করোনায় অসহায় দলিত জনগোষ্ঠীর পাশে যুব সমাজ

ঢাকা থেকে সৈয়দ আলী বিশ্বাস
করোনা এক মহামারি রূপ নিয়ে আজ সারা দুনিয়ার মানুষের সামনে হাজির। এর প্রভাব থেকে আমরা কেউ মুক্ত নই। এই সময়ে প্রয়োজন নিজেকে ও অন্যদের নিরাপদ রাখতে সামাজিক নয় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। সারা দুনিয়ার মানুষ প্রাণান্ত সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে। মহামারি করোনায়, এরই মধ্যে পৃথিবীর হাজার হাজার মানুষ হারিয়েছে প্রাণ, লক্ষ লক্ষ মানুষ হয়েছে আক্রান্ত, ঝুঁকিতে রয়েছে সকল দেশ-অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষ- পৃথিবী যেন এক বিভীষিকাময় সময় পার করছে। এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র বারবার নিরাপদে ঘরে থাকার কথা বলছে।

এই পরিস্থিতিতে যারা দিন আনে দিন খায়- সেই সমস্ত নিন্ম আয়ের মানুষগুলো পড়েছে চরম খাদ্য সংকটে। কেননা তাদের সারাদিনের আয় দিয়েই মেটে পরিবারের প্রতিদিনের খাদ্য চাহিদা। সরকার বারবার বলছে বাজারে পর্যাপ্ত খাদ্য রয়েছে, দামও রয়েছে নাগালের মধ্যে; কিন্ত বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ না থাকায় যেটি নেই তা হচ্ছে- সেই পণ্য ক্রয়ক্ষমতা। এই পরিস্থিতিতে বিশেষ করে নগরের দলিত জনগোষ্ঠী অসহায় অবস্থায় খাদ্য সংকটসহ চরম অনিশ্চয়তায় দিনযাপন করছে। নগরের দলিত, প্রবীণ ও ভিন্নভাবে সক্ষম জনগোষ্ঠীর অসহায় পরিস্থিতি বিবেচনা করে মানবিক কারণেই শত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কিছু মানুষ যতটা সম্ভব নিজেদের নিরাপদ রেখে দাঁড়িয়েছে মানুষের পাশে।

বারসিকের সার্বিক সহযোগিতায় নেত্রকোনা সম্মিলিত যুব সমাজ- নেত্রকোনার আয় রোজগারহীন অভুক্ত অসহায় দলিত, প্রবীণ ও ভিন্নভাবে সক্ষম জনগোষ্ঠীর মাঝে পৌঁছে দিচ্ছে সাধ্যমত খাদ্য সামগ্রী। সেই সাথে চলমান করোনা মোকাবেলার অন্যতম উপকরণ সাবান, হ্যান্ড সেনিটাইজার ও নিরাপদে থাকার প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শ। নেত্রকোনা সম্মানিত জেলা প্রশাসক মঈন-উল ইসলামের অনুমতি সাপেক্ষে নেত্রকোনা শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য চর্চা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নাজমুল হাসান ও সদস্য সচিব ও সাংবাদিক আল্পনা বেগমের তত্ত্বাবধানে পহেলা এপ্রিল বারসিক ও নেত্রকোনা সম্মিলিত যুব সমাজের সদস্যরা বিশেষ করে আবু হায়দার রনি, পার্থ প্রতীম, মিঠুন, তপতী শর্মা, আব্দুর রব নিজ নিজ দায়িত্বে নেত্রকোনা পৌরসভা এলাকায় ১০০ পরিবারের মঝে ৫কেজি চাল, ২কেজি আলু, ১কেজি ডাল, ১লিটার তেল, ১কেজি লবণ ও সাবান বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌছে দিয়েছেন। সেই সাথে নেত্রকোনা এলাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে সম্মিলিত যুব সমাজের সদস্যদের নিজেদের প্রস্তুতকৃত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ৩০০টি পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছেন। ঢাকা অফিসের পরিচালক এর দিক নির্দেশনায় সার্বিক কর্মপ্রক্রিয়াটি সমন্বয় করেছেন বারসিক নেত্রকোনা রিসোর্স সেন্টারের সমন্বয়কারী অহিদুর রহমান ও সহযোগিতা করেছেন খাদিজা আক্তার লিটা।

করোনার ঝুঁকি বিবেচনায় বর্তমান সময়ে এই কাজটি করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মানবিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই নিজেদের যতটা সম্ভব নিরাপদ রেখে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কোন ধরনের জমায়েত না করে অসহায় পরিবারগুলোর বাড়িতে গিয়ে উপকরণগুলো প্রদান করার সাথে সাথে এই বার্তাটি দিয়ে এসেছেন, “ভয় পেওনা, সতর্ক থেকো, বরাবরের মত আমরা তোমাদের পাশেই আছি”। উল্লেখ্য বারসিকের সার্বিক সহায়তাদান প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে নেত্রকোনা এলাকায় ‘নেত্রকোনা সম্মিলত যুব সমাজ’ ও ‘শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য চর্চা কমিটি’ সংগঠন দুটি তৈরি হয়।

happy wheels 2

Comments