সাম্প্রতিক পোস্ট

নারী অস্তিত্বের সবটুকুই প্রয়োজনের

নারী অস্তিত্বের সবটুকুই প্রয়োজনের

মানিকগঞ্জ থেকে এম আর লিটন।।

এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য ‘সময় এখন নারীর: উন্নয়নে তারা /বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরের কর্ম-জীবনধারা’। ১৯১০ সালের ৮মার্চ থেকে শুরু করে নারী দিবসের বয়স যুগ যুগ পেরিয়ে গেছে ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আজ পাঁচ দশক ছুঁই ছুঁই । স্বাধীনতার ৪৭ বছর পাড়ি দিয়ে নারীদের ভাগ্যের কি পরির্তন ঘটেছে? এদেশের নারীদের সম-অধিকার কি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? নারীদের অধিকার নিয়ে কী ভাবছে নারী প্রজন্ম? দেশের তরুণী সমাজের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল এমন সব প্রশ্ন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৮ উপলক্ষে বারসিকনিউজ’এর আয়োজনে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশতাধিক তরুণীদের ফেসবুক এর ম্যাসেঞ্জারে জানতে চাওয়া হয়েছিল এই প্রশ্নগুলো। ৩১ জন তরুণী তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। সেখান মাত্র ৬ জনের মতামতকে স্থান দেয়া সম্ভব হয়েছে- নারী দিবসের এই বিশেষ আয়োজনে।

তাঁরা উত্তরে বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছেন, দেশের আগামী দিনের এই তরুণী কর্ণধররা। নারীদের সমস্যা নিয়ে ক্ষোভের পাশাপাশি সমাধানের কথা বলেছেন। নারীদের নিয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি ও সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন, এই নারী স্বপ্নবাজরা।

‘৮ই মার্চের ডাক নারীর স্বাধীন হবার আহ্বান’

salma aktarপ্রতিবছর ঘটা করে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়, নারীর অধিকার, সমঅধিকার এর কথা বলা হয়। অথচ সেই অধিকার পূরণ ও বাস্তবায়নে কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়না। নারী অধিকারের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে তা নতুন মোড়কে জুড়ে নতুন রূপ ধরেছে। রাষ্ট্রের প্রধান ক্ষমতাবান দুইজন মানুষ নারী হলেও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ খুবই হতাশাজনক। নির্বাচনী বিধিমতে কোনদলই ৩৩% নারী কোটা পূরণ করতে পারেনি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের ফলাফলের হার তুলনামূলক ভালো হলেও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে সেসব নারীর সংখ্যা আরো বেশি হতাশাজনক। এর প্রধানতম কারণ নারীর স্বাধীনতা না থাকা। এই কারণে নারী কর্মক্ষেত্রে সাবলীল অংশগ্রহণ করতে পারেনা। ফলে তার অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটে না আর নারী অধিকারের নামে ৮ই মার্চ পালনটাও শুধুমাত্র লোক দেখানো হয়ে যায়। ৮ই মার্চের ডাক নারীর স্বাধীন হবার আহ্বান, সেই আহ্বানকে আরো বেগবান করতে নারীর সকল স্তরে সাবলীল অংশগ্রহণের পথ উন্মুক্ত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র সেই কাজটি ঠিকমত করতে পারলেই নারী মুক্তির ৮ই মার্চ পূর্ণতা লাভ করবে।

সালমা আক্তার, মাষ্টার্স অধ্যয়নরত , চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ

‘নারীরা আজ অনেক এগিয়ে’

Rikta Ritoবর্তমান বাংলাদেশে নারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। নারীরা আজ অনেক এগিয়ে। পুরুষের পাশাপাশি তালে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে নারীদের প্রচেষ্টার শেষ নেই। তবুও বলতে হয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে আজও নারীরা পুরুষের থেকে অনেকটা পিছিয়ে। আর এর মূল কারণ এ সমাজ ব্যবস্থা। বর্তমান বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা এখনও নারীকে সেই জায়গাটা সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি করে দিতে পারেনি। নারীদের কাজ করতে এখনও অনেক বাধা অতিক্রম করে আসতে হয়। তবে একথা উল্লেখ করতেই হয় যে, আমাদের বর্তমান সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনা নারী অগ্রগতির জন্য বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন এবং নিজে উজ্জল দৃষ্টান্ত হয়ে বাংলাদেশের নারী সমাজকে উৎসাহিত করছেন। তাই আজ আমরা আশা রাখতে পারি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গঠনে বিশেষ ভাবে নারীর ভূমিকা আমরা লক্ষ্য করবো। তবে প্রতিটি নারীকে তাদের অধিকার সম্পর্কে যেমন সচেতন থাকতে হবে তেমনি সচেতন থাকাতে হবে সেই অধিকার সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে।

