ঢোল কলমির বেড়া
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
দ্বীপ বেষ্টিত গাবুরা ইউনিয়নে যততত্র প্রাকৃতিক বেড়া হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ঢোল কলমি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ গাবুরা ইউনিয়নে প্রাণ ও প্রকৃতি বিশেষ করে গাছপালা ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য এর পরিমাণের মাত্রা কমে যাওয়ায় তা পুরণ করার ব্যাপারে স্থানীয় পর্যায়ে নানা ধরনের উদ্যোগ দেখা যায়। বৈচিত্র্যময় ফসল চাষাবাদ সহ নানা প্রজাতির গাছপালা লাগিয়ে সবুজ ইউনিয়ন তৈরি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। আইলা পরবর্তী সময়ে গাবুরা ইউনিয়নে যততত্র প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় ঢোল কলমি। এই ঢোল কলমিকে অনেকেই প্রাকৃতিক বেড়া হিসেবে ব্যবহার করছে।
ঢোল কলমি ইংরেজি নাম হচ্ছে pink morning glory, এবং বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Ipomoea carnea। এটি কনভলভালাসি পরিবারের এক প্রজাতির গুল্ম। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এই গাছ দিয়ে ক্ষেত বা ফসলের বেড়া হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যায়। গাবুরা ইউনিয়নের চকবারা গ্রামে রাস্তা, পুকুর, বসতভিটা, ও খালপাড়ে এই ঢোল কলমি বেড়ে উঠেছে। গ্রামের অনেক স্থানীয় মানুষ এই ঢোল কলমিকে প্রাকৃতিক বেড়া হিসেবে ব্যবহার করছেন।
আগাছা হিসেবে পরিচিত এই কলমি জলাশয়, বিল বা মাঠে দেখা পাওয়া যায়। এটা প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়। এর বীজ বিষাক্ত ও বীজ থেকে চারা জন্মায়। ঢোল কলমির পাতা হৃদয়ের আকারের সবুজ রঙের হয়, পাতাগুলো ৬-৯ ইঞ্চি লম্বা হয়। এর ফুল দেখতে মাইক বা ঘণ্টার আকৃতির হয়ে থাকে। রঙ হয় হাল্কা বেগুনি ও সাদা। এই গাছ মূলত মিষ্টি আলু গ্রোত্রের। এটা আমাদের খাদ্য তালিকায় না থাকলেও এই উদ্ভিদের ভেষজগুণ আছে। এর পাতার গুড়া জমিতে অতিরিক্ত শামুক নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
উপজেলার গাবুরার চকবারা গ্রামের প্রতিটি পরিবার তার ফসলের ক্ষেত, পুকুর ও বসতবাড়ির চার পাশে বেড়ার প্রধান উপকরণ হিসেবে এই ঢোল কলমি ব্যবহার করছে। কেউ কেউ কলমি গাছের সাথে নেট ও বাঁশের চটা ব্যবহার করে বেড়াকে শক্তিশালী করছেন। অনেকেই অতিরিক্ত অংশ রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। ছাগল গরুতে না খাওয়ার জন্যই বেড়া হিসেবে ব্যবহারে এটার চাহিদা বেশি। এটা সহজেই মারা যায় না এবং লবণাক্ত পরিবেশে এটা বংশ বৃদ্ধি করে। গাবুরা গ্রামের কৃষক শফিুকুল ইসলাম বলেন, “আইলার পরে আমাদের এলাকায় এই ঢোল কলমি চলে আসে। কেউ কেই এই কলমির বীজ বাইরে থেকে বা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে নিয়ে আসে। তারপর এটার মাধ্যমে সমগ্র স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঢোল কলমির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটা বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা যায় ও ছাগল গরুতে এটা খায় না।”
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে প্রাকৃতিক বেড়া হিসেবে পরিচিত এই ঢোল কলমির রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। মূল্যবান প্রাকৃতিক এই উদ্ভিদবৈচিত্র্যকে সংরক্ষণের ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষায় অবদান রাখতে হবে সমাজের সকলকে।