গোদাগাড়ীতে আমনে রহমত, মালতি ও সোনালী পাইজামই কৃষকের পছন্দ
রাজশাহী থেকে মো. জাহিদ আলী
এলাকা উপযোগী দেশীয় ধান চাষ কৃষকের প্রাথমিক পছন্দ হলেও উৎপাদনের হিসাব অনুযায়ী কাঙ্খিত ফসল না পাবার কারণে বরেন্দ্র এলাকার মানুষ উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করতে বাধ্য হন। কৃষকের সাথে ধারাবাহিক আলোচনায় অংশ হিসেবে তারা দেশীয় প্রজাতির ধান জাত তুলনামূলক ফলন কম হলেও তা চাষ করতে আগ্রহী। কারণ হিসেবে তারা জানান এই জাতগুলোতে পানি ,সার ও সময় কম লাগে। উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম হয়।
কৃষকের এরূপ চাহিদার আলোকে চলতি আমন মৌসুমে এলাকা উপযোগী ধান জাত নির্বাচনের লক্ষ্যে বারোটি ধানজাত তথা মালতি, জেসমিন, সোনালী পাইজাম, পাইজাম, রাজলক্ষী বিলাস, চানমুনি, বৌ সোহাগী, নারী পারিজাত, রহমত, সিলেট বালাম, গোলাপী ও চিটাগাং ইরি নিয়ে বড়শিপাড়া গ্রামের কৃষক হাসান হাবিব বাচ্চুর নেতৃত্বে প্রায়োগিক কৃষি গবেষণার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। আমন মৌসুমে এলাকায় অন্যান্য ধান জাত চাষাবাদের সময়কালীন এই ধান জাতগুলো বীজতলা থেকে পরীক্ষণ প্লটে রোপণ করা হয়।
সম্প্রতি ধান জাত গবেষণা কার্যক্রমের মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবর রহমানসহ এলাকায় আগ্রহী কৃষকগণ। মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে বারোটি ধান জাতের মধ্যে তিনটি ধান জাত কৃষকরা এই এলাকার জন্য পছন্দ করেন। এগুলো পছন্দের কারণ হিসাবে তারা উল্লেখ করেন এই জাতগুলোর শীষের গাঁথুনী ভালো। দানার সংখ্যা বেশি, গাছগুলোর উচ্চতা এলাকার অন্যান্য উচ্চ ফলনশীল ধান জাতের মতো।
মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মজিবর রহমান বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে এলাকা উপযোগী ধান জাত নির্বাচনের উদ্যোগ এলাকার মানুষের দেশীয় জাত চাষবাদ করতে আগ্রহী করবে। উপযুক্ত জাত পেলে কৃষক তা আবাদ করতে উদ্যোগী হবে।’ তিনি নির্বাচিত তিনটি জাত ছাড়াও চিটাগং ইরি জাতটি পছন্দ করেন, তিনি মনে করেন এই জাতটি লম্বায় একটু বড় হলেও এর ধানের গাধুনী ভালো এবং মাটিতে পড়ে যায় না।
মাটিকাটা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল আওয়াল রাজু বলেন, ‘দেশীয় ধান জাতের বড় সমস্যা এগুলো আকারে বড় হয় এবং বাতাস জোরে হলেই পড়ে যায়। কিন্তু এই পরিক্ষণ প্লটের ৫/৬টি জাত আছে যেগুলো এই এলাকায় হবে। তবে যে জাতগুলো কম সময়ে হয়েছে ফলন ভালো সেগুলোই এলাকার জন্য নির্বাচন করা উচিত।’
এলাকার অন্যান্য কৃষকদের মতে, নির্বাচিত তিনটি জাত ছাড়াও জেসমিন, রাজলক্ষ্মী বিলাস, চিটাগাং ইরি জাতগুলো ফলন ভালো তবে তুলনামূলকভাবে আকারে বড়। সেই হিসেবে তারা রহমত, মালতি ও সোনালি পাইজাম জাতগুলো আগামীতে নিজেরা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করতে আগ্রহী এবং বীজ রাখার জন্য কৃষক হাসান হাবীব বাচ্চুকে চাহিদা প্রদান করেন।