রিক্তা ঋতু, মাস্টার্স, রাষ্ট বিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ

‘নারী অস্তিত্বের সবটুকুই প্রয়োজনের’

Yeatunnesa Rumaআজ বিশ্ব নারী দিবস। যদিও নারীদের জন্য কোন বিশেষ দিবস লাগেনা। তবে নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলতে হলে, নারীকে সোচ্চার হতে হলে এবং নারীর সমস্যাগুলো নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনার জন্য এই দিবসটির গুরুত্ব অনেক। আপাতদৃষ্টিতে দেখা যায় নারীরা আগের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তবে নারীদের শোষণ এখনো দূর হয়নি। নারী এখন পুরুষের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্র তথা বিভিন্ন দিক দিয়ে এগিয়ে গেলেও, নারী তার প্রকৃত স্বাধীনতা এখনো লাভ করেনি। বর্তমানে অনেক নারী ঠিকই উপার্জন করছে। তবে সে এখনো পুরোপুরি অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন নয়। যেমনটা পুরুষ স্বাধীন। নারীকে এখনো দিনশেষে সকল কাজের কৈফিয়ত দিতে হয়। তবে আমি আশাবাদী, নারী তার প্রকৃত স্বাধীনতা একদিন লাভ করবে। আর সেজন্য নারী শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। একজন নারী সুশিক্ষায় শিক্ষিত হলেই সে তার অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে পারবে। বর্তমানে নারীদের সুযোগ-সুবিধা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সরকার নারীদের জন্য বিশেষভাবে কাজ করছে। এছাড়া বর্তমানে পুরুষও নারীদের ব্যাপারে অনেকটা সহযোগী মনোভাব পোষণ করছে। নারীদের অধিকারের ব্যাপারে পুরুষ অনেকটাই সচেতন ভূমিকা পালন করছে। এভাবেই ধীরে ধীরে সমাজ পরিবর্তিত হবে। নারীরাই পারবে পুরুষের হাতে হাত রেখে একটি সুন্দর ও সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে। নারী প্রমাণ করবে সে কেবলই সৌন্দর্যবর্ধন করেনা। নারী অস্তিত্বের সবটুকুই প্রয়োজনের।

ইয়াতুননেসা রুমা, বিবিএ ৪র্থ বর্ষ, ব্যাবস্থাপনা বিভাগ, পল্লবী মহিলা ডিগ্রী কলেজ, মিরপুর

‘নারী আজও তার সঠিক অধিকার পায়নি’

Ruma aktae৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। অন্যান্য দেশের মত শ্রদ্ধা, সম্মান ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই দিনটি বাংলাদেশেও পালন করা হবে। ১৯৯১সালে প্রথমবারের মত এই দিবসটি পালন শুরু হয় বাংলাদেশেও। কিন্ত সারা বিশ্বেই নারী আজও তার সঠিক অধিকার পায়নি। নারীরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এমনকি বাসা বাড়িতেও নিরাপদ নয়। কলকারখানায় নারীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তারা ন্যায্য মজুরি বা সম্মান কোনটাই পাচ্ছে না, কর্মক্ষেত্রে নারীরা লাঞ্চিত হচ্ছে, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীরা ইভটিজিং, ধর্ষণের মত বর্বরতার শিকার হচ্ছে । গণপরিবহনেও নারীর নিরাপত্তার কতটা অভাব তা আমরা দেখেছি রূপা ধর্ষণের ঘটনায়। নারী অনিরাপদ ক্যান্টনমেন্টের মত জায়গাতেও। প্রতিদিন খবরের কাগজের পাতা উল্টালে দেখা যায় গৃহবধূ হত্যা, ইভটিজিং, ধর্ষণ, ধর্ষণের পরে হত্যা এমনকি শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। এসব যেন প্রতিদিনের প্রধান খবর। এসব বর্বরতার প্রতিবাদ করা হয় ঠিকই, কিন্ত রাষ্ট্র এর সুষ্ঠু বিচার করতে বারবারই দীর্ঘসূত্রতা বা অক্ষমতার পরিচয় দেয়। বরঞ্চ, আমরা দেখি ঘটনাকে ভিন্নপথে চালনা করা বা নারীকেই দায়ী করার মত ঘটনাবলি। নারী দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হবার কথা ছিলো নারীর সম অধিকার নিশ্চিত করা, তার স্বাধীনতাকে উন্মুক্ত করা। অথচ এতো বছরেও সেসব চিন্তাই থেকে গেছে। সেসব চিন্তাকে বাস্তবে রুপ দেবার প্রতিজ্ঞাই হোক এই নারী দিবসে।

রুমা আক্তার, ৪র্থ বর্ষ, বাংলা (অনার্স),মানিকগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ।

‘বেগম রোকেয়ার দেখানো পথে এদেশের নারীরা’

Asma Sadat Chowdhuryনারীর মুক্তির ডাকে ৮ই মার্চের নারী দিবস পালন করা হয় প্রতিবছর। নারী দিবসে প্রতিবছর আমরা আশা করি নারী জীবনযাত্রার পরিবর্তন হবে, নারীর ক্ষমতায়ন বাড়বে, কর্মক্ষেত্রে সমতার ভিত্তিতে নারী কাজ করবে। ঘুরে ফিরে এসব কথাই প্রতিবছর আমরা বলে যাই। কিন্তু, অবস্থার পরিবর্তন হয়না। প্রীতিলতা, ইলা মিত্রের মতো নতুন উদাহরণ তৈরি হয় না। বেগম রোকেয়ার দেখানো পথে এদেশের নারীরা প্রথম পথে বেড়িয়ে এসেছিলো। তারা ব্যাপক আকারে সকল বিভাগেই নিজেদের শক্ত অস্তিত্বের জানান দিচ্ছিলো। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেসময় রক্ষণশীল দেশগুলোও নারী বিষয়ে নিজের অবস্থান বদলাচ্ছে, অথচ উন্নয়নশীল দেশগুলো আরোও পিছিয়ে যাচ্ছে। সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক জায়গায় নারীর অংশগ্রহণ ঠেকাতে ঢাল বানানো হচ্ছে ধর্ম চর্চাকে। নারীদের একঘরে করে ঘরে বসে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে নানা কুযুক্তিতে। বাইরে বেরুলেই নারীকে নানা বিব্রতকর, শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে।পৃথিবীটাকে নারীদের সামনে অনুপযোগী হিসেবে প্রচার করছে। তবুও এসব বাঁধাকে অতিক্রম করে যারা সত্যিকার অর্থে ৮ই মার্চকে সাফল্যমন্ডিত করতে পেরেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রইলো।

আসমা সাঁদাত চৌঁধুরি, মাস্টার্স, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম

‘পুরুষের থেকে কোনো ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই নারীরা’

Samapti Royআন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে আমার ভাবনার কথা বলার প্রথমে আমি বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উক্তি দিয়ে শুরু করতে চাই, ‘নারী দাসি বটে সেই সঙ্গে নারী রানীও বটে।’ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয় মানুষ হিসেবে নিজের পরিপূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আজকের নারী যেমন ঘরে তেমনই ঘরের বাইরেও নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে। একজন পুরুষের থেকে কোনো ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই নারীরা। তবুও আমাদের এই পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে বারবার হতে হয় নানা ধরনের বাঁধার সম্মুখীন। আমরা নিজেদেরকে সভ্য আর আধুনিক বলে দাবি করলেও সত্যিই কি আমরা সেটা হতে পেরেছি? পারিনি! যদি হতাম তাহলে নারী সমাজকে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এত নির্যাতন আর বাঁধার সম্মুখীন হতে হতো না। আমাদের সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। সেই সাথে সবার দৃষ্টিভঙ্গি। নারীদের জন্য এমন এক নিরাপদ সমাজ প্রয়োজন- যেখানে নারীকে পুরুষের ভয়ে গুটিয়ে থাকতে হবে না। নারী আর পুরুষ একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। এই কথাটি যদি সবাই মন থেকে বিশ্বাস করি তবে নারী পুরুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।শেষ করবার আগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি উক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই, ‘কোনোকালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি। প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয় লক্ষ্মী নারী।’

সমাপ্তি রায়, এইচ.এস.সি, ২য় বর্ষ, ঘিওর সরকারি কলেজ

happy wheels 2

Comments