পুকুরে সবজি চাষে আশার আলো দেখছেন তরুলতা গাইন

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল

সবজি চাষের ক্ষেত্রে প্রায় দেখা যায়, বসতভিটা, বাগানে, ঘেরের রাস্তায় কিংবা পুকুর পাড়ে বিভিন্ন স্থানে এসব সবজি চাষাবাদ করা হয়। এভাবে সবজি চাষে অনেক পরিবার সফলও হয়েছেন। তেমনিভাবে স্বল্প পরিসরের জায়গায় মধ্যে পুকুরের মধ্যে গাছের ডাল পুতে, বাঁশ ও ফাঁস জাল দিয়ে মাচান করে সবজি চাষ করে আশার আলো দেখছেন তরুলতা গাইন। তরুলতা গাইন শ্যামনগর উপজেলা্র ভুরুলিয়া ইউনিয়নের কাচড়াহাটি গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের নারী। স্বামী রবীন্দ্র নাথ গাইন শারীরিকভাবে অসুস্থ একজন ব্যক্তি। তাদের ৪ জন মেয়ে বিয়ে হয়েছে। স্বামী অসুস্থ থাকায় তেমন কোন কাজ করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে তরুলতা রানীকে তার সংসারের পুরো দায়িত্ব নিতে হয়েছে। একজন নারী হয়ে পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

তরুলতা রানীর জমি জমা বলতে বসতভিটা ও কৃষি জমিসহ মোট দেড় বিঘা। এর মধ্যে ৮ কাঠা বসতভিটা এবং বাকিটায় ধান চাষ করেন। ৮ কাঠা এ বসতভিটার মধ্যে  প্রায় ৫ কাঠার মতো একটি পুকুর আছে। এ পুকুর পাড়ে এবং পাশের ধনী একটি পরিবারের নিকট থেকে আরো ২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সেখানেও একটি পুকুর করে সেই পুকুরের রাস্তায় বারোমাস মাচা করে বিভিন্ন ধরনরে সবজি চাষাবাদ করেন তরুলতা গাইন। পুকুরের পাড়ের আইলের উপরে যেমন ঢেড়স, কচু, আদা, হলুদ, লালশাক, পালনশাক চাষ করেন। আবার পুকুরের মধ্যে মাচায় বিভিন্ন ধরনের লতানো যেমন লাউ, ঝিঙা, শসা, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, পুইশাক, বরবটি, শিমসহ নানান ধরনের সবজি চাষ করছেন। পাশাপাশি পুকুরে নানান ধরনের স্থানীয় মাছ চাষ করেন।

এই প্রসঙ্গে তরুলতা রানী বলেন, আমি নিজের ও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে সেখানে পুকুরের মধ্যে সবজি ও মাছ চাষ করছি প্রায় ৮ বছর ধরে। বিয়ের পর স্বামীর সংসারে এসে তেমন কষ্ট করতে হয়নি। কিন্তু তার কয়েকবছর যেতে না যেতেই স্বামী কয়েকবার করে স্ট্রোক করেছিলো। একপাশে তেমন শক্তি পায় না প্যারালাইসিস রোগীর মতো হয়ে গেছে। আর সেখান থেকে আমি সংসারের হাল শক্ত হাতে ধরে সংসারের চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করছি।

তিনি জানান, বসতভিটার পুকুর মধ্যে সবজি চাষ করে কিছুটা হলেও সফল হয়েছেন। বারোমাস যেমন বিভিন্ন সবজি চাষবাদ করতে পারছেন যা দিয়ে সংসার চালাতে পারছেন। মেয়েদের বিয়ের জন্য ব্যাংকের কাছে যে জমি বন্ধক রেখেছিলেন তা কিছু কিছু শোধ করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, আমার স্বামী অসুস্থতার কারণে বাইরে কাজ করতে না পারলেও বাড়ির সবজি চাষের কাজে কম বেশি সহায়তা করে। এছাড়াও সবজি বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যাওয়া এবং মাঝে মাঝে পাড়ার মোড়ে বসে বিক্রি করেন। এভাবে পুকুরে সবজি ও মাছ চাষ করে সংসারের খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি।

তরুলতা রানী আরো জানান, সবজি চাষের সাথে সাথে বাড়তি একটু আয়ের জন্য নানান সময় যোন মজুরি দিয়ে থাকেন। ২টি পরিবারের থালাবাসন ধোওয়ার কাজও করেন। অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার খরচ ও সংসারের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। তবে নিজের শ্রম দিয়ে সব কিছু করার চেষ্টা করছেন। নিজের আত্মীয়স্বজনসহ প্রতিবেশীদের মাঝে মধ্যে সবজি ও বীজ দিয়ে সহায়তা করেন। তিনি বলেন, বিগত সময়ে আমাদের এখন দিয়ে নানান ধরনের দুর্যোগ হয়ে গেছে। সাথে যে বর্তমান সময়ে মহামারি করোনা হচ্ছে এতে আমাদের কৃষি ও কৃষি চাষাবাদকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। আমাদের্ উদ্যাম কিছুটা হলেও কমে গিয়েছিলো এখন সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি। নতুন করে আমাদের ক্ষেত খামার আবার সাজাতে শুরু করেছি। আমার এ কাজকে আরো ভালোভাবে করার জন্য বারসিক’র নিকট থেকে কৃষি উপকরণ সহায়তা পেয়েছি। এ সহায়তা আমারে উদ্যোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা আমাদের জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করছি।

তরুলতা রানীর মতো নারীরা আমাদের কৃষি সংস্কৃতিকে আগলে রেখে তাদের জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়নে নানান ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে। তাদের এ্ উদ্যোগকে স্বীকৃতি দানের মাধ্যমে তাদের কাজের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনা জরুরি।

happy wheels 2

Comments