সকল প্রাণির বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক উৎস চাই
সিঙ্গাইর, মানিকগঞ্জ থেকে রিনা আক্তার:
বৈচিত্র্যময় এই ধরণীতে প্রত্যেক মানুষের রুপে, গুণে, রুচি, অভ্যাস ও চিন্তায় রযেছে নানা ধরনের বৈচিত্র্য। বৈচিত্র্যময় চিন্তারই একটি গুরুত্বপুর্ণ অংশ হলো তার শখ। সাধারণত শখের একজন ব্যক্তির চিন্তার স্বাধীনতা ও তার ইচ্ছাশক্তি প্রকাশ পায়। শখের সাথে আশা প্রত্যাশা ও স্বপ্ন জরিত তাই এগুলো মানুষের জৈবিক ও আর্থিক চাহিদা খুব বেশি পূরণ না করলেও আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তি দিয়ে তাকে উজ্জিবিত রাখে, দীর্ঘায়ু করে, সমাজকে আলোকিত করে, অনুসরণ করার মত দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
সাধারণত বাগান বলতে আমরা এক খন্ড ভুমি যা ফুল, গাছপালা, লতাপাতা উৎপাদনসহ অন্যান্য উদ্ভিদ সংশ্লিষ্ট্য কর্মকান্ডের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত থাকাকেই বুঝি। ফুল ও ফল প্রাপ্তির লক্ষ্যে এতে প্রয়োজনীয় পানি সরবারহ নিস্কাশনসহ আগাছা উৎপাটন করা হয়ে থাকে। শখের বশবতী হয়েই মূলত বাগান তৈরি করা হয়। বাগান অনেক ধরনের হয়ে থাকে। বাড়ির পাশ্ববর্তী ভুমি, ভবনের ছাদ অথবা গ্রীণ হাউজের মাধ্যমেউ বাগান তৈরি করা যায়। জলজ বাগান পুকুর কিংবা সেতুর শোভাবর্ধনের জন্য তৈরী করা হয়। এতে মুলত শাপলাসহ জলজ উদ্ভিদের সংমিশ্রন ঘটে। বাড়ির বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন, চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কেও বাগান তৈরি করা হয়। সাধারণত এ ধরনের বাগান দেখাশুনার জন্য মালি বা উদ্যানরক্ষকের প্রয়োজন পরে। ব্যক্তিগত বাগান মূলত বিনোদন বা শখের নিমিত্তে করা হয় যা ব্যবসার জন্য নয়।
মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর পৌরসভার ঘোনাপড়া গ্রামে মণি ঋষিপাড়ায় দুরন্ত একজন কিশোর নাম শুভ দেব। পিতার নাম পঞ্চানান্দ দেব এবং মায়ের নাম উষা রাণী। শুভ দুই ভাই বোনের মধ্যে ছোট (১৪)। সে সিংগাইর জি. জি. মডেল হাই স্কুল এর অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
কিশোর শুভ দেব বলে, “ফুল আমার সবচেয়ে প্রিয়, ফুল দেখলে আমার অনেক ভাল লাগে। আমি আমার গ্রামের বাইরে যেখানেই যাই দেখি নতুন কোন ফুল গাছ দেখা যায় কিনা? ফুল গাছ নিয়ে আসলে আমার মা বলে বাড়িতে থাকার জায়গা নেই, বসার জায়গা নেই তুই কোথায় এগুলো রাখবি? আমাদের জন্য এই সব শখ সাজে না বাবা এগুলো ধনির দুলালদের কাজ। আমি মাকে বলি ধনি গরিব কারো গায়ে লিখা নেই এগুলো মানুষের তৈরি।” সে আরো বলে, “আমাদের জায়গা নেই আমরা বৈষম্যের স্বীকার হয়েছি। আমাদেরকে কষ্ট করে সঞ্চয় করতে হবে- তবেই কিছু অভাব মোকাবেলা করা যাবে। আমি রাস্তার ধারে মন্দিরের পাশে সুন্দর জায়গায় ফুল গাছ লাগাবো, পুকুর কিংবা ডোবায় শাপলা, পানাফুলসহ সৌন্দর্য্য বৃদ্বিকারী জলজ উদ্ভিদ থাকলে সেগুলো নষ্ট করবো না কাউকে করতে দেব না। তাহলে কেউ আমাকে বাধা দিতে পারবে না। কারণ ফুল গাছ কারো ক্ষতি করে না। আমি অনেক ফুল গাছ রোপন করেছি যেটি যত্নের অভাবে মারা গিয়েছে বিশেষ করে গোলাপ ফুলকে বাঁচিয়ে তোলা খুবই কঠিন কাজ।”
ইতেমধ্যে শুভ তার বাড়ির আঙ্গিনায় বেশ কিছু ফুল গাছ রোপন করেছে এবং পাশের ডোবাটিও সংরক্ষণ করছে। রোপনকৃত গাছের মধ্যে অন্যতম হলো গোলাপ ফুল গাছ। গোলাপ তার প্রিয় ফুল; সাথে আছে রজনিগন্ধা, রাস্তার পাশে আছে হাছনা হেনা। এগুলো প্রতিদিন সকাল সন্ধায় যে সুগন্ধি দেয়- সেটি শুভকে অনেক আনন্দ দেয় এবং চারপাশের সকলেই বিমোহিত থাকে ফুলের গন্ধে।
এ বিষয়ে উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসে যোগাযোগ করলে উপজেলা সহকারি যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “যুবকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণমুলক অনেক সেবা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম নার্সারি বা বাগান তৈরীর প্রশিক্ষণ। এগুলো করে সহজেই যুবকরা স্বাবলম্বী হতে পারবে। তবে বয়স নুন্যতম ১৮ বছর হতে হবে। শুভ দেবের বয়স ১৮ না হলেও তার বাগনে কোন কারিগরি সহযোগিতা লাগলে আমরা সেটি দেব।” এ বিষয়ে শুভ দেব বলে, “আমি বড় হয়ে আরো বড় বাগান করতে চাই। এটি আমার নেশা- তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে আরো বড় করে ফুল চাষ করতে চাই। আমি স্বপ্ন দেখি আমার চারপাশের পরিবেশে সুগন্ধে ভরে থাকবে। এখানে কোন দূষিত বায়ু থাকবে না। প্রকৃতি সবুজে ভরপুর থাকবে। সকল প্রাণি তার স্বাধীনতা ভোগ করবে। যেমন-মৌমাছির স্বাধীনতা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ। এটিকে আমরা কারো দ্বারা হনন করতে দেব না। মৌমাছির মত সকল প্রাণির বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক উৎস চাই।
শুভ দেবের এই শখে কোন কৃত্রিমতা ও বাণিজ্য নেই। এখনো সে ফুলের প্রেমের নেশায় পরেই কাজ গুলো করছে। আমরা চাই শুভ শুধু ফুলের নেশায় নয়; পাশাপাশি ভবিষ্যতে পেশার দিকেও ঝুঁকবে। কারণ দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারে জন্ম তার- তাকে লেখাপড়ার পাশাপাশি সামান্য আয়ের পথও খুলতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি সমাজে আরো শুব দেবের জন্ম হোক এবং তার এই আশা,শখ ও স্বপ্ন বেঁচে থাকুক নিরন্তর।