সেলাইয়ের কাজ শিখে এখন স্বাবলম্বী প্রণতি সরকার
নেত্রকোনা থেকে আলপনা নাফাক
কলমাকান্দার খারনৈ ইউনিয়নের গোবন্দিপুর বাজারে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন প্রণতি সরকার। স্বামী সুবল সরকার বাজারে সেলুনে কাজ করেন। তাদের তিন সন্তান। বড় ছেলে নবম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে এবং ছোট ছেলের বয়স ৩ বছর। প্রণতি সরকার ২০১৪ সালে বারসিক’র সহযোগিতায় সেলাই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি একটি পুরাতন সেলাই মেশিন কিনে সেলাই কাজের সাথে যুক্ত হন।
প্রথমে তিনি নিজের কাজগুলো করতেন চর্চার জন্য। সংসারের কাজকর্ম সেরে তিনি বসে পড়েন সেলাই কাজে। তাঁর এই কাজ দেখে তাঁর বাসার আশপাশের নারীরা সেলাই করানোর জন্য কাপড় নিয়ে আসেন তাঁর কাছে। নারীদের সব ধরনের এবং বাচ্চাদের নিমা, ফ্রক, প্যান্ট ইত্যাদি সেলাই করেন। বাজারে যে দামে লোকেরা জামা কাপড় সেলাই করতেন তার চেয়ে কিছু কম দামে তিনি সেলাই করতেন। এর ফলে অনেকে তাঁর কাছে ছুটে আসতে থাকেন সেলাই করার জন্য। গ্রামের নারীরা বর্তমানে বাজারে পুরুষ দর্জির কাছে না গিয়ে প্রণতি কাছে আসেন তাদের জামা-কাপড় সেলাই করার জন্য। কারণ তারা তার কাজে সন্তুষ্ট এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
প্রণতি সরকারে এলাকার নারী ও পুরুষের কাজের পাশাপাশি বাজারের দর্জিদের কাছেও কাজ নিয়ে আসেন। তাঁর সেলাইয়ের হাত ভালো হওয়ায় বাজারের অনেক দর্জিই তাকে সেলাইয়ের কাজ দিয়েছেন। তাঁর এমন কর্মব্যস্ততার পরও তিনি আরও একটি কাজ যুক্ত করেছেন্ সেটি হলো পাপোস বানানো। বাজারের কাপড়ের দোকান থেকে টুকরা কাপড় সংগ্রহ করে তৈরি করেন সুন্দর সুন্দর পাপোস।
পাপোসও তিনি ভালো দামে বিক্রি করছেন এখন। সেলাইয়েরর টাকা ও পাপোস বিক্রির টাকা দিয়ে সংসারের খরচ ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচও এখন চালাতে পারছেন। এই প্রসঙ্গে প্রণতি সরকার বলেন, ‘আগে যেকোন দরকারে টাকা লাগলে স্বামীর কাছ থেকে টাকা চাইতে হতো এখন আর চাইতে হয় না বরং স্বামীকে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই টাকা দিয়ে একটি রাইস কুকার, গ্যাসের চুলা, কাপড় ইস্ত্রি দেওয়ার মেশিন কিনেছি। দুই বছর যাবৎ আমার টাকায় বাসা ভাড়া বিদ্যুৎ বিল দিয়ে আসছি। এখন আমি আগের অবস্থা থেকে অনেক ভালো আছি এখন আমার কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। সারাদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি।’