কনকলতা কিশোরী সংগঠনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

মানিকগঞ্জ সিংগাইর থেকে রিনা আক্তার
বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক সমস্যা, যা নারীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আইন প্রয়োগের পাশপাশি সামাজিক সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠেেনর লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিগত দুই বছর আগে বিনোদপুর গ্রামের ৩০জন কিশোরী নিয়ে গড়ে তোলে কনকলতা কিশোরী সংগঠন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ছিল কনকলতা কিশোরী ক্লাবের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সম্প্রতি খেলাধুলা, গান, নাচ, নাটক ও আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি উৎযাপন করেছে সংগঠনের কিশোরীরা। তাদের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়কের ভূমিকা পালন করে বারসিক সিংগাইর রিসোর্স সেন্টার।


জেন্ডার সমতা ও নারীর অধিকার সুরক্ষা বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে কনকলতা কিশোরী সংগঠন সম্প্রতি বিনোদপুর নয়াপাড়া গ্রামের রুপিয়া বেগমের বাড়িতে ‘বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতন’ বিষয়ক এক পথ নাটক প্রদর্শিত হয়। যেখানে নাটকের অভিনয় করেন কিশোরী সংগঠনের সদস্যরাই। গ্রামের কিশোর-কিশোরী, যুব সমাজ, ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে সংগঠনের সদস্য সুমি, পুষ্পিতা, আরমিনা, জান্নাত, নাদিয়া, রেশমী অভিনীত নাটকের মাধ্যমে বাল্য বিয়ের কারণ, কুফল, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ আইন, শাস্তি ও অভিভাবকদের করণীয় প্রভৃতি বিষয়গুলো তারা তুলে ধরে। অসচেতনতা, সামাজিক কুসংস্কার, অশিক্ষা, নিরাপত্তাহীনতা, পারিবারিক আর্থিক অসচ্ছলতা প্রভৃতি বিষয়গুলোকে কিভাবে বাল্যবিয়েকে প্রভাবিত করে সেই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। সেই সাথে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনের প্রয়োগ ছাড়াও উক্ত সংকট সমাধানে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপগুলোও অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।


দিবসটি উৎযাপনের অংশ হিসেবে নাটক প্রদর্শনের পাশাপাশি শিশু কিশোরীদের অংশগ্রহণে গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। যেখানে পুকুরপাড়, অংক দৌড়, বালিশ খেলা, সংখ্যার ম্যাজিক গেম প্রভৃতি খেলাধূলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলাধুলাই গ্রামের মোট ৩০ জন শিশু ও কিশোরী অংশগ্রহণ করে। এছাড়া সকল সংশয় ছেড়ে সংগঠনের কিশোরীরা গান ও ৭ জন কিশোরী নৃত্য পরিবেশন করেন।


পরবর্তীতে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বারসিক সহায়ক রিনা আক্তারের সঞ্চালনায় ও তানিয়া আক্তারের সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মো: শাহীন মিয়া, নারী নেত্রী মাশেদা বেগম, রুপিয়া বেগম, বারসিক কর্মকর্তা শিমুল বিশ^াস ও আছিয়া আক্তার।
নিজেদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীকে সামনে রেখে জনসচেতনতা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নারীর অগ্রযাত্রায় সামাজিক বাধাগুলো চিহ্নিত করা ও সমাধানের বিষয়গুলো নাটকের মাধ্যমে সকলের সামনে তুলে ধরার জন্য আলোচকগণ কনকলত্ াকিশোরী সংগঠনের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। তাদের এই প্রচেষ্টাকে একটি ভালো পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই সময় তারা বলেন, ‘পরবর্তীতে কিশোরী সংগঠন এই ধরনের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সেগুলো বাস্তবায়নে তারা সর্বাত্ত্বক চেষ্টা করবেন।


আলোচকদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী অভিভাবকগণও তাদের মতামত তুলে ধরেন। অভিভাবক প্রতিনিধিরা বলেন, ‘প্রতিটি পরিবারের মা-বাবাকে আগে সচেতন হতে হবে, ১৮ বছরের আগে মেয়ে ও ২১ বছরের আগে কোনভাবেই যেন ছেলেমেয়ের বিয়ে আমরা না দেই। মেয়েরা যেন নিরাপদে স্কুল কলেজে যেতে পারে সেজন্য আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার সুব্যবস্থা করতে হবে। আমাদেরকে বুঝতে হবে মেয়েরা পরিবারের বোাঝা নয়, প্রতিটি মেয়েই হচ্ছে সেই পরিবারের গুরুত্বপুর্ণ সম্পদ, ভবিষ্যতে সুস্থ থাকার অবলম্বন। এই সম্পদকে আমাদেরই সুরক্ষা দিতে হবে।’

happy wheels 2

Comments