অভিজ্ঞতায় বদলানো জীবন

অভিজ্ঞতায় বদলানো জীবন

সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল

“আমাদের পাশের বাড়ির কৃষাণী অল্পনা রাণী যদি কৃষিতে এত সফলতা পেতে পারেন, শেখ হাসিনার কাছ থেকে পুরস্কার পেতে পারেন, জয়িতা পুরস্কার পেতে পারেন, তাহলে আমি ও চেষ্টা করে যাব। কৃষিতে আমি ও অবশ্যই সফল হতে চাই” কথাগুলো বললেন বিরতি রাণী মিস্ত্রী। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ইশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধূমঘাট গ্রামের কৃষাণী বিরতি রানী (৩৬)। স্বামী গগন মিস্ত্রী (৪০) পেশায় একজন দিন মজুর। ৬ষ্ঠ শ্রেণী পড়–য়া এক মেয়ে ৩ জনের সংসার। জমিজমা বলতে ৩৩ শতক বসত ভিটা। স্বামী দিনমজুর ও কৃষি কাজ করেন। পিত্রালয়ে বিরতি রাণীর তেমন কোন কৃষি অভিজ্ঞতা ছিল না। বিয়ের পর স্বামীর সংসারে এসেও কৃষি কাজে তেমন কোন সক্রিয় ছিল না। স্বামীর সাথে কৃষি কাজে অল্প স্বল্প সহায়তা করতেন তিনি।
বিরতিহীন সংগ্রাম বিরতি রানীর (1)
বিরতি রাণীর বাড়ির পাশেই কৃষাণী অল্পনা রাণীর বাস। তিনি অল্পনা রাণীর সাফল্যে অনুপ্রাণীত হয়ে নিজেকে থেকে উদ্যোগ নেন স্থায়িত্বশীল কৃষি চর্চা করার। বিরতি রাণী অনুপ্রাণিত হয়ে কৃষিতে কঠোর মনোনিবেশ করেন। স্বামীকে সাথে নিয়ে এই কাজে নেমে পড়েন। তবে যখনই প্রয়োজন হয় তখন তিনি অল্পনা রাণীর পরামর্শ গ্রহণ করে বলে তিনি জানান। তিনি মৌসুমভিত্তিক কুশি, ঝিঙ্গা, তরুল, সীম, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, ঢেড়ষ, কামরাঙা ঢেড়ষ, বেগুন, ঝাল, পুঁইশাক, ডেমোশাক, টমেটো, পালংশাক, লালশাক, তরমুজ, ওল, হলুদ, কচুরমূখী, উচ্ছে, লাউ, কলমীশাক,মূলা, ওলকপি, বাঁধাকপি, বীটকপি, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ও ধান চাষাবাদ করেন। মৌসুমভিত্তিক ফসল চাষের জন্য তিনি প্রায় সব ধরনের বীজ নিজের কাছে সংরক্ষণ করে থাকেন পরবর্তীতে লাগানোর জন্য। তার বসতভিটায়, ফলজ বৃক্ষ হিসেবে আম, কলা, নারকেল, পেঁয়ারা, সবেদা, জামরুল, তাল, খেঁজুর, কদবেল, কুল, তেঁতুল, গবেদা, ডালিম, কাঁঠাল, পেঁপে বনজ বৃক্ষ হিসেবে নিম, রেইনট্রি, খদি, বাবলা, আকাশমনি মেহগনি প্রভৃতি লাগিয়েছেন।
বিরতিহীন সংগ্রাম বিরতি রানীর (2)
কৃষির পাশাপাশি বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করেন। নিজেদের পুকুরে তেলাপিয়া, টেংরা, নপুটি, শোল, পুটি, গদা, বাইন, তোড়া, মরুল্য, খয়রা, শিং, শোল, লাঠা, চ্যাং, পুঁটি, টেংরা, চিংড়ি, গলদা, আমলেট, কৈ, যুগতি চিংড়ি, কাঁকড়া, বেঁলে ও  জাপানিপুটি প্রভৃতি মাছ ধরে পারিবারিক আমিষের চাহিদা পুরণ ও সংরক্ষণ করেন। বিরতি রাণী বলেন, “আমি সবজি চাষে বেশিরভাগ জৈব সার ব্যবহার করেছি। ঘরের পাশে একটি গর্ত করেছি সেখানে বাড়ির ব্যবহৃত যাবতীয় ময়লা আবর্জনা, হাঁস, মুরগির বিষ্টা, তরকারির বাছনা, গর্তের মধ্যে পচিয়ে সার হিসেবে ব্যবহার করেছি। আমার বাড়িটিকে একটি প্রদর্শনী কৃষি খামার হিসেবে তৈরি করতে চাই।”

প্রাণবৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বিরতি রাণীর কৃষি বাড়ি কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চলের কৃষি ঐতিহ্য, অস্তিত্ব, সংস্কৃতি এবং স্থায়িত্বশীল জীবনযাত্রার দিকনির্দেশনার একটি গুরুত্বপূর্ণ মডেল। সরকারি/ বেসরকারী সমন্বিত উদ্যোগে প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বিরতি রাণীর এই জ্ঞান-দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি উপকূলীয় প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

happy wheels 2

Comments