কলমাকান্দাকে দূর্গত ‘উপজেলা’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে
Exif_JPEG_420

কলমাকান্দাকে দূর্গত ‘উপজেলা’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে

কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে অর্পণা ঘাগ্রা

Exif_JPEG_420

কৃষি বাচাঁও, কৃষক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও এই শ্লোগানকে সামনে রেখে কলমাকান্দা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকগণ উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে কলমাকান্দা উপজেলাকে দূর্গত উপজেলা ঘোষণার দাবিতে জানান। এই দাবিতে তাঁরা মানব বন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছেন উপজেলা কৃষি অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক এবং নেত্রকোনা-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এর কাছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশাপাশি তাদের দাবির প্রতি সংহতি জ্ঞাপনে পাশে ছিলেন ক্ষেত মজুর কৃষক সংগঠন, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, কৃষক ফোরাম ডিএসকে, বিশারা আশার আলো নারী সংগঠন, উদয় যুব সংগঠন, বেসরকারি সংস্থা ডিএসকে ও বারসিক। এই দাবিনামার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন প্রায় ১৫০০ জন কৃষক ও কৃষাণী।

Exif_JPEG_420

স্মারকলিপি হাতে পাওয়ার সাথে সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারলিপিটি পৌছানোর আশ্বাস প্রদান করেন। কৃষকদের এই দাবিকে সমর্থন করে ক্ষেতমজুর কৃষক সংগঠনের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “ফসল হানিতে আজ শুধুমাত্র কৃষক নয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত। সরকার বর্তমানে আমাদের এলাকায় যা সহযোগিতা করছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। তাই বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।” মেদিরকান্দা গ্রামের কৃষক বাবুল মিয়া (৪৫) বলেন, “ঋণ করে ফসল ফলাইছি। কোন ধান পাইলামনা। মাছ ধইরা সংসার চালাইতে চাইলাম কিন্তু মাছ ধরতে গেলেই বিল থেকে তাড়াইয়া দেয়, গালিগালাজ করে।” তিনি আরও বলেন, “খাল, বিল, নদীগুলো সব ইজারাদারদের লিজ নেওয়া। আমরা চাই খাল, বিল, নদীগুলা সরকার ইজারামুক্ত করুক। নইলে আমরা করমু কি? আমাগো চলার উপায় কি? বাচাঁর উপায় কি?” অন্যদিকে মুন্সিপুর গ্রামের কৃষাণী লাকি বেগম বলেন, “সরকার যে ১৫টাকা কেজি দরে চাল কেনার সুযোগ কইরা দিছে তা সব মানুষ কিনতে পারতাছে না। যার কার্ড নাই হেরা চাল কিনতেও পারেনা। আমি ৪দিন ধইরা চাল কিনার লাইগ্যা ঘুরতাছি। এখন পর্যন্ত চাল কিনাই অইলনা।”

Exif_JPEG_420

হাওরঞ্চলের বাঁধগুলো টিকানোর জন্য এখনও কৃষক দিন রাত স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে চলেছেন। বাঁধ রক্ষায় পাহাড়া দিয়ে চলেছেন। আজ ছোট কৃষক ও বড় কৃষক বলে নয়। প্রত্যেকেই একই সমস্যায় জর্জরিত ও ঐক্যবদ্ধ। কারণ ক্ষতির পরিমাণ একেক জনের ভিন্ন হলেও সমস্যার ধরন একই। প্রকৃতির সাথে পেরে ওঠা কঠিন জানা স্বত্বেও ফসল রক্ষার শেষ চেষ্টার ব্যাকুলতা সর্বক্ষণই তাড়া করে কৃষকদের। এই প্রসঙ্গে রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল হক বলেন, “ডাক্তাররা প্রতিদিনই কোন না কোন রোগী মারা যাওয়া দেখতে দেখতে কোন একটি পরিবারের মূমূর্ষূ রোগী মারা গেলে বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে করেন কিন্তু যে পরিবারের লোক মারা গেছে কেবলমাত্র ঐ পরিবারের লোকই গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারেন যে তাঁরা কি হারালো। আমাদের অবস্থাও এখন অনেকটা সেইরকমই। যেসব কৃষক ফসল হারিয়েছে কেবলমাত্র তারাই তাদের ক্ষতির পরিমাণ মাপতে পারছেন। ”

বিস্তীর্র্ণ জলরাশির নীচে ধান তলিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে অনিশ্চিত হয়ে পড়লো কৃষক পরিবারের চিকিৎসা, সন্তানদের লেখাপড়া,  বসতভিটে রক্ষার উদ্যোগ, দূর্যোগ মোকাবিলার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ, খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ, পারিবারিক উন্নয়নমূলক ভাবনা প্রভৃতি। সেই সাথে অঞ্চলভিত্তিক খাদ্য সার্বভৌমত্বও অনিশ্চিত হয়ে পড়লো। এরূপ পরিস্থিতিতে সরকার ও রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আকুল আবেদন অবিলম্বে যেন কলমাকান্দা উপজেলাকে দূর্গত উপজেলা ঘোষণা করে প্রয়োজণীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

happy wheels 2

Comments