শীতের পিঠার শহরায়ণ
সাতক্ষীরা থেকে মাহিদা মিজান
ষড় ঋতুর মধ্যে ভ্রমণ ও খাওয়া-দাওয়ার জন্য জনপ্রিয় শীতকাল। আর পিঠাপুলি ছাড়া শীতকে কল্পনাই করাই যায় না। শীতের পিঠা বাঙালির গ্রামীণ ঐতিহ্যের একটি অংশ। কালের বিবর্তনে গ্রামীণ শীতের পিঠার শহরায়ণ ঘটেছে। অর্থাৎ গ্রামীণ পরিবেশ থেকে পিঠাপুলি উঠে এসেছে শহরের দোকানে দোকানে। শহরের মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমান পিঠার দোকান।
আবহমানকাল ধরে পিঠা গ্রামেই বেশি তৈরি করা হতো। শহরে শত কাজের ভিড়ে মানুষ তেমন একটা পিঠা তৈরি করার সময় পেত না। বরং তারা বিভিন্ন ধরনের শীতের পিঠা উপভোগ করার জন্য পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামে বেড়াতে যেতো। আর যারা বিভিন্ন কাজ বা লেখাপড়ার জন্য বাড়িতে যেতে পারত না, তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের পিঠা পুলি তৈরি করে শহরে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। গ্রামে রাতভর ঢেঁকিতে চাল ভেঙে খুব সকালে বাড়িতে বাড়িতে বিভিন্ন পিঠা তৈরির উৎসব চলতো।
কিন্তু বর্তমানে গ্রামের এই পিঠা উৎসবের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। গ্রামের পিঠা উৎসব যেন এখন শহরের মোড়ে মোড়ে। বর্তমানে শহরের মানুষের পিঠার চাহিদা মেটাচ্ছে ভ্রাম্যমান পিঠা তৈরির দোকানগুলো। শহরের সব রাস্তার মোড়েই বেশ কিছু নারী এবং পুরুষকে দেখা যায় পিঠা তৈরি করতে। আর এর ফলে শহরের মানুষের পিঠার চাহিদা যেমন পূরণ হচ্ছে পাশাপাশি বিভিন্ন নারী-পুরুষের আয়েরও উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে পিঠা তৈরি।
পিঠা বিক্রেতা রহিমা বেগম বলেন, “প্রতিদিন ভাপা, খোলামুচি, পুলিসহ বিভিন্ন পিঠা বিক্রি করে আমার ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা আয় হয়। পিঠা বিক্রি করে আমার প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা লাভ হয়। আর এই লাভের টাকা দিয়ে আমার সংসার ভালোভাবে চলে যায়। পাশাপাশি আমি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াও করাতে পারছি।” পিঠা ক্রেতা কলেজ শিক্ষার্থী সোহেল পারভেজ বলেন, “পিঠা খেতে এখন আর গ্রামের বাড়ি যাওয়া লাগে না। শহরে বসেই আমরা শীতকালীন বিভিন্ন পিঠার স্বাদ গ্রহণ করতে পারি। আগে শীতে বাবা-মার সাথে নানা বাড়ি বা দাদা বাড়ি বেড়াতে যেতাম পিঠা খাওয়ার জন্য। এখন কম মুল্যে এসব পিঠা শহরেই বসে উপভোগ করতে পারছি।”
এসব ভ্রাম্যমান পিঠার দোকানে ভাপাপিঠা, পুলিপিঠা, চিতইপিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, পাকন পিঠা, খোলামুচি পিঠা সহ আরও অনেক পিঠা তৈরি করা হয়। এসব পিঠা ৫ থেকে ১০ টাকা দরে শহরে বিক্রি করতে দেখা যায়। এর ফলে মানুষ কম মুল্যে বিভিন্ন ধরনের পিঠার স্বাদ উপভোগ করতে পারে। এর পাশপাশি গ্রামের শীতের পিঠার পরিসরও আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে এসব পিঠার শহরায়ন ঘটেছে।
তবে শহরায়ণের ফলে গ্রামের সাথে মানুষের আত্মীয়তার সর্ম্পক অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। আগে পিঠা উৎসবকে কেন্দ্র করে মানুষ প্রতি বছর গ্রামে বেড়াতে যেতো। যার ফলে গ্রামের সাথে তাদের একটা আত্মিক সর্ম্পক গড়ে উঠত। কিন্তু শহরায়ণের ফলে তা অনেকটা কমে গেছে। তারপরও শহরের পিঠা তৈরির দোকানগুলো বাঙালির ঐতিহ্যের অংশ গ্রামীণ শীতের পিঠার স্বাদ এখনও কিছুটা ধরে রেখেছে।