কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিজ পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রদানের উদ্যোগ নিন
রাজশাহী থেকে ব্রজেন্দ্র নাথ
রাজশাহী জেলার পবা উপজেলাকে প্রধান সবজি উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে বলা হয়। রাজশাহী শহরের বেশির ভাগ সবজির জোগান দিয়ে থাকে পবা উপজেলার কৃষাণ কৃষাণীরা। হরেক রকমের সবজি যেমন-কুমড়া, করলা,মূলা, বরবটি, পেঁপে, তরই, চিচিঙ্গা,ঢেড়শ, লাউ, পটল, মরিচ, পুঁই ইত্যাদি সবজির চাষ হয় পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নে। তাই রাজশাহী শহরকে বারোমাস ধরে সবজির চাহিদা পূরণ করতে চাইলে এবং পাশাপাশি নিজ এলাকার মানুষকে সবজির চাহিদা পূরণ করতে চাইলে সর্বপ্রথম বড়গাছি ইউনিয়নের সবজি চাষী কৃষকদেরকে টিকিয়ে রাখতে হবে।
এই এলাকার কৃষক মো. আ. রহমান(৫০) বলেন, ‘আমাদের এই বড়গাছি ইউনিয়নে প্রায় ২০০ বিঘা বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে। এই বছর আমি ২ বিঘা জমিতে করলা চাষ করেছি। আর সেই জমিতে করলা চাষ করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ প্রায় দশ হাজার টাকা। অথচ ওই জমি থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র দুই হাজার ৪শ’ টাকার করলা বিক্রি করতে পেরেছি।’ এই এলাকার কৃষকেরা সবজি বিক্রি করতে গেলে তা নায্য মূল্য পাচ্ছেন না বলে তিনি জানান। বড়গাছি বাজারে করলা বিক্রি হয় ৩শ’ ২০ টাকা মণ। এছাড়া অনেক কৃষককেই বাজারে শেষ পর্যায়ে ২৫০-৩০০ টাকা দরে এক ঢাকি (১ ঢাকি ৬০ কেজির সমান) করলা বিক্রি করেছেন। তাই কৃষকেরা সবজি চাষ করে লাভবান তো হতেই পারছেন না উল্টো লোকসান গুণতে হচ্ছে।
অন্যদিকে মাধবপুর গ্রামের কৃষক মো. অহির উদ্দিন (৪৭) বলেন, ‘আমি এই বছর সবজি চাষ করার জন্য ৪ বিঘা জমি টেন্ডার নিয়েছি ৫২ হাজার টাকায়। সেই জমি গুলোতে করলা, পটল, মরিচ চাষ করেছি। এই ৪ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করতে গিয়ে লেবার, জমি চাষ, পানি, সার ও কীটনাশক বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার টাকা। তবে এই পযর্ন্ত সেই ৪ বিঘা জমি থেকে আয় হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা।’ তবে তিনি জানান, তাঁর মরিচের গাছগুলো রোগে মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে সবজি বিক্রি করতে গেলে দাম পাওয়া যাচ্ছেনা। তিনি মনে করেন, বড়গাছি ইউনিয়নের সকল সবজি চাষীরা যদি তাদের পণ্য ট্রাকে করে ঢাকার বাজারে দিতে পারেন তাহলে কিছুটা হলেও পণ্যের ন্যায্য মূল্য পেতেন।
বড়গাছি গ্রামের মো. হায়াত আলী (৩৫) বলেন, ‘এই বছর তবে সবজির চাষ গত বছরের চেয়ে একটু কম। কারণ দিন দিন জমির টেন্ডারের মূল্য খুব বেশি। তাই অনেক গরিব মানুষ জমি টেন্ডার নিতে পারছেন না। আমার এই বছর টেন্ডার নেওয়া ১৫ কাঠা জমিতে পটল আছে।’ শুধু পটল চাষ বাবদ সে জমিটি তিনি টেন্ডার বাবদ দশ হাজার টাকা দিয়ে নিয়েছেন। জমি চাষ, মাচা তৈরি আগাছা পরিষ্কার শ্রমিক ও সার কীটনাশক বাবদ খরচ বারো হাজার টাকা খরচ করেছেন। তিনি মনে করেন, সবজি বিক্রি করে তিনি তাঁর খরচ উঠাতে পারবেন না সবজির মূল্য কম হওয়ার কারণে। তিনি আরও বলেন, ‘আজকের বড়গাছি বাজারে কয়েকজন কৃষক তার জমি থেকে নিয়ে আসা করলাগুলো বাড়িতে ফেরত না নিয়ে গিয়ে বড়গাছি স্কুল মাঠে ফেলে দিয়ে চলে গেছেন। কিছু কিছু সবজি চাষী তাদের জমি থেকে সবজির গাছগুলো কেটে ফেলছেন।’ একই কথা জানান মাধবপুর গ্রামের সবজি চাষী মো. জান মোহর। বড়গাছি বাজারে করলা বিক্রি করতে এসে তিনি বলেন, ‘এতো টাকা খরচ করে জমিতে সবজি ফলাই কিন্তু বাজারে এলে মনটা খারাপ হয়া যায়, উৎপাদন মূল্যই পাচ্ছিনা, লাভ তো দুরে থাক।’
প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণে আবার শহরের বাজারগুলোতে দেখা যায়, সবজির দাম সবসময় চড়া। বেশি দামে সবজি কিনে খেতে হচ্ছে ভোক্তাদের। কৃষক উৎপাদন করে কোন লাভ পাচ্ছে না, কিন্তু লাভের অংশ ঘরে তুলছেন মধ্যস্বত্তভোগী ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেটের কারণে সবজি চাষীরা প্রতারিত হচ্ছেন। এভাবে দিনে দিনে তারা ঋণের জালে আটকে যাচ্ছেন। তাই কৃষককে বাঁচানোর জন্য তাদেরে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রদানে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।