ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলায় ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর
মানিকগঞ্জ থেকে শিবানী চক্রবর্তী মানিকগঞ্জ
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গ্রামীণ মেলা। শীতের শেষে মেলা বসে মাঠে ঘাটে ও বট গাছের নিচে। বৈশাখে মেলা বসে বটতলা হাটখোলায়। গ্রামীণ এই মেলা বাঙালি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। মেলা উপলক্ষে গ্রামের বউ-ঝিয়েরা আনন্দে মেতে উঠে। মেলার জন্য প্রস্তুতি নেয়। গ্রামজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। গ্রামের প্রতি ঘরে ঘরে লাড়–, মোয়া, মুড়কি তৈরি করেন। অতিথি আপ্যায়নে ঘরে ঘরে আমন ভাউয়াল্যা, ডেপা, দিঘা, কালো বোরো ধানের চালের খিচুরি, মুড়ি ও খই ভাজেন। মেলায় চড়কি, মাটির হাড়ি পাতিল, সাজনি, খেলনা, খাবারে দোকান দেখা যায়। মানিকগঞ্জের ঐতিহ্য বারভাজা সবার কাছে প্রিয়। গ্রামীণ মেলায় জারি গান, কবিগান, ভাববৈঠকী গান, বিচার গান ও যাত্রা পালা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার মাধ্যমে মানুষ জন কৌশল বিনিময় ও তথ্য আদান প্রদান প্রদানের মাধ্যমে আনন্দে বিমোহীত। ভাতৃতের বন্ধনে সকলে একাকার।
মানিকগঞ্জ জেলার লেমুবাড়ি ইউনিয়নের মধ্য পুটাইলে ১৫০ বছর ধরে লক্ষ্মী পূজার মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সর্ব প্রথমে খুব ছোট্ট করে একটা মেলা বসাতেন রাজবংশী কাঠমিস্ত্রি আর শীল সম্প্রদায়ের মানুষেরা। আস্তে আস্তে লক্ষ্মীপুজোর মেলায় বেশ জমতে থাকে। মেলার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বর্তমানে মেলা সাত দিন হয়। বর্তমানে সাতদিন হওয়াতে ঘোস্তা অঞ্চলে খুশি আর উৎসবের আমেজ বয়ে যায়। ঘোস্তা অঞ্চলে বেশির ভাগ লোকই কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এ অঞ্চলে পুরুষদের চেয়ে নারীরাই বেশি সরাসরি কৃষি কাজে সম্পৃক্ত। মেলা উপলক্ষে পুরো ঘোস্তা অঞ্চলে যেন খুশির আমেজ বয়ে যায়।
এই ঘোস্তা গ্রামে কয়েক লক্ষাধিক লোক বসবাস করেন। সকলে মিলে মিশে আনন্দ উৎসব করেন। মানুষ হিসাবে সবাই আচার অনুষ্ঠান পালন করেন। মেলাকে কেন্দ্র করে নারীরা লক্ষ্মী পুজা মেলায় উপলক্ষে আসা মেহমানদের নদীর তীরের বোরো ধান, ভাউল্যা, ডেপর ধানের তৈরি খই, মুড়ি, দিয়ে সমাদর করেন। খই দিয়ে খইয়ের মোয়া, মুড়কি, খইযের লাড়ূ তৈরি করা হয়। মুড়ির মোয়া, মুড়ির ছাতু, মুড়ির ছাতুর লাড়– বানান। মেলা উপলক্ষে আত্মীয়স্বজন আসেন মেলায় ছোট, বড়, ছেলে মেয়ে, নারী পুরুষ, প্রবীণ সকলে আনন্দ উৎসব করেন। তথ্যগুলো দিয়ে সহযোগিতা করেন মানিকগঞ্জের মধ্য পুটাইলের কৃষক রহিমা বেগম।
মেলার প্রধান আকর্ষণ বাউল গানের আসর। নানা জায়গা থেকে লোকজন আসেন বাউল গান শুনতে। মেলাতে শিশুদের জন্য খেলনা, হরেক রকম খাবারের দোকান, কাঠের তৈরি সরঞ্জাম, খাট আলমারী, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি পাওয়া যায়। মেলাতে হরেক রকমের মিষ্টির পসরা নিয়ে দোকানীরা বসেন। মিষ্টির দোকানগুলোতে পাওয়া যায় কালজাম, চমচম, রসগোল্লা, জিলাপি ইত্যাদি মিষ্টি। আর এ মিষ্টিগুলো এখানকার স্থানীয় লোকজন ও কৃষকরাই তৈরি করেন। মিষ্টি তৈরিতে যেসব উপকরণ ব্যবহার করা হয় তার বেশির ভাগই স্থানীয় কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। তথ্যগুলো দিয়ে সহযোগিতা করেন মানিকগঞ্জের মধ্য পুটাইলের কৃষক আব্দুল কুদুস।
মেলা উপলক্ষে ওই এলাকায় যেমন উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। মেলা, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নিবিশেষে মেলায় সকল ধরনের মানুষ সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মেলা অসম্প্রদায়িক চেতনার ও বাঙালি সংস্কৃতি রক্ষায় যুগ যুগ ধরে ভূমিকা রাখছে, যা বহুত¦বাদ সমাজ বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।