আবুল কালামের সমন্বিত কৃষি
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমি
প্রকৃতি তার অকৃপণ হাতে এদেশে তৈরি করে দিয়েছে কৃষিবান্ধব এক পরিবেশ। প্রকৃতগতভাবে কৃষির জন্য সমৃদ্ধ নেত্রকোনা অঞ্চল। ছোট এই জেলাতে দেখা যেত বৈচিত্র্যময় ধানের সমাহার। তবে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও হাইব্রিড বীজনির্ভর বাণিজ্যিক কৃষি আসার পর থেকে স্থানীয় ধান, সবজি, মাছ, প্রাণীসহ সকল প্রাণবৈচিত্র্য আজ বিপন্ন। উন্নত কৃষির নামে আমাদের কৃষকদের আপন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় গড়া স্বনির্ভর, পরিববেশবান্ধব, কৃষকনিয়ন্ত্রিত কৃষিকে করে তোলা হয়েছে সার-বিষনির্ভর যেখানে কৃষকের দীর্ঘদিনের জ্ঞান অভিজ্ঞতাকে করে তোলা হয়েছে মূল্যহীন। তবে এত বিপন্নতা আর বিনাশের মাঝেও এখনও নেত্রকোনা অঞ্চলের কৃষকেরা বৈচিত্র্যময় শস্যফসল চাষ করে এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করে স্বনির্ভর কৃষিব্যস্থাসহ প্রাণবৈচিত্র্যকে সংরক্ষণে করে যাচ্ছেন নিরন্তর প্রচেষ্টা।
এই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় কৃষকরা কৃষক আবুল কালামের নেতৃত্বে গত ২০১৭ সালে ২০টি ধানের জাত নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। মাঠ দিবসের মাধ্যমে বাছাই করেন স্থানীয় জাত মালশিরা। এই ধান আশুজিয়া কৃষকদের এখন পছন্দের ধান। আশুজিয়া, নগুয়া, পাড়াদুর্গাপুর, সিংহের গাও, ভুগিয়া,বগবতী পুর গ্রামের ১৩ জন কৃষক ১৫০ কাঠা জমিতে এ ধান চাষ করছেন। কৃষকেরা মালশিরা ধান চাষ করে অনেক খুশি। অন্যান্য ধানের চেয়ে মালশিরা ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আবুল কালাম বলেন, ‘এবছর ২০ জন কৃষক আমার কাছে ধানের বীজ চেয়েছে।’
অন্যদিকে কৃষিকে কৃষকের নিয়ন্ত্রণে আনতে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের আশুজিয়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম কৃষকের বীজকে কৃষকের সম্পদ মনে করে ধানের জাত গবেষণা, ধান জাত বাছাই, বীজ তৈরি ও বীজ বর্ধনের কাজ করে যাচ্ছেন। সকল বীজ সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা করার জন্য তিনি গড়ে তোলেছেন একটি বীজ ঘর।
আবুল কালাম বিভিন্ন ধান ও সবজির বীজ তাঁর মাঠ থেকে সংগ্রহ করেন। এসব বীজ তিনি মাটির পাত্রে, বোতলে, কলসীতে সংরক্ষণ করেন। তিনি এই বীজ গ্রামের অন্য কৃষকদেরকে মাঝেও বিতরণ করেন। তাঁর বাড়ির আঙ্গিনায় পাঁচ শতাংশ জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন সবুজ বাড়ি। এ জমিতে সারাবছরই তিনি ডাটা, লালশাক, ধুন্দল, বেগুন, চালকুমড়া, মরিচসীম, শীতলাউ, মিষ্টিলাউ, ঝিঙ্ঘা, চিচিঙ্গা, করলা, শশা, পেপে, পুঁই, আলু, চাষ করেন। তিনি সেখানে একটি স্থায়ী মাচা তৈরি করেছেন। সারাবছরই একটি না সবজি সেই মাচায় থাকে। ঘরের দরজার পাশে আছে বারোমাসি বেগুন ও মরিচ।
সবজি চাষের পাশাপাশি তিনি প্রাণীসম্পদ পালন করেন। তাঁর ঘরে আছে মোরগের কুপ সেখানে আছে সাতটি মোরগ-মুরগি, তিনটি হাঁস, গোয়ালে আছে তিনটি গাভী, চারটি ছাগল। বাড়ির পাশেই তিনি গর্ত ও কেচোঁ কম্পোস্ট করেছেন। তা দিয়ে তিনি ধান পাট, গম, সবজি চাষ করেন।