প্রাণবৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে কৃষাণীদের গাছ পানের চারা রোপণ
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী
কেন্দুয়া উপজেলা আশুজিয়া ইউনিয়নের অর্ন্তভূক্ত ভুগিয়া গ্রাম। এ গ্রামের দরিদ্র কৃষাণীরা মিলে গড়ে তোলে ‘ভূগিয়া কৃষাণী সংগঠন’। সংগঠনের মাধ্যমে এ গ্রামের কৃষাণীরা এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে বিগত চার বছর যাবত। সংগঠনের সকল সদস্য পারিবারিক আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি মৌসুমে বৈচিত্র্যময় সবজি চাষ করে থাকেন। তারা ৮ জাতের সীম নিয়ে সীমের জাত গবেষণা করছেন।
সংগঠনের সকল সদস্যরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারেন। এই উপলব্ধি থেকেই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, বজ্রপাত থেকে জানমাল রক্ষা, পারিবারিক আয়বৃদ্ধি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে সংগঠনের প্রত্যেক সদস্য নিজ নিজ বসতভিটায় ৪টি করে বৈচিত্র্যময় ফলের চারা রোপণ করেন। বিগত বছরের ন্যায় চলতি বছরেও তারা গ্রামের রাস্তায় তাল বীজ রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে (বিগত বছর এক কি.মি. রাস্তায় তাল বীজ রোপন করেছে)। চলতি আগস্ট মাসে সংগঠনের ২০ জন সদস্য বারসিক এর সহযোগিতায় প্রত্যেকে ২টি করে মোট ৪০টি গাছ পানের চারা (খাসিয়া পান) রোপণ করেছেন।
সকল ধরণের গাছেই গাছ পান চাষ করা যায় (আগ্রাসী প্রজাতি ব্যাতীত)। বিশেষভাবে আম, জাম, কাঁঠাল, নারকেল, সুপারি ইত্যাদি গাছে (রসালো গাছ) গাছ পান ভালো জন্মায়। সিলেটের খাসিয়া আদিবাসীদের অন্যতম পেশা হল গাছ পান চাষ। আর এ পান চাষের জন্য তারা জমিতে বৈচিত্র্যময় গাছ রোপণ ও সংরক্ষণ করে। খাসিয়দের মতে, জমিতে যতগুলো গাছ থাকবে ঠিক ততগুলো পান গাছও থাকবে। তাই খাসিয়াদের পান জুমে গাছের অনেক বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। একটি গাছ মারা গেলে সাথে সাথে তারা সেখানে পুনরায় চারা রোপণ করেন। এক একটি গাছ থেকে তারা প্রতিবছর পান বিক্রি করে অনেক আয় করে থাকেন। পানের পাশাপাশি সেসব গাছ থেকে অনেক ফলও পায়। একই জমিতে একই গাছে পান ও ফল চাষ হওয়ায় তাদের আয়ের পরিমাণও অনেক।
নেত্রকোনা অঞ্চলের সকল গ্রামেই অনেক গাছ লক্ষ্য করা যায়। মৌসুম ছাড়া সেসব গাছ থেকে কোন ফল পাওয়া যায় না। অথচ এসব গাছে সহজেই গাছ পান চাষ করা যায়। গাছ পান চাষ করলে পরিবারের পানের চাহিদা যেমন পূরণ হবে, তেমনি পান বিক্রি করে পরিবারগুলো আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব। আর পান চাষ করার জন্য বাড়ি বাড়ি বৈচিত্র্যময় গাছের চারা রোপণ বৃদ্ধি পাবে। ফলে পান চাষের মাধ্যমে জনগোষ্ঠীকে বৈচিত্র্যময় বৃক্ষ রোপণে উদ্বুদ্ধ করা যাবে। ভূগিয়া গ্রামের কৃষাণী সংগঠনের সদস্যরা তাই বসতভিটার সামান্য পতিত জমিতেও বৈচিত্র্যময় গাছের চারা রোপণ করছেন।