অচাষকৃত খাদ্য বাজারে চাহিদা বেশি
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
হরিরামপুর চরাঞ্চল লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে পাটগ্রামচরের মজিবর রহমানের বয়স ৪০। হরিরামপুর চরাঞ্চলে রয়েছে অনেক পতিত জমি, যেখানে কোন ধরনের ফসল হয় না। এছাড়া বাড়ির আনাচে কানাচে, রাস্তার পাশ দিয়ে পতিত জায়গায় ও খাল বিলের ধারে জন্ম নেয় অসংখ্যা অচাষকৃত খাদ্য উদ্ভিদ। যেমন কালো কচু, সাদাকচু, কচুর লতা, কলমি শাক, তেলাকুচা শাক, কাটা নইটা, দেল নইটা, হেনছি শাক, মান কচু, ফেন কচু, মাচ আলু গাছ আলু, খানমান পাতা, শাপলা ফুল, শালুক নানা ধরনের উদ্ভিদ যা মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এসব অচাষকৃত উদ্ভদের সন্ধানে দিন কাটে পাটগ্রাম চরের মজিবরের। প্রতিদিন দুপুর থেকে মাঠে সংগ্রহ করতে নামেন এ সকল খাদ্য উদ্ভিদ। আর পরের দিন সকালে পদ্মা নদী পারি দিয়ে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে তা বিক্রি করেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিনশত পঞ্চাশ থেকে চারশত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। আর এই টাকা দিয়ে চলে তার সংসার জীবন।
এই প্রসঙ্গে মজিবর রহমান বলেন, ‘আমি যে সকল কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য বাজারে বিক্রি করি বাজারে সেগুলোর চাহিদা বেশি। কারণ আমি তো সার বিষ দিয়ে চাষ করি না। মাঠে ঘাটে এমনিতে হয়। মানুষ আমার কাছ থেকে কিনতে আসে বেশি। আমি চরের পাটগ্রামচর, হালুয়াঘাটা, নটাখোলা, গঙ্গাধরদি, মেহেন্দিপুর কোল বিভিন্ন জায়গা চক পাথারে থেকে সংগ্রহ করে থাকি। আন্দারমানিক বাজার, লেছড়াগঞ্জ, ঝিটকা, নটাখোলা, নতুনহাট বিক্রি করতে যাই।’
মজিবর রহমানের নিজস্ব জমিজমা নাই, পেশায় দিন মজুরী কাজও করেন। যে দিন কাজ না চলে হতাশ হন না তিনি। প্রকৃতি যেন তার জন্য জীবনধারণের ব্যবস্থা করে রেখে দিয়েছে। প্রকৃতির সাথে রয়েছে তার নিবিড় ভালোবাসা। জীবনধারণের স্বপ্ন যেন মিশে আছে প্রকৃতির সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে পড়ি। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, নদী ভাঙ্গন, পতিত জমির ব্যবহার বৃদ্ধি, চকে (জমিতে) সার বিষ প্রয়োগ, ঘাস মারা ঔষুধ ব্যবহারের ফলে অনেক শাকসবজি দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেই সাথে মানুষের মন মানসিকতা আগের মত নাই, জমির আইল ও আশেপাশে একটু পতিত জায়গা রাখতে চায় না।’
তিনি মনে করেন, অনেক গরিব মানুষ এই অচাষকৃত শাক সবজি চক থেকে যোগার করে রান্না করে খায়। বাজার থেকে কিনতে হয় না। অচাষকৃত উদ্ভিদ শাক নিরাপদ খাদ্য তো বটেই। এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। হরিরামপুরে চরাঞ্চলসহ অন্যান্য চরেও নারীরা বাড়ির আশেপাশে কুড়িয়ে পাওয়া সংগ্রহ করতে দেখা যায়। পাটগ্রাম চরের কৃষাণী সামেলা বেগম বলেন, ‘চরে আমরা শাকসবজি বাজার থেকে কিনতে হয় না। বাড়ির আশে থেকে সংগ্রহ করে এনে রান্না করে খাই । খেতে অনেক স্বাদ লাগে বাজার থেকে কিনতে হয় না।
বারসিক এসব কুড়িয়ে পাওয়া অচাষকৃত খাদ্য সংরক্ষণ করা, এর ব্যবহার ও গুনাগুণ নিয়ে পাড়া মেলা, রান্না প্রতিযোগিতা, নিরাপদ খাদ্য নিয়ে আলোচনা সভা, মতবিনিময়, জনসচেতনতা তৈরিতে বিলবোর্ড প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।