সুনামগঞ্জে ফরমালিনমুক্ত আনারসের বাজার

সুনামগঞ্জ থেকে শামস শামীম

সুনামগঞ্জ সীমান্তে আনারস পল্লীখ্যাত ‘হাসাউড়া’ গ্রামের সুস্বাদু আনারসে এখন স্থানীয় বাজার সয়লাব। স্থানীয়ভাবে ফরমালিনমুক্ত এই আনারসের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা গ্রাম থেকে আনারস এনে শহরে বিক্রি করছেন। আরো পনেরদিন পরেই ফরমালিনমুক্ত এই আনারস বাজারে আর পাওয়া যাবেনা বলে চাষীরা জানিয়েছেন। চাষীরা এই আনারসকে ‘কালেঙ্গা’ বা ‘করাতি’ আনারস হিসেবে বললেও জেলায় হাসাউড়ার আনারস হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। ফরমালিনমুক্ত এই আনারস এখন শহরের উকিলপাড়া বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্ত এলাকার কয়েকটি গ্রামে স্বাধীনতার পর থেকেই বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষ হচ্ছে। সদর উপজেলা ও দোয়ারাবাজার উপজেলার হাসাউড়া, রসুলপুর, দর্পগ্রাম, শাহ্পুর, নৈ-গাং, মাঠগাঁও এবং পেঁচাকোনাসহ ৭টি গ্রামে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আনারস চাষ হয়ে থাকে। এই সাতটি গ্রামের বর্তমানে ৩ শতাধিক পরিবার আনারস চাষে যুক্ত রয়েছে। আনারস চাষে ভালো আয় হওয়ায় চাষীদের অনেকেই এখন স্বাবলম্বী।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে, চলতি বছরে দু’টি উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টে ৫ টন করে মোট ২০০টন আনারস চাষ হয়েছে। এর বাইরেও প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন এলাকায় আনারস চাষ হয় বলে সূত্র জানায়।
কৃষকরা জানান, আনারসে তারা কোন রাসায়নিক বিষ দেননা। প্রাকৃতিকভাবেই পরিচর্যা করেন। এ কারণে বাজারে এই আনারসের চাহিদা ব্যাপক। মাঘ মাসে আনারসের গাছে ফল আসার পর জৈষ্ট মাসে বিক্রির উপযোগী হয়। ১৫ জ্যৈষ্ঠ থেকে আষাঢ় মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত এই আনারস বাজারে পাওয়া যায়। বর্তমানে জেলা শহরের উকিলপাড়া এলাকায় বাগান থেকে আনারস এনে বিক্রি করেন চাষীরা।

Sunamganj anaros pic-1
হাসাউড়া গ্রামের আনারস চাষী মনফর আলী বলেন, “স্বাধীনতার পরেই রসুলপুর গ্রামের আব্দুল খালেক এবং বাবরু মিয়া ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূণ্যনগর থেকে আনারসের চারা এনে পরীক্ষামূলক আনারস চাষ শুরু করেছিলেন। পরে তাদের দেখাদেখি পার্শবর্তী গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামের চাষীরাও চাষ শুরু করেন।” এখন এলাকার কয়েক শ’ কৃষক আনারস চাষ করছেন বলে তিনি জানান।

একই গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, “আমরা এই আনারসকে কালেঙ্গা ও করাতি আনারস হিসেবে ডাকি। আমাদের পূর্ব পুরুষরা যারা চাষ করতেন তারা এ নামেই ডাকতেন।”

গ্রামের আনারস চাষী মো. সোলেমান বলেন, “আমরা বাগানে কোন মেডিসিন দেইনা। ইতার লাগি আমরার আনারসের চাহিদা বেশি। শহরে আনার পর তাড়াতাড়ি আমরার আনারস শেষ হয়ে যায়।” তিনি জানান, ছোট আনারস প্রতি হালি ৬০টাকা, মাঝারি আনারস ৮০-৯০ টাকা এবং বড় আনারস ১২০-১৩০ টাকা বিক্রি হয়। আনারস চাষ করে গ্রামের অনেক চাষীর ভাগ্য বদলে গেছে বলে তিনি জানান।
শহরের হাসননগর এলাকার এমদাদুল ইসলাম বলেন, “ফরমালিনের ভয়ে এই মধুমাসেও কোন ফল খাচ্ছি না। গত কয়েকদিন ধরে হাসাউড়ার বিষমুক্ত আনারস কিনে ছেলে মেয়েদের খাওয়াচ্ছি।”

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন, “সুনামগঞ্জের দুটি উপজেলায় ফরমালিনমুক্ত আনারস চাষ হচ্ছে। রসালো স্বাদ ও কীটনাশক মুক্তের কারণে স্থানীয় বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।” দিনদিন দেশি আনারসের চাহিদা বাড়ছে বলে তিনি জানান।

happy wheels 2

Comments