যুবকদের উদ্যোগে গরুর ফার্ম
মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পুখুরিয়া গ্রামের ৬ জন যুবক মিলে ২০০৯ সালের মে মাসে সংগঠিত হয়। বর্তমানে তাদের সংখ্যা ৩১ জনে উন্নীত হয়। সংগঠিত যুবকরা নিজেদের উন্নয়নের জন্য ছোট্ট আকারে শুরু করেছেন গরু পালন। ছোট্ট আকারে গরু পালন করে সফল হয়েছেন তারা। তাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ আজ বৃহত্তর রূপ নিয়ে ফার্মে পরিণত হয়েছে। এতে করে তারা নিজেদের জন্য কর্মসংস্থান ও আর্থিক নিশ্চয়তা দিতে পেরেছে।
বর্তমানে যুবকদের ফার্মে ২৭টি গাভী ও ৬টি বাছুর আছে। প্রতিদিন তাদের ১২০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। ফার্মের দুধ স্থানীয় বুতনী, পুখুরিয়া, মহাদেবপুর, বরংগাইল, শিমুলিয়া, ঘিওর বাজারে এবং চায়ের দোকানে বিক্রি হয়। বিকালে দুধ কিনতে আসে আশেপাশের নারীরাও। যুবকদের তৈরি গরুর ফার্মে উপজেলা পশু হাসপাতাল থেকে নিয়মিত টিকা গ্রহণ করা হয়। ফলে গরুগুলো স্বাস্থ্যবান ও সবল এবং রোগবালাই থেকে মুক্ত। গরুর খাবারে জন্য যুবকরা খেশারী, ঘাস, সরিষা চাষ ও কলা চাষ করছেন। তারা মনে করেন গরুদের জন্য যদি নির্ভেজাল খাদ্য দেওয়া যায় তাহলে গরুগুলো সবল হবে। তাই তো তারা পরিবেশবান্ধব উপায়ে খেশারি, সরিষা ও ঘাস চাষ করছেন।
গরু পালনের পাশাপাশি যুবকরা নিজেদের ও সমাজের উন্নয়নের জন্য নানান সামাজিক ও পরিবেশ বিষয়ক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করে। কোঁচো সার তৈরির কৌশল জানার জন্য তারা সিংগাইর উপজেলার বায়রা গ্রামের কৃষাণী কমলার বাড়ি পরিদর্শন করে। কৃষাণী কমলার বাড়ি পরিদর্শনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তারা নিজ গ্রামের নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি এবং জ¦ালানি সংকট মোকাবেলায় তৈরি করছেন গোবর লাঠি। সেই গোবর লাঠি ব্যবহার করে নারীরা যেমন জ্বালানি সঙ্কট দূর করেছেন ঠিক তেমনি এ গোবর লাঠি বিক্রি করে আয়ও করেছেন। যুবকরা কেঁচো সারও উৎপাদন করেছেন এবং সেই সার তারা তাদের কলা, খেশারি ও সরিষা বাগানে প্রয়োগ করছেন। এছাড়া যুকবরা এলাকার ক্ষিরাই নদীর প্রাণ বাঁচিয়ে রাখা ও বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য তারা স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিত্রাঅংকন ও রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
আজকের সমাজের যুবরা কোনভাবেই ঘটনা থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন বা আলাদা করে রাখতে পারেনা। তাই তো তারা নিজেদের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য যেমন গরুর ফার্ম করছেন, আর্থিক নিশ্চয়তা দিচ্ছেন তাদের পরিবারকে ঠিক তেমনি পরিবেশ সুরক্ষায় তারা পরিবেশবান্ধব কৃষি চর্চার জন্য কেঁচো সার তৈরি, নদী রক্ষার জন্য সচেতনতা তৈরি, বৃক্ষ রোপণসহ নানান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মানিকগঞ্জের এই যুবকরা প্রমাণ করেছেন যে, ইচ্ছাশক্তি থাকলে তারা দেশ ও সমাজের নানান উন্নয়ন কাজে অবদান রাখতে পারেন।