নবান্ন উৎসবে মাতলো বাংলার জনগোষ্ঠী
নেত্রকোনা থেকে শংকর ম্রং
নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার সিংহের বাংলা ইউনিয়নের আদি নাট্য গোষ্ঠী ও গ্রামের সাধারণ জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে বাংলা গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো বাঙালির ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নবান্ন উৎসব। গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ, শিশু, প্রবীণ, কিশোর-কিশোরী, যুব ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে গত ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনায় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
বর্তমান সময়ে গ্রামের সকল কৃষক খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের চাষকৃত আমন ২০১৮ মৌসুমের ধান ঘরে তোলার কাজে। গ্রামের নারীরা ব্যস্ত উঠান পরিষ্কার পরিছন্ন করে গোবরমাটি দিয়ে লিপে ধান মাড়াই ও শুকানোর উপযোগি করতে। গ্রামের কম বেশি প্রায় সকল পরিবারই কিছু কিছু করে ধান ইতিমধ্যে ঘরে তুলেছে। সেই ধান থেকে চাল করে ও চালের গুড়া কুটে গ্রামের কৃষক-কৃষাণীরা আয়োজন করেছে নবান্ন উৎসবের।
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা, নারী, শিশু ও প্রবীণ নারীদের জন্য গ্রামীণ বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা প্রতিযোগিতা, বৈচিত্র্যময় পিঠা প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিশুদের জন্য আয়োজন করা হয় নৃত্য প্রতিযোগিতা, নারীদের জন্য সুইয়ে সূতা ভরা, চাচা আপন প্রাণ বাঁচা/বেলুন ফোটানো এবং প্রবীণ নারীদের জন্য বিস্কুট দৌড় প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী, নারী, শিশু, কিশোরী ও প্রবীণ নারীরা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন, যা তাদেরকে এবং উপস্থিত সকলকে বিনোদন দেয়। অনুষ্ঠান শেষে আদি নাট্য গোষ্ঠীর শিল্পীরা আধুনিক গান ও বাউল শিল্পীরা বাউল গান পরিবেশনার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের বিমোহিত করে তোলে।
দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বারসিক’র শংকর ম্রং, খাদিজা আক্তার লিটা, আদি নাট্য গোষ্ঠীর সভাপতি বাবুল মিয়া, সাধারণ সম্পাদক রনি, তাসলিমা আক্তার, বাউল সাদিক চিস্তি প্রমূখ। আলোচনার ফলে উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা বাঙালির ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সংস্কৃতিতে নবান্ন উৎসব এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
গ্রামীণ উৎসবের ফলে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বয়সের, পেশার, শ্রেণীর ও বিশ্বাসের জনগোষ্ঠী একত্রিত হয়েছেন এবং পরস্পর পরস্পরের সাথে বিভিন্ন বিষয় সহভাগিতা করার সুযোগ পেয়েছেন। এর ফলে পরস্পরের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে এবং আন্তঃনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন জাতের ধানের স্বাদ, গন্ধ, বৈচিত্র্যময় খাদ্য তৈরীতে বৈচিত্র্যময় ধানের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। গ্রামের জনগোষ্ঠী বিশেষভাবে বর্তমান প্রজন্ম গ্রাম পর্যায়ে নবান্ন উৎসব করতে পেরে খুবই আনন্দ প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠান শেষে নৃত্য এবং খেলাধুলা ও পিঠা তৈরি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।