মানিকগঞ্জে ‘বৈচিত্র্য, আন্তঃনির্ভরশীলতা এবং বহুত্ববাদী সমাজ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
মানিকগঞ্জ থেকে মো. নজরুল ইসলাম
একজন উন্নয়নকর্মীকে প্রতিনিয়তই কাজের মধ্যে দিয়ে তাকে ঝালাই করতে হয়, শান দিতে হয়, পরীক্ষা দিতে হয়। এই সকল কাজে নিজেকে সমৃদ্ধ করার জন্য অন্যতম মাধ্যম হলো প্রশিক্ষণ কর্মশালা। মাঠ পর্যায়ে শুধু কাজের জন্যই নয় নিজের চেতনা ও সামাজিক দায়বদ্ধতাকে আরো বেগবান করার জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা অপরিহার্য। গত ৯-১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান বারসিক এর আয়োজনে মানিকগঞ্জ স্যাক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘বৈচিত্র্য, আন্তঃনির্ভরশীলতা এবং বহুত্ববাদী সমাজ’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সহায়ক পাভেল পার্থ উপরোক্ত কথা বলেন।
৩ দিনব্যাপি এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সুচনা বক্তব্য রাখেন বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারি বিমল রায়। পারস্পরিক পরিচিতি, প্রশিক্ষণের প্রত্যাশা নিরুপণ, নীতিমালা, উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি উপস্থাপন করেন বারসিক সমন্বয়কারি ও প্রাণ-প্রকৃতি ও প্রতিবেশীয় গবেষক পাভেল পার্থ, সহ-সহায়কের ভূমিকা পালন করেন বারসিক সমন্বয়কারি ও গবেষক জাহাঙ্গীর আলম। অংশগ্রহণকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারসিক মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মী, কর্মএলাকার উদ্যমী যুব প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিবৃন্দ।
প্রশিক্ষণের শুরুতেই ভিন্ন কায়দায় নিজের খাতায় আত্মসমালোচনামূলক ভালো দিক ও উন্নয়নগত দিক লিখা ও বলার মাধ্যমে সকলেই জানতে পারেন। প্রধান সহায়ক পাভেল পার্থ অংশগ্রহণকারিদের মাঝে তার নিজস্ব কায়দা ভঙ্গিতে গ্রুপ ওয়ার্ক, মোকাভিনয়, ফাইল অনুশীলন এর মাধ্যমে সমাজবদ্ধতা কেন প্রয়োজন, মানব সমাজের বিকাশ সম্পকিীত ধারণায়ন, সমাজে ঐক্য ও দ্বন্দ্বের স্বরূপ ব্যাখা করেন। মানুষের সাথে গাছপালা, পশুপাখি এবং প্রাণহীন পরিপাশ্বের সাথে পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করেন। বৈচিত্র্য কেন দরকার, বৈচিত্র্যের ধরণ ও বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্য সম্পর্কিত ধারণায়ন সম্পর্কে আলোচনা করেন। এছাড়া প্রশিক্ষণে তিনি আন্তঃনির্ভরশীলতা কেন দরকার, আন্তঃনির্ভরশীলতার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত গুরুত্ব এবং তার তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। অন্যদিকে বহুত্ববাদী সমাজ বলতে কি বুঝায়, বহুত্ববাদ কেন জরুরি, আমরা কিভাবে বহুত্ববাদী সমাজ তৈরিতে অবদান রাখতে পারি সেই বিষয়েও সহায়ক পাভেল পার্থ ধারণা দেন এই তিনদিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায়।
সমাপনী দিনে মাঠ পর্যায়ে আমরা কিভাবে বহুত্ববাদি সমাজের ধারণা দিতে পারি সে লক্ষ্যে অংশগ্রহণকারীদের দু’টি দলে বিভক্ত হয়ে নাটকের মাধ্যমে তারা অভিনয় করেন। বহুত্ববাদী ও আন্তঃনির্ভরশীলতা ধারণা দেওয়ার জন্য অংশগ্রহণকারীরা কেউ কৃষক, কৃষাণী, জেলে, কেঁচো, পরাঙ্গী ধান মৌমাছি, কীটপতঙ্গ, সার বিষের দোকানদার, ইউপি, কেউ ইউএনওসহ বিভিন্ন চরিত্র অভিনয় করে দেখান। প্রতীকি এই অভিনয়ে তারা মনে করেন সমাজে সকলের অবদান স্বীকার করতে হবে, শ্রদ্ধা করতে হবে, যু্িক্ত দিয়ে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে সকল প্রকার অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে এবং এভাবে সমাজে পারস্পরিক মঙ্গলজনক সহঅবস্থান তৈরি করতে হবে যার ফলশ্রুতিতে বহুত্ববাদী সমাজ বিনির্মাণের পথ আরো বেগবান হবে।