বন্যা পরবর্তী বীজসংকটে বীজঘর থেকে সহযোগিতা
নেত্রকোনা থেকে মো: অহিদুর রহমান
বন্যা পরবর্তী সময়ে নেত্রকোনা অঞ্চলের হাওর বীজঘর উচিতপুর ও গোবিন্দশ্রী, নগুয়া বীজঘর, কলমাকান্দা বীজঘর, বীজবাড়ি ও পুষ্টিবাড়ির নারী ও পুরুষের সংরক্ষিত বীজ কৃষকের দুর্যোগের সাথী ও সহযোগিতা প্রদানে সক্ষম হয়েছে।
জলবায়ুগত পরিবর্তনের অভিঘাত কৃষককে দিন দিন নিঃস্ব করছে। হাওরের কৃষক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন। আগাম বন্যা, পাহাড়ি ঢল, অতিবৃষ্টি, বাঁধভাঙ্গা, বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি, বীজের সমস্যা সকল কিছু অতিক্রম করে হাওরের কৃষক টিকে আছেন জীবন সংসার নিয়ে। এবছর ভয়াবহ বন্যার পর কৃষক যখন আবার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন তখন খরা ও অনাবৃষ্টি বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। কৃষক-কৃষাণীরা শস্যফসলের বীজ সংগ্রহের জন্য যোগাযোগ শুরু করেন। জেলার ১০টি উপজেলায় কৃষকের সবজি, প্রাণিসম্পদ ও বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বন্যার পরে এলাকায় বীজের সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক কৃষক বাজারের বীজের প্রতি সন্তুষ্ট না। মদন, আটপাড়া, নেত্রকোনা সদর, কলমাকান্দা, কেন্দুয়া উপজেলার গ্রামের কৃষক-কৃষাণীরা বন্যার সময় বসতভিটার সকল সবজির ক্ষতি হয়েছে। এখন তাদের কাছে কোন সবজি নেই। অনেক ফলের গাছও মরে গেছে। কৃষককে আবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তাই কৃষকেরা বারসিক’র সহযোগিতায় কৃষক-কৃষানির উদ্যোগে গড়েতোলা বীজঘরের উপর ভরসা করছেন। এই দুর্যোগের সময়ে বীজঘর, পুষ্টিবাড়ির নারী ও পুরুষের সংরক্ষিত বীজ থেকে কৃষকেরা ১৫ জাতের বীজ পেয়ে কৃষক-কৃষাণীরা অনেক খুশি। দুর্যোগে সংকটে এই বীজঘরই কৃষকের একমাত্র ভরসা।
বন্যার পরবর্তী সময়ে ফসলবৈচিত্র্য রক্ষা ও বৃদ্ধির জন্য বীজঘর থেকে ডাটা, লালশাক, কলমীশাক, লাউ, সীম, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, ধুন্দল, শশা, বরবটি, করলা, পুইশাকসহ ১৫ জাতের ২২০০ গ্রাম লাউবীজ, সীম বীজ ২৬৫০ গ্রাম, ডাটা ২৬০০ গ্রাম, পুঁইশাক ২৫০০ গ্রাম, করলা ৭৫০ গ্রাম, ঝিঙ্গা, ৫০০ গ্রাম, ধুন্দল ৫০০ গ্রাম, লালশাক ১৫৫০ গ্রাম, কুমড়া ১৮০০ গ্রাম, মিষ্টিকুমড়া ১৪০০ গ্রাম বিতরণ করা হয়। ৩৪ গ্রামের ২৫৩ জন কৃষক কৃষাণীর মাঝে। কৃষকদের জন্য বাজারের বীজ থেকে নিজেদের সংরক্ষিত ও পরিক্ষীত বীজই পছন্দের। বীজঘরের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিজেদের এই বীজ কৃষককে দিতে পেরে অনেক খুশি। নিজেদের বীজ নিজেরাই বিনিময় করার মাঝে যে আনন্দ তা অন্য কোথাও পাওয়া যায়না।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য নেত্রকোনা অঞ্চলে গড়ে ওঠা এসব বীজঘর বীজবাড়ি, শতবাড়ি মডেল পারস্পরিক কৃষিসম্পদ আদান প্রদানের মাধ্যমে গড়ে তোলেছেন এক পারস্পরিক নির্ভরশীলতার মজবুত বন্ধন।