাড়া হৃদপিণ্ড সচল রাখতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে আশফল। আঁশফল নিয়মিত খেলে শরীরের ক্ষয়রোধ হয়।”
বিশ্ব মুক্তকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ‘কাঠলিচুর বৈজ্ঞানিক নাম Dimocarpus longan। এর ইংরেজি নাম longan ও dragon। কাঠলিচু এক প্রকার লিচু জাতীয় সুস্বাদু ফল। এটি লংগান বা আঁশফল নামেও পরিচিত। এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদ্ভিদ।
কাঠলিচু মধ্যম আকারের চিরসবুজ গাছ যা ছয়-আট মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এটি তুষার সহ্য করতে পারে কম। বেলেমাটি এই গাছের জন্য ভালো। শীতল অঞ্চল এর জন্য ভাল নয়। তবে ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে থাকে এমন অঞ্চল এর জন্য উপযুক্ত। স্বল্প সময়ের জন্য তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত নেমে গেলেও এটি তা সহ্য করতে পারে। কাঠলিচু ও লিচু গাছের ফল ধরার সময় একই।