জানতে পারলেই সচেতন হবো
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
মানুষের সাথে সম্পর্কের জাল তৈরি করে বারসিক। সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখে বারসিক। যে স্বপ্নে বহু ধরণ, বহুজন এবং বহু জীবিকার মানুষ থাকবে। আর তাই বারসিক’র স্বপ্নের সঙ্গী লক্ষ্মীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক গত ২৫ সেপ্টেম্বর বারসিক’র রামেশ্বরপুর রিসোর্স সেন্টার পরিদর্শন করেছেন।
বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠন বারসিক দীর্ঘদিন ধরে নেত্রকোনা অঞ্চলে জননেতৃত্বে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে গতিশীল ও শক্তিশালীকরণে সহায়কের ভূমিকা পালন করে আসছে। এক্ষেত্রে জনগণের নিজস্ব সম্পদকে কাজে লাগিয়ে, পরিকল্পিত উপায়ে সকলকে সম্পৃক্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, উদ্বুদ্ধকরণ ও বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে। জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে স্থানীয় সম্পদ, নিজেদের সক্ষমতা ও পারষ্পারিক সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করে আসছে। পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে উঠে আসা পরিকল্পনা, তাঁদের নিজস্ব কর্মপদ্ধতি প্রয়োগ করে কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সহায়তা দানের এই প্রক্রিয়াটি শুধু গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তা ছড়িয়ে গেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাঝেও। এই কাজেরই ধারাবাহিকতায় বারসিক’র কর্মপ্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে অত্র এলাকার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বারসিক’র সহযোগিতায় ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ‘মগড়া নদী উৎসব’ এর মাধ্যমে যুক্ত হয় লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়নে অবস্থিত লক্ষীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়টি। এরপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকগণ বারসিক’র বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে আসছে।
বারসিক’র নির্দিষ্ট কর্মসূচি যেমন বক্তৃতামালা, প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য কার্যক্রমেও প্রতিষ্ঠানটি বারসিকের সহযোগি হিসেবে কাজ করে আসছে। এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করে। তাদের চাহিদা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী জ্বালানি সাশ্রয় ও পরিবেশ রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, স্থানীয় সম্পদ ও এর ব্যবহার, নেত্রকোনার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সমসাময়িক বিষয়বস্তুসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। তাছাড়া পরিবেশ উন্নয়নে সচেতনতা তৈরিতে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ঔষধি ও ফলজ বৃক্ষরোপণ, পরিবেশসম্মত চর্চায় অভ্যস্ত করতে ডাম্পার (ময়লা ফেলার ঝুড়ি) প্রদান, সচেতনতামূলক বাণী সমৃদ্ধ ফেস্টুন ইত্যাদি প্রদান করে সহযোগিতা করা হয়েছে।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ট্রি-অলিম্পিয়াডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি এই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেন। এছাড়া বারসিক’র বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষকগণ তাঁদের মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেন, যার মাধ্যমে বারসিক সামনে এগিয়ে চলার স্বপ্ন দেখে।
এ সমস্ত আয়োজনে অংশগ্রহণের ফলে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। যে কারণে শিক্ষকদের মাঝে বারসিক রামেশ্বরপুর রিসোর্স সেন্টার পরিদর্শন করে অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগ্রহ জন্মায়।
এর ফলশ্রুতি হিসেবে গত ২৫ সেপ্টেম্ব লক্ষ্মীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ দুজন শিক্ষক রামেশ্বরপুর রিসোর্স সেন্টার পরিদর্শন করেন। এসময় তাঁদের সাথে বারসিক’র সমস্ত কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন সমন্বয়কারী সৈয়দ আলী বিশ্বাস এবং নেত্রকোনা অঞ্চলের এলাকা সমন্বয়কারী মো. অহিদুর রহমান।
শিক্ষকগণ ভবিষ্যতে বারসিক’র সাথে তাঁদের কার্যক্রম চলমান রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন,“শিক্ষার্থীরা আমাদের সম্পদ। প্রাকৃতিক ও সামাজিক সম্পদের পরিচিতি, এ সবের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্পর্কে যদি সঠিক তথ্য জানতে পারে তবেই তারা সচেতন হবে। কারণ তাদের মাধ্যমেই এক সময় আমাদের দেশ পরিচালিত হবে। সঠিক নির্দেশনা পেলে তারা সঠিক মানুষ হবে এবং এগিয়ে যাবে।”
রিসোর্স সেন্টার পরিদর্শন শেষে তাঁরা বিদ্যালয়ের আঙিনায় রোপণের জন্য রিসোর্স সেন্টার প্রাঙ্গণে রোপণকৃত প্রায় ২৫ ধরণের ঔষধি গাছ সংগ্রহ করেন।