ভেড়া পালন করে লাভবান হচ্ছে বাগডাঙ্গী চরের মানুষ
সাতক্ষীরা থেকে এস এম নাহিদ হাসান
বেতনা নদীর পাড়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। এই তৃণভূমিকে কাজে লাগিয়ে বাগডাঙ্গী চরের মানুষ দেশী জাতের ভেড়া পালন শুরু করেছেন। ভেড়া পালনের মাধ্যমেই তাঁরা নিজেদের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাগডাঙ্গী চরের মানুষ পারিবারিকভাবে দেশী জাতের ভেড়া পালন শুরু করেছেন। এ চরের ৪০টি বাড়ির প্রায় প্রতিটিতে দুই চারটি করে ভেড়া চোখে পড়বে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার পরও তাঁরা ভেড়া পালন করে ভাগ্য উন্নয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
প্রতিদিন সকাল থেকে নদীর পাড়ে বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে ভেড়াগুলো চরে বেড়ায়। নদীর পাড় ও মাঠের আশপাশে ঘুরে ঘাস খেয়ে তাদের দিন কেটে যায়। যত ঝড় বৃষ্টি যা হোক না কেন সন্ধ্যার আগে ভেড়ার পাল বাড়ি ফিরে না।
ঝড়, বৃষ্টি ও নানা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে খুব সহজে ভেড়া পালন করা যায়। বাড়তি খাদ্যের প্রয়োজন না হওয়ায় চরের সকলে ভেড়া পালনে বেশ আগ্রহী। অল্প পুঁজি, স্বল্প শ্রমে দিয়ে ভেড়া পালন করে অর্থনৈতিকভাবে তারা লাভবান হচ্ছে ।
ভেড়ার রোগ ব্যাধি খুব কম হয়। সময় মতো কৃমিনাশক দেওয়া হলে চিন্তা থাকে না। তবে ফুড পয়জনিং হলে একটু সমস্যা দেখা যায়। দেশী জাতের ভেড়া প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। তাই ভেড়া পালনে ঝুঁকি কম থাকে। এজন্য মালিকদের তেমন ভোগান্তিতে পড়তে হয় না।
ভেড়ার প্রধান খাদ্য সবুজ কচি ঘাস। এছাড়া নদীর পাড়ের আগাছা লতাপাতা খেয়ে থাকে। গরু, ছাগলের মত খৈল, ভুষি, পালিশসহ অন্যান্য খাবার খেতে দিতে হয় না। এজন্য ভেড়ার মালিকদের খাবার নিয়ে চিন্তা এবং পরিশ্রম করতে হয় না।
বছরে দুবারে স্ত্রী ভেড়া দু’টি থেকে চারটি বাচ্চা প্রসব করে। ছয় থেকে সাত মাসে সেই বাচ্চা আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়। একটি বড় ভেড়া পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়। এসব ভেড়া থেকে ১৪ থেকে ১৭ কেজি মাংস পাওয়া যায়। ভেড়ার মাংসে আঁশ কম ও মোলায়েম হয়। তাই খেতেও বেশ সুস্বাদু। ভেড়া বিক্রির জন্য চরের মানুষের হাটে যাওয়া লাগে না। শহর থেকে বেপারীরা এসে কিনে নিয়ে যায়। তাই ভেড়া বিক্রি নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা নেই।
এ চরে ভেড়া পালনকারী পিয়ালী বেগম বলেন, “প্রায় তিন বছর ধরে দেশী জাতের ভেড়া পালন করে আসছি। ছাগল পালনের চেয়ে ভেড়া পালন অনেক লাভজনক। কারণ ভেড়ার তেমন যত্ন নেওয়া লাগে না। কাদা বর্ষায় ভেড়ার তেমন সর্দি জ্বর হয় না। ভেড়া ঘাস খায় তাই খাবার নিয়েও চিন্তা করতে হয় না। এছাড়া অন্যান্য প্রাণীর মত রোগবালাই হয় না।”
তিনি আরো বলেন, “ভেড়া ধান খেতে পছন্দ করে। তাই ধনের সময় একটু পাহারা দিয়ে রাখতে হয়। ভেড়া বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যায়। বিক্রির টাকা দিয়ে বড় বড় কাজ করা যায়। তাই আমরা চরের মানুষ ভেড়া পালন করি। আমাদের দেখে এখন পাশের গ্রামের মানুষরাও ভেড়া পালন করছেন।